মায়ের বন্দনা বনাম মেয়ের অবমূল্যায়ন
আমাদের দেশে মায়ের বন্দনা করার প্রচলন জানামতে বহুকাল থেকেই। মায়ের নামে বাড়ির বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে আমরা একধরনের আত্মতৃপ্তি পাই। আমরা দেখেছি, রিকশা ও বাসের পেছনে পরিবহন আর্ট ‘মায়ের দোয়া’। মায়ের নামে বাণিজ্যিক সিনেমা বানিয়ে বাজিমাত করা, মুখে যখন–তখন মায়ের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার কথা, এসব প্রতিনিয়ত দেখা অত্যন্ত পরিচিত কার্যকলাপ।
পক্ষান্তরে মেয়েরা যদিও মায়ের জাত, সেই মেয়েদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, নারীবিদ্বেষী রসাল গল্প, কৌতুক আমাদের এই সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আমরা শুনি ‘অভাগার গরু মরে; ভাগ্যবানের বউ মরে’ ধরনের কৌতুক। নাটক, সিনেমায় কোনো একটি ছেলে সাহস করে কোনো কাজ করতে না পারলে তাকে আমরা মেয়ে বলে হেয় করি। বলি, ‘যাও মেয়েদের মতো চুড়ি পরে থাকো।’ এ ধরনের সংলাপ শুনে ও দেখে আমরা অভ্যস্ত। নারীর দ্বারা সংসারের যেসব নানাবিধ দায়িত্ব সচরাচর পালিত হয় সেগুলো এবং সন্তান লালনপালনের মতো কাজকে আমরা অহরহই সহজ কাজ মনে করি, তুচ্ছ–তাচ্ছিল্যের চোখে দেখি। পুরুষের চরিত্রের মধ্যে সহনশীলতা, সহমর্মিতাকে অনেকেই চারিত্রিক দুর্বলতা মনে করে।
সমাজের আরেকটি অতিপরিচিত দৃশ্য হলো, যখন পরিবারের কোনো ছেলে বা মেয়ে বখে যায়, অথবা কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বা অসামাজিক ঘটনা ঘটায়, তখন দেখা যায় বাবা এসে মাকে হুংকার দিয়ে, চেঁচামেচি, বকাঝকা করে বলেন, ‘সারা দিন বাসায় থাকো, কী করো? এ অবস্থা হয় কী করে?’
ভদ্র, মার্জিত, সুশিক্ষিত ছেলেমেয়ে সব বাবা–মায়েরই চাওয়া। কিন্তু মা–বাবা উভয়ের যৌথ প্রচেষ্টা ছাড়া সেটা হওয়া খুবই কঠিন। মা–বাবা দুজনেরই ছেলেমেয়ের সামনে ‘রোল মডেল’ হওয়াটা আবশ্যক হয়ে যায়। সে কথা আমাদের মনেই থাকে না।
জ্ঞান হওয়া অবধি জানি, আমাদের মুসলিম ধর্মে নারী-পুরুষ সমান। কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু সমাজের আসল চিত্রটা একেবারেই অন্য রকম। সেই আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত মসজিদের ইমাম, যাঁদের মাধ্যমে আমরা ধর্মের কথা শুনি, জানি, ব্যাখ্যা পাই তাঁরা সবাই পুরুষ। আমরা আসলে ধর্মের সঠিক, সম্পূর্ণ, যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা সব সময় সব বিষয়ে পাচ্ছি কি না, তাতে অবশ্যই বিতর্কের অবকাশ আছে।
দেশের সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা আর আইনের চোখে সমতা নিশ্চিত করেছে আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। আর সেই সঙ্গে নিশ্চয়তা দিচ্ছে নারী-পুরুষভেদে বৈষম্য না করার।
সরকারের পক্ষ থেকে বহু ধরনের বৃত্তি, অনুদান ও প্রকল্পের উদ্যোগ নিচ্ছে এই সমতা আনার জন্য। কারণ, দেশকে এগিয়ে নিতে হলো এর বিকল্প নেই। অর্ধেক জনগোষ্ঠী পেছনে ফেলে এগোনো সম্ভব নয়। তারপরও আমরা এখনো পিছিয়ে। অন্যতম কারণ, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির সে রকম কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সেই ছোটবেলা থেকে অসংখ্য আত্মীয়—মামা, চাচা অথবা প্রতিবেশীকে নানাবাড়ির বৈঠকখানায় অথবা দাদাবাড়ির উঠানে দেখেছি রসিয়ে গল্প করছে, ‘এই তো বিয়ে করলাম মায়ের জন্য, মা একা; তার দেখাশোনার জন্য তো একজন দরকার।’
আমরা ভুলেই যাই ‘বিয়ে’ একটি পারিবারিক ও সামাজিক খুশির অনুষ্ঠান। যার উদ্দেশ্য নারী-পুরুষের তাদের ভবিষ্যৎ চলার পথের সঙ্গী বেছে নেওয়া। কিন্তু আমরা দেখি, বিয়ের দিন মেয়ের পরিবারের ব্যথিত মনে কান্নাকাটি করে বিয়ের শেষে তাদের আদরের মেয়েকে বিদায় দেওয়ার চিত্র। আর ছেলের পরিবার বীরের বেশে ছেলেকে বিয়ের জন্য নিয়ে আসে এবং বিয়ে শেষে বিজয়ীর বেশে চলে যাচ্ছে। এমন তো হওয়ার কথা না। বিয়ের দিনটা এমন কোনো এক ‘বিশেষ সন্ধিক্ষণ’ নয়, যেদিন কনের বাবা–মায়ের তাঁর সন্তানের প্রতি অধিকার ছেড়ে দেওয়ার কথা, অথবা বরপক্ষকে অধিকতর ক্ষমতাধর বানানোর কথা।
এই ‘বিয়ে’ প্রসঙ্গে পরে আবার আসছি।
আমাদের দেশে একসময় পরিবারগুলো আকারে বড় ছিল। ৯–১০ সন্তান নিয়ে পরিবার ছিল। সেই সময় বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হতো কিশোরী বয়সে। ছোট চারাগাছ যেমন স্থানান্তরিত হলে প্রতিকূলতার মধ্যে যা কিছু পায়, তা আঁকড়ে এক রকম বেঁচে যায়; সে রকমই মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে শত বাধার মধ্যে মানিয়ে নিতে বাধ্য হতো।
এখন পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসছে। অনেকের একটি বা দুটি সন্তান। মেয়েদের শিক্ষার হার, স্বনির্ভরতার হার অনেক বেড়েছে। সুতরাং, পটভূমি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিরও অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তন আসছে।
বর্তমানে পরিবার ও সংসার কাঠামোয় নানা ধরনের বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। আমরা এখন প্রায়ই টেলিভিশনের টক শোতে, সামাজিক অনুষ্ঠানে আক্ষেপ শুনি, ‘আগের মতো পারিবারিক মূল্যবোধ আর নেই! আগে যৌথ পরিবার ছিল, কত শান্তি ছিল!’
এটা অকাট্য সত্য যে যৌথ পরিবারের মূল্য অপরিসীম। সেখানে বয়স্করা যেমন যথাযথ সম্মান পান, কেয়ার পান, তেমনি বাড়ির ছোটরা আপনজনের সান্নিধ্যে আদর, প্রশ্রয়ে বড় হয়।
কিন্তু আমাদের অনেকের অবশ্য যৌথ পরিবারের প্রকৃত সংজ্ঞাই জানা নেই। অনেকের মতে, যৌথ পরিবারের অর্থ ‘বাড়ির ছেলেসন্তানদের তাদের প্রত্যেকের পরিবার নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে একত্রে বসবাস।’
বাড়ির মেয়েসন্তানেরা কিন্তু এ ধরনের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। ফলে এই পারিবারিক কাঠামোতে বাড়ির মেয়েসন্তানেরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়। তাই সেই মেয়েদের বাবা–মায়েরা বুড়ো বয়সে নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। এটা সমাজে মেয়ের অবমূল্যায়নের এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা–মাকে চরম উপেক্ষা ও অবহেলার বিরাট উদাহরণ।
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরপরই পাত্র–পাত্রী আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তাঁরা কেমন করে তাঁদের উভয় পক্ষের বাবা–মাকে সাহায্য ও সঙ্গ দেবেন। যাতে উভয় পক্ষের মা–বাবা কেউই যেন উপেক্ষিত বোধ না করেন। নিশ্চয়ই দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে একটা কার্যকর উপায় বের করা সম্ভব।
আরেকটি আলোচনার ক্ষেত্রও প্রাসঙ্গিক। আমাদের দেশে আরও কিছু কথা প্রচলিত আছে; যেমন বউ-শাশুড়ি, ননদ-ভাবি এরা চিরকালের প্রতিপক্ষ!
কিন্তু এর গোঁড়ার কারণ নিয়ে কখনো ভাবি না। দ্বন্দ্বের কারণটা যে সমাজেরই সৃষ্ট, সেটা উপলব্ধি করি না।
যেভাবে একটি মেয়ের বিয়ে হয়, মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির সংসারে ঢোকে একেবারে ক্ষমতাহীন হয়ে। যদিও মেয়েটিকে বলা হয়, ‘এখন থেকে এটা তোমার সংসার’, সেই সংসারে সে অবশ্য সব দিক থেকে অধীনস্থই থাকে। সেখানে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একেবারেই কম থাকে। শ্বশুরবাড়িতে সে অসংখ্য রীতি, নিয়মকানুনের জালে আটকা পড়ে যায়। তার নিজস্ব আশা–আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বলে আর কিছু থাকে না। এর জন্য বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আর সামাজিক ক্ষমতাকাঠামো বহুলাংশে দায়ী।
আবার অন্যদিকে সমাজে বহুল প্রচলিত বুলি আছে, যেটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত, ‘জামাই আদর’। একটি ছেলে, তার গুণ থাক বা না থাক, সে যেন বিয়ে করেই কনেপক্ষের সবাইকে কৃতার্থ করে ফেলে!
আমাদের কনেপক্ষের রীতি হয়ে গেছে, বর এবং তাঁর পরিবারকে সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আদর–আপ্যায়ন করা, সর্বক্ষণ খুশি রাখা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নিম্নবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্তের জন্য এগুলো বিরাট আর্থিক চাপ, প্রকৃত অর্থে শোষণ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যৌতুক প্রথার ভয়াবহ কুফলের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এগুলো আমাদের অভ্যস্ত চোখে আর ধরা পড়ে না এবং সেটার কোনো পরিবর্তন না হয়ে দিনের পর দিন চলতেই থাকে।
তবে সমাজে সবকিছুতেই কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা থাকে, এ ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, কিন্তু সেই সংখ্যা খুব কম। বৈষম্য প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় না টানলেই নয়। আমাদের প্রজন্মের অনেকের বাড়িতেই এই দৃশ্য দেখা যায়।
এখন শহরে, গঞ্জে শিক্ষিত পরিবারের আকার ছোট হয়ে আসছে। সেখানে মা–বাবা সমান আদর, যত্ন, সুযোগ দিয়ে ছেলে ও মেয়ে উভয়কে মানুষ করেন। তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন এবং দিনের শেষে সেসব পরিবারের মেয়েসন্তানেরা আর্থিক দিক থেকেও কোনো রকম বঞ্চনার শিকার হয় না। তবে এসব পরিবারের সংখ্যা এখনো আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য নয়।
বৈষম্য আছে সমাজে আমাদের ছেলেমেয়ের বেড়ে ওঠার জন্য যে পরিবেশ দিচ্ছি সেখানেও। ছোটবেলা থেকেই একটি মেয়েকে এক রকম নিরাপত্তা বা অতিরিক্ত নজরদারির বলয়ে রাখা হয়। এর অবশ্য যৌক্তিক অনেক কারণ আছে। আমরা বাবা–মায়েরা গ্রামগঞ্জ, শহর কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থার ওপর এতটুকু নির্ভর করতে পারি না। সুতরাং, মেয়েদের জীবন বখাটের উৎপাত, যৌন হয়রানি, সামাজিক মাধ্যমে হয়রানি ইত্যাদিতে প্রতিনিয়ত জর্জরিত। স্বাভাবিকভাবেই বাবা–মায়েরা সারাক্ষণ মেয়ের ওপর নজরদারি করা ছাড়া বিকল্প উপায় খুঁজে পান না। এ রকম পরিবেশে বেড়ে উঠাতে মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী ও মানসিকভাবে পূর্ণ বিকশিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম থাকে।
অপর পক্ষে, বর্তমানে আমাদের সব পরিবারে ছেলেদের জন্য বাবা–মায়েদের দুশ্চিন্তা শুরু হয় ছেলে কিশোর বয়সে পা দেওয়ার পর থেকেই। কারণ, নানা কারণে ছেলেসন্তানদের মেয়েসন্তানদের মতো শুধু নিরাপত্তা বলয়ে আটকে রাখা সম্ভব হয় না। বাবা–মায়েরা প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠায় থাকেন ছেলে কার সঙ্গে মিশছে? নিজের ছেলের ওপর বিশ্বাস যদিওবা থাকে, আশপাশের পরিবেশের ওপর তো কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই পরিবেশে আছে মাদক, ইয়াবা, পর্নোগ্রাফি, বখাটেপনা, সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, যৌনতা নিয়ে ফ্যান্টাসি। এই পরিবেশে ছেলেদের অসহনশীল, বেপরোয়া, আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে বড় হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তদুপরি, প্রযুক্তির কারণে ছেলেমেয়েরা কী ধরনের তথ্য পাচ্ছে, সে ব্যাপারে বাবা–মায়ের তেমন কোনো ধারণা থাকে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিশোর–কিশোরীর ব্যক্তিসত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। আমাদের বাড়তি সমস্যা হলো, বর্তমানে নানা কারণে বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়ের দূরত্ব বাড়ছে। ছেলেমেয়ের কাছে বাবা–মায়েরা আর পুরোনো দিনের মতো অনুকরণীয় নন, সে রকম ভরসাস্থলও নন।
সমাজের সার্বিক মুখায়ব আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে। একসময় দেশে একজন মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিয়ে, মৃত্যু একই গ্রামে হতো। তার কর্মজীবনের গণ্ডিও ছিল ছোট। তাই স্বাভাবিকভাবেই এক গ্রামের আচার–আচরণ, সংস্কৃতি অন্য গ্রামে যেত না। সেই থেকে ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে এত বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী এখন বিদেশে যাচ্ছে, থাকছে। বিশ্বায়নের ফলে, প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ও উন্নয়নের ফলে এখনকার তরুণদের চিন্তাচেতনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে; যেটার পুরোপুরি আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।
আমিও একজন মা। আমারও ত্রিশের কোঠায় এক ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। জীবনের একসময় এসে আমারই মতো সব মা–বাবা ছেলেমেয়ের সান্নিদ্ধ্যে জীবনের বাকি সময়টা কাটাতে চান।
আমার মতো প্রবীণদের বেশির ভাগের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ওই বয়সে বেশির ভাগই তাদের মেয়ের সান্নিধ্যে/ সঙ্গে থাকতে এবং মেয়ের সঙ্গে তাদের সুবিধা–অসুবিধা শেয়ার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েরা বেশি সহনশীল এবং তারা বাবা–মায়ের আবেগের দিকগুলো ভালো বুঝতে পারে।
বুড়ো বয়সে বাবা–মায়ের ভরসাস্থল ছেলে এবং মেয়েসন্তান উভয়েরই হওয়ার কথা। পরিবারে সহনশীলতা পরস্পরকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে শেখায়। পরিবারের সম্পর্কগুলো সুন্দর রাখার জন্য ও ভালোবাসার পরিবেশ তৈরির জন্যই সহনশীল হওয়া দরকার। বিভক্তি, দ্বন্দ্ব, অবমূল্যায়ন বা বিষাক্ত চিন্তায় পরিবেশে তথা সমাজে শান্তি আসবে না।
কথাগুলো একজন প্রবীণ মায়ের দৃষ্টি থেকেই বলছি, এসব আলোচনার বিষয়গুলো আমরা সামনে আনতে ভয় পাই। সমস্যাগুলোকে সচেতনভাবেই আড়ালে রাখা হয়। কারণ পাছে না এগুলো বাড়াবাড়ি মনে হয়। তাই তখন আমরা আমাদের অস্বস্তির বিষয়গুলো, অপ্রিয় প্রসঙ্গগুলো আলোচনা না করাই বুদ্ধির কাজ বলে মনে করি।যেহেতু পরিবারই সমাজের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং মূল সামাজিক সংগঠন, পরিবার কেন্দ্রিক আলোচনা–সমালোচনা আরও অনেক বেশি হওয়া দরকার। এর মধ্য থেকেই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ নিশ্চয়ই এসে যাবে।
দুটো সুন্দর লাইন—
‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে’
কিন্তু বাস্তবে শুধু প্রথম লাইনটি শুনে আমাদের প্রজন্মের আধিকাংশই বড় হয়েছি; এমনকি আমাদের পরবর্তী দু–এক প্রজন্মও এই শুনেই বড় হয়েছে। সমাজের সার্বিক প্রয়োজনে আমাদের বর্তমান শিশুরা যেন ছোটবেলা থেকেই শেখে নারী–পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। তারা যেন শুধু এক লাইন শুনে বড় না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এটা এখন সময়ের দাবি।
*লেখক: ফাল্গুনী আহমেদ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া