মেস-জীবন ও সুখী সংসার

বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং প্রজেক্টে আমার প্রথম চাকরি। বেতন খুব কম। তবে সেটা কাজের আগ্রহে কোনো বাধা হয় না। প্রতিদিন ১২–১৩ ঘণ্টা অফিস করি। নিজের কাজতো করিই অন্যের কাজও আগ্রহের সঙ্গে করি...করতে ভালো লাগে। এত কাজের পুরস্কারও মিলল খুব তাড়াতাড়ি। এক সকালে অফিসে গিয়েই সাদা খামে চিঠি পেলাম। আমাকে কুমিল্লা পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। একা একা কীই–বা কাজ করব আর কীই–বা শিখব। প্রজেক্ট ম্যানেজারের কাছে গেলাম। ‘ম্যানেজমেন্ট তোমার কাজে খুব খুশি। এখন যাও। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার তোমাকে হেড অফিসে নিয়ে আসব।’ ম্যানেজার আশ্বাস দিলেন।
কুমিল্লা গেলাম। সহকর্মী করিতকর্মা। সবকিছু গুছিয়ে রেখেছিলেন। বুঝে নিতে ঘণ্টা দু-এক লাগল। ‘স্যার আপনার থাকার জায়গাও ঠিক করে রাখতে বলেছেন। সাত আট মিনিটের হাঁটার পথ। চলেন যাই। এত দিন আমি ছিলাম, আজ থেকে আপনি থাকবেন।’ সহকর্মী বলেন।
এভাবেই শুরু জীবনের প্রথম ও একমাত্র মেস জীবন। আসলে ঠিক মেস না। বড় এক রুমের বাসা। তিনজনের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। সকালে আর রাতের খাবার মেসে হয়। রুমে রান্নার কোনো ব্যবস্থা নাই। বাড়িওয়ালাই টাকার বিনিময়ে সকালে ও রাতে খাবার দিয়ে যান।
সহকর্মী বিকেলের ট্রেনেই ঢাকা ফিরে গেলেন। ডিসেম্বর মাস। সন্ধ্যার পরেই ঝুপ করে শীত নেমে এল। তাড়াতাড়ি মেসে ফিরলাম। ঘণ্টাখানেক পরে রুমমেট দুজন একসঙ্গে ফিরল। প্রাথমিক পরিচয় হলো। শাহেদ আর জহির ভাই। দুজনেই ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। দুজনেই মধ্যবয়স্ক। আমার ভাষায় বুড়াসন্ধিকাল পার করছেন। তবে মিল বলতে এতটুকুই। শাহেদ ভাই যেমন প্রাণবন্ত, প্রচুর কথা বলা মানুষ, জহির ভাই ঠিক তার বিপরীত। তিনজন একসঙ্গে খেলাম। রুমে বড় একটা ফ্লাক্সে চা থাকে। একসঙ্গে চাও চলল। তারপর আমি বই হাতে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। শাহেদ আর জহির ভাই বারান্দায় বসে চা-সিগারেটসহ গল্প করতে লাগলেন।
পরদিন সকালে মনে রাখার মতো এক দৃশ্য দেখলাম। জহির ভাইয়ের দাঁত ব্রাশ করার দৃশ্য। উনি ব্রাশসহ হাতটা স্থির রাখেন আর ঘাড় মাথা এত জোরে নাড়াতে থাকেন যে ভয় হয় ঘাড় থেকে মাথাটা না খুলে পরে যায়। সত্যিই অদ্ভুত। রেলস্টেশনে গিয়ে প্রথমে স্টেশন মাস্টার পরে হেড বুকিং ক্লার্ক বড় বাবুর সঙ্গে দেখা করলাম। আমার কাজ মূলত বড় বাবু আর তার অধীনস্থদের সঙ্গে। বড় বাবু প্রায় বৃদ্ধ লোক। তবে বৃদ্ধ হলেও হাসিখুশি। ‘আপনার যা লাগবে হামিদকে বলবেন। খুব চালাক ছেলে।’ বড় বাবু বলেন। হামিদের সঙ্গেও দেখা হয় একটু পরে। নিজে থেকেই প্রশ্ন করে আমাদের সফটওয়্যারের দুই–তিনটা ফাংশন জেনে নিল। বেশ ভালো লাগল।
বুকিং অফিসের সঙ্গেই সার্ভার রুম। লগইন করে কিছু কাজ করলাম। চট্টগ্রামের আন্তনগর ট্রেন কয়েক ঘণ্টা পরে আসবে। স্টেশনে লোক সমাগম বাড়তে লাগল।
ভাই চিটাগংয়ের চারটা শোভন টিকিট দেন। এক যাত্রী হামিদকে বলেন।
টিকিট নাই। স্ট্যান্ডিং টিকিট চাইলে দিতে পারি। হামিদ নির্বিকারভাবে বলে। আমি দ্রুত একবার চেক করি। ৫৭টা সিট এখনো খালি। কিন্তু অফিসের কড়া নির্দেশ এসব ব্যাপারে না জড়াতে।
কি বলেন ভাই। এত তাড়াতাড়ি টিকিট শেষ হয়ে গেল।
জানতাম বিশ্বাস করবেন না। এই দেখেন কম্পিউটার। কম্পিউটারতো আর মিথ্যা বলে না। বলেই হামিদ মনিটরটা একটু ঘুরিয়ে দেয়। আসলেও শূন্য আসন দেখা যায় সেখানে। কারণ ওই বগির সব আসন ঢাকা থেকেই বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু পাশের বগিটায় প্রায় খালি।
ভাই একটু চেষ্টা করেন না। খুশি কইরা দিমুনে।
ধুরো আপনারা বোঝেন না। এখন কম্পিউটার বসছে। আগের দিন কী আর আছে। তাও দেখি চেষ্টা করে। হামিদ খুব বিরক্ত হওয়ার ভান করে।
১০০ টাকা লাগবে প্রতি টিকিটে (আসল দাম ৭৫ টাকা)।
ঠিক আছে, তাই দেন।
দিনকাল খুব খারাপ। আপনাদের যে একটু সেবা করব সেই উপায় নাই। টিকিট ছাপা হতে হতে হামিদ আন্তরিকভাবে বলে যাত্রীকে। যাত্রী খুশি হয়ে আরও দশ টাকা বেশি দিয়ে যায় হামিদকে। একটু পরেই হামিদের শিফট শেষ হয়। আরেক বুকিং ক্লার্ক রেজাউল আসে।
চিটাগংয়ের দুইটা টিকিট দেন। এক যাত্রী রেজাউলকে বলেন।
টিকিটতো মনে হয় শেষ। দেখি একটু। রেজাউল বলে।
টিকিট আসলেই শেষ। অনেকক্ষণ পরে মিনমিন করে বলে রেজাউল।

ফাইজলামি পাইছেন। সপ্তাহে দুইবার চিটাগং যাই আমি। ট্রেনের টিকিট কখন শেষ হয় ভালোই জানি। ৮০ টাকা দেব প্রতি টিকিটে। টিকিট দেন। ক্ষিপ্তভাবে বলেন যাত্রী। রেজাউল চুপচাপ টিকিট প্রিন্ট করতে থাকে।
এই নেন ১৬০ টাকা। আপনাগো চুরি কম্পিউটার কেনো কম্পিউটারের বাপ বসাইলেও ঠেকাইতে পারব না। ক্ষিপ্ত যাত্রী গজগজ করতে করতে চলে যান। মনে মনে ভাবি সাহস করে ডাকাতি করলেও সমস্যা নাই। ভিতু–ছিঁচকা চোরদেরই যত সমস্যা। এই জন্যই মনে হয় সিঁধেল চোর মার খায় আর ঋণখেলাপি-ব্যাংক চোর মন্ত্রী হয়।
সপ্তাহখানেকের বেশি পার হয়। মেসে বয়সের অনেক পার্থক্য সত্ত্বেও শাহেদ আর জহির ভাইয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। শাহেদ ভাই সব সময় গল্প কৌতুক বলে জমিয়ে রাখেন। যদিও অধিকাংশ কৌতুকই আদি-রসাত্মক। শাহেদ ভাইয়ের আরেকটা প্রিয় কাজ সর্বদা জহির ভাইয়ের পিছে লেগে থাকা।
বুঝলা টিটু জহির গত তিন দিন টয়লেটে যায় না।
কেন? আমি জিজ্ঞেস করি।
আরে টয়লেটে গেলে যদি বেশি খিদা লাগে। তাহলেতো বেশি খেতে হবে। শাহেদ ভাইয়ের উত্তর শুনে আমি হাসি। জহির ভাইও হাসেন। কথাটা কিছুটা সত্যিও। হিসাবি আর কঞ্জুসের সীমারেখাতে জহির ভাইয়ের অবস্থান। রাতের খাবারের পরে তিনজন বারান্দায় বসি। একটু দুরে এক ঝোপে কিছু জোনাকি পোকা দেখা যায়। খুব সুন্দর লাগে। কাছে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। শহুরে আদিখ্যেতা হয়ে যাবে ভেবে যাই না। একটা জোনাকির আলো একটু উজ্জ্বল মনে হয়। জোনাকিদেরও কী রাজা–রানি আছে। রাজা–রানির আলো বেশি উজ্জ্বল…
টিটু মিয়া বিয়া করবা কবে? শাহেদ ভাইয়ের কথায় চিন্তার জাল ছিঁড়ে যায়।
কী যে বলেন আমার বিয়ের বয়স হইছে নাকি। উত্তর দিই।
কী যে কও মিয়া। তোমার বয়সে আমি এক পোলার বাপ। প্রথম বিয়ে করছি আরও আগেই।
প্রথম বিয়ে মানে।
আমার তিন বউ। নির্বিকারভাবে বলেন শাহেদ ভাই। একটু হোঁচট খাই।
তিন বউ নিয়াই আমার সুখের সংসার। কোনো ক্যাচাল নাই। জহিররে জিজ্ঞাসা কর। জহির ভাইও দেখি মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
আমার বুদ্ধি যদি শোনো বিয়া করবা ৮-১০ বছরের ছোট মেয়েকে।
কেন?
এ তোমাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করব …মানব। ৩-৪ বছরের ছোট মেয়ে খালি চ্যাটাং চ্যাটাং করব। আবার ১০-১২ বছরের বেশি ছোট মেয়েও চ্যাটাং চ্যাটাং করব…বয়সের তেজ দেখাইব।
এত কিছু থাকতে বয়স...সুখের সংসারের জন্য...।
যা কইলাম অভিজ্ঞতা থেকেই কইলাম।
এভাবেই দিন কেটে যায়। বিকেলে কোনো আন্তনগর ট্রেন নাই। তাই মেসে ফিরে হুমায়ূন–সুনীল পড়ি। শীতের বিকেল। শুরু না হতেই শেষ। সন্ধ্যার একটু আগেই আবার বের হই। কান্দিরপাড়, মনোহরপুর যাই। কারণ মাতৃভান্ডার, শীতলভান্ডারের মিষ্টি। এ রকম এক গোধূলিবেলায় মেস থেকে বের হয়েই থমকে যাই। মেসের সামনেই একটু খোলামতো জায়গা। সেখানে ৭-৮ বছরের এক ছেলে গম্ভীর মুখে হাঁটছে। বিভিন্ন গল্প উপন্যাসে দেব শিশুর যে বর্ণনা পড়েছি এই শিশুকে সেরকম লাগে। উজ্জ্বল ফরসা মুখ, পাতলা ঠোঁট, পরিষ্কার উজ্জ্বল চোখ, এক মাথা কোঁকড়ানো চুল, গোধূলির আলোয় কী যে সুন্দর লাগে। কি নাম তোমার? একটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করি। ভ্রু কুচকে তাকায় দেবশিশু। এই তাকানোটাও কী সুন্দর। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। বয়সের তুলনায় অসম্ভব গম্ভীর ছেলেটা। ওই দিন চলে যাই। পরের দিন বিকেলে আবার দেখি ছেলেটাকে। রুমে ব্যাডমিন্টনের কয়েকটা র্যাকেট দেখেছি এর মাঝে। ছোটদের একটা র্যাকেটও আছে। ফেদারও আছে। দুইটা র্যাকেট আর ফেদার নিয়ে এসে বললাম, খেলবে আমার সাথে। ঘাড় কাত করে হেসে ফেলে দেবশিশু। হাসতেই দেখি সামনের দুইটা দাঁত পড়ে গেছে। এত সুন্দর লাগে হাসিটা। আমি নিশ্চিত এই ছেলের পায়ের নিচে কাজলের কালো ফোঁটা আছে। এত রূপবান ছেলে-কাজলের ফোঁটা না দিয়ে উপায়ই বা কী। একটু সময় খেললাম। খুব অল্প কথায় জানলাম জানলাম নাম শিপলু। পাশের সুন্দর দোতলা বাসাটায় থাকে। রাতে শাহেদ ভাই বলল, ওর বাবা হোসেন সাহেব বেশ বড় ব্যবসায়ী এখানে।
সপ্তাহ চারেক পার হয়ে যায়। বিরক্তি আর একঘেয়েমি শুরু হয়ে যায়। প্রতিদিন ঢাকার অফিসে ফোন করি। ম্যানেজার প্রতিদিন একই কথা বলেন...আর কয়েকটা দিন থাক। ব্যবস্থা করছি। বিকেলে মাঝে মাঝে শিপলুর সঙ্গে খেলি। একদিন শিপলুর ছোট বোনও আসে। সুন্দর তবে ভাইয়ের মতো অতটা না। ভাইয়ের মতোই খুব গম্ভীর। ওই দিন রাতেই শিপলুর বাবা হোসেন সাহেব আসেন মেসে।
আসেন আসেন হোসেন ভাই। কি মনে করে আপনার মতো মানুষ এখানে। শাহেদ ভাই আন্তরিকভাবে বলেন।
আজকে একটু সময় পেলাম। ভাবলাম আপনাদের সঙ্গে একটু তাস খেলি। হোসেন সাহেব বলেন। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় শাহেদ ভাই। সুদর্শন মানুষ, কোথায় যেন নায়ক ফারুকের সঙ্গে একটু মিল আছে। ব্রিজ খেলা আর গল্প চলতে থাকে। হোসেন সাহেব আমার পার্টনার। হোসেন সাহেব খুব ভালো কার্ড পেতে থাকেন।
আপনার কপাল এত ভালো হোসেন ভাই। এ রকম কপাইল্লা লোকের সঙ্গে পারব কীভাবে। শাহেদ ভাই বলেন।
হুমম। আমার সুখের সংসারটাও কপালের জোরে। হোসেন সাহেব বলেন। এরপরে আরও দুই–তিনবার একটু অপ্রাসঙ্গিক ভাবে হোসেন সাহেব তার সুখের সংসারের গল্প করেন। কেন জানি শুনতে ভালোই লাগে।
এর পরের দিন। সার্ভারে বসে কিছু কাজ করছি। বড় বাবু আসলেন, সঙ্গে হামিদ।
সারা দিন কি এই যন্ত্র নিয়া পইড়া থাকেন। হামিদ বলে।
এখানে এটাইতো আমার কাজ। উত্তর দিই।
রাখেন কাজ। যুবক বয়সে একটু আমোদ–ফুর্তি করতে হয়। যাত্রা দেখছেন কখনো? ভেরাইটি শো?
না।
আরে আপনারতো পুরা ব্যর্থ জীবন। রাত আটটা পর্যন্ত তো স্টেশনেই থাকেন। আজকে আপনারে আর বড় বাবুরে নিয়া যামুনে।
দেখছেন, হামিদ আমার সুখের সংসারে ঝামেলা বাধাইতে চায়। তয় বলতাছে যখন যামুনে। এ্যাই হামিদ গতবারের সেই ড্যান্সার মাইয়াটা আসছেতো? বড় বাবু হাসতে হাসতে বলে চলে যান।
সন্ধ্যার সময় স্টেশনে গিয়ে দেখি বিদ্যুৎ নাই। ইউপিএসও কোনো কারণে কাজ করে নাই। বিরাট ঝামেলায় পড়লাম। আধা ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ এল। সার্ভার অন করে দেখি কিছু জিনিস কাজ করছে না। মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে লাগলাম। রাত আটটার দিকে বড় বাবু আর হামিদ আসল। কিন্তু আমার অবস্থা দেখে কিছু বলতে সাহস করল না। আমার ব্যর্থ জীবন দীর্ঘায়িত হলো। সবকিছু ঠিক করে রাত দশটার দিকে মেসে ফিরলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শাহেদ আর জহির ভাই এলেন। জহির ভাইকে খুব বিমর্ষ লাগছে।
মন খারাপ কেন জহির ভাই। আমি জিজ্ঞেস করি।
আর বইল না। কান্দিরপাড়ে এক ফ্রড পোলা আইয়া কইল মা অসুস্থ না খাইয়া আছে। আর তাতেই জহির ৫০০ টাকা দিয়ে দিল। জহিরের ৫০০ টাকা...সেই থেকে মুখ ভোঁতা কইরা আছে। শাহেদ ভাই বলেন।
বলেন কি। খাওয়া দাওয়া করে চলেন কান্দিরপাড় যাই। ওই ফ্রডটারে পাইতেও পারি। আমি বলি।
কোনো দিন ভাতের মাড় খাইছ টিটু? জহির ভাই জিজ্ঞেস করেন। গলার স্বরে এমন কিছু ছিল আমি উত্তর দিতে পারি না...দেওয়া হয় না।
আমি ভাতের মাড় খেয়ে বড় হওয়া মানুষ। আমাকে ঠকানো সহজ না। ওই ছেলেটাকে দেখে আসলে আমার ছেলেবেলার কথা মনে হচ্ছে। শুনতে চাও আমার ছেলেবেলার কথা? গভীর স্বরে বলেন জহির ভাই।
আরে কী শুরু করলি জহির। চল খাওয়া দাওয়া করে তিনজনেই ডামি ব্রিজ খেলি। শাহেদ ভাই বলে। জহির ভাইয়ের গল্প শোনা হয় না আর তাতেই কেমন স্বস্তি বোধ করি।
এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে ঢাকা থেকে ম্যানেজারের কাঙ্ক্ষিত ফোন আসে। আবার হেড অফিসে পোস্টিং। খুশি মনেই দুপুরবেলা মেসে ফিরি। এক মাস নয় দিনের মেস জীবন। খারাপ কাটে নাই। বিকেলে শিপলুর সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলি।
কাল আমি চলে যাব। খেলা শেষে বললাম।
কোথায় যাবে? আর আসবে না? সুন্দর মুখটা আঁধারে ঢেকে যায় শিপলুর।
শাহেদ আর জহির ভাইকে বলে যাব যখনই সময় পাবে তোমার সঙ্গে খেলবে। তবে তুমি আর গম্ভীর হয়ে থাকবে না। হাসিখুশি থাকবে। অল্পস্বল্প দুষ্টুমি করবে...।
না আংকেল আমি দুষ্টুমি করলে খুব খারাপ হয়।
কি খারাপ হয়?
রাতেরবেলা বাবা মাঝে মাঝে শরবত খায়। তারপর ভাঙে, মারামারি করে। আমি দুষ্টুমি করিতো তাই বাবা এমন করে। অদ্ভুত করুন স্বরে বলে শিপলু।
আচ্ছা আংকেল। কালতো আমি কোনো দুষ্টুমি করি নাই। তাও বাবা...।
তোমার খুব খারাপ লাগে শিপলু। আমি জিজ্ঞেস করি।
না ভয় লাগে। খুব ভয়। আমার ছোট বোন আরও বেশি ভয় পায়। দাদা আমার খুব ভয় লাগে বলে আমাকে ধরে থাকে। আমি বলি ভয় পাস না শক্ত করে ধরে থাকি তাও ও খুব ভয় পায়। কাউকে বলো না আংকেল, ভয়ে না ও হিসি করে দেয়। আমরা নিজেরাই পরিষ্কার করি। কাউকে বলি না।
উত্তরের হাওয়া এসে শরীরে লাগে। সেই কারণেই নাকি অন্য কোনো কারণে শিপলুর সুন্দর মুখটা ঝাপসা লাগে। বড় বাবু, শাহেদ ভাই, হোসেন সাহেবের ঘরে ঘরে এত সুখের সংসার। হায় তবুও কিছু সুখী সংসারের সন্তানেরা এত অসুখী হয় কেন?