মার্কিন নির্বাচনের আগে ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’

হোয়াইট হাউস থেকে মাস্ক পরে হেলিকপ্টারে ওঠেন ট্রাম্প। তাঁকে ওয়াল্টার রিড সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটাই কি এবার অক্টোবর সারপ্রাইজ?
ছবি: রয়টার্স

গণতন্ত্র খুবই ভঙ্গুর। কখনই খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। গণতন্ত্র দ্রুতই আত্মহত্যা করে, নাজুক হয়ে উঠে। গণতন্ত্রের আত্মহত্যা না করার ঘটনা ইতিহাসে খুবই বিরল।

–কথাটি আমার নয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন কুইনসি অ্যাডামস ১৮১৪ সালেই কথাটি বলে গেছেন।

–সেই কথাটি এখন উঠছে কেন? গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না কি শেষ হয়ে গেল?

সাত সকালে দুই বন্ধু মোবারক আর জর্জ এভাবেই তর্ক জুড়ে দিয়েছেন।

ন্যুয়ার্ক এয়ারপোর্টের বাইরের ডাইনিং স্পেসে কথা বলছিলেন জর্জ আর মোবারক। নিউজার্সির সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দর। সুপরিসর ডাইনিং স্পেস। কিউবের মতো করে দেওয়া হয়েছে ভারী প্লাস্টিক মুড়ে দিয়ে। পরিষ্কার আকাশ। যাত্রী বিমান আসছে, যাচ্ছে।

জর্জ এসেছেন নাতালিয়াকে বিদায় জানাতে। আমেরিকার আসার পর নাতালিয়া আর কখনো ইউক্রেনে ফেরত যাননি। ওডেসা নামের এক শহরে তাঁকে যেতে হবে। নাতালিয়ার মা নাকি খুব অসুস্থ! জর্জ বলেছেন, এখন আর তাঁর ভ্রমণ ভালো লাগে না। ইউক্রেন দেখার কোনো শখ নেই তাঁর। নাতালিয়া বোর্ডিং করে ফেলেছেন। জর্জ বসে গেছেন বন্ধুদের সঙ্গে সপ্তাহান্তের আড্ডায়। যে যার মতো চলেও এসেছেন।

শাহানা আজ শাড়ি পরে এসেছেন!

–সু, তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে !

লাল পাড়ের সবুজ জমিনের শাড়ি পরেছেন শাহানা। চমৎকার দেখাচ্ছে। জর্জ কাছে ডেকে নিলেন। শাড়িতে যে সুকে চমৎকার লাগছে, তা বললেন আন্তরিকতার সঙ্গে।

মোবারক বলে উঠলেন, নাতালিয়ার ফ্লাইট এখনো ছাড়েনি। এর মধ্যেই প্রাচ্যের সুন্দরীকে দেখে বেসামাল হয়ে পড়লে বন্ধু! কেউ আবার কবিতা শুরু না করে দিলেই হয়! এসব ঢং আমার ভালো লাগে না!

মোবারক এদিক-ওদিক লক্ষ্য করেই বর্ম ছাড়লেন!

জর্জ চোখ বন্ধ করে হাসলেন। তোমাকেও নতুন জামায় অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে মোবারক!

–জানো সু, এই শার্টটি আমি সিয়ার্স থেকে কিনেছি। মাত্র ২০ ডলার। মেড ইন বাংলাদেশ!

শাহানার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। পশ্চিমের দেশে লোকজনের কাছে বাংলাদেশের জামাকাপড় আজ সমাদৃত হচ্ছে।

একটি বিমান বেশ শব্দ করে উড়াল দিচ্ছে। বিমানের এমন উড্ডয়ন দেখলে শাহানার মন খারাপ হয়। দেশ থেকে বিমানে চেপে উড্ডয়নের দিনটা তার মনে পড়ে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, নারী শ্রমিকদের অবস্থা, ন্যূনতম মজুরি নিয়ে জর্জ আর শাহানা বেশ আলাপ জুড়ে দিলেন।

মোবারক আলাপের মোড় ঘুরিয়ে রাজনীতিতে নেওয়ার চেষ্টা করলেন।

আমেরিকার নির্বাচনের সঙ্গে নাতালিয়ার ইউক্রেন যাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে নাকি! মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলে আসছিল, বাইরের দেশ থেকে আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চলছে। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল, ইউক্রেন এদিক থেকে এগিয়ে আছে! ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বিবৃতি দিয়ে তাঁর দেশের লোকজনকে বলেছেন, এমন কাজ করা কোনো অবস্থায় ঠিক হবে না!

কিছুই বিশ্বাস করা যায় না। এই লোকটি পটল তুললেও লোকজন বিশ্বাস করবে না! হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকদেরও এখন আর বিশ্বাস করে না লোকজন

দেশে দেশে আমেরিকার হস্তক্ষেপে সরকার বদলের কথা শোনা যেত। যখন যাকে পছন্দ হয়নি, তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কাজটি তারা করে আসছে।

এখন কী হলো? ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনা নিয়ে কিছু বলো জর্জ!–মোবারক বেশ নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় বলছিলেন।

জর্জ কিছু বলেন না। অনেকটা বিমর্ষ হয়ে শূন্যে তাকিয়ে থাকেন।

মোবারক মুখ বিকৃত করে বলেন, কিছুই বিশ্বাস করা যায় না। এই লোকটি পটল তুললেও লোকজন বিশ্বাস করবে না! হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকদেরও এখন আর বিশ্বাস করে না লোকজন!

মোবারকের এক ডেমোক্র্যাট প্রতিবেশী বলেছেন, সবই নির্বাচনে জয়ের জন্য সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা। কথাটা জানিয়ে মোবারক বলেন, এখন আর কোনো পত্রিকা, টিভিতে দুই প্রার্থীর বিতর্ক নিয়ে আলোচনা নেই। আলোচনা নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্য কিছু নিয়ে। সবাই হামলে পড়েছে এখন প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য নিয়ে! সাংবাদিকদেরও আমি আর আজকাল বিশ্বাস করি না!

–তাই হওয়া উচিত! শাহানা কথাটা বলে যোগ করলেন, দেখেন, জো বাইডেন কেমন রাষ্ট্র নায়কদের মতো কথা বলেছেন। বলেছেন, এখন রাজনীতির সময় নয়। চরম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্রুত সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন তিনি। এসব নিয়ে সংশয়, সন্দেহ থাকা উচিত নয় আমাদের। কোভিড-১৯ যে কতটা ভয়াবহ এখনো, এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

জর্জ বিতর্ককে আর টানতে চাচ্ছেন না। বললেন, ওয়াশিংটনে এখন সবচেয়ে ব্যস্ত সাংবাদিক আর অ্যাটর্নিরা।

–সাংবাদিক ও আইনজীবীরা সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর অংশের প্রতিনিধি। যতই অপবাদ দেওয়া হোক, এ দুই পেশাজীবী ছাড়া একটা আধুনিক সমাজ কল্পনাও করা যায় না। অপবাদও তাদের তাড়া করছে সব সময়!

শাহানা চমৎকার একটা বিবৃতি দেওয়ায় লাইক দেওয়ার ইঙ্গিত দিই।

–শোনো সু, আমেরিকায় অ্যাটর্নি ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে একটা কৌতুক বেশ চালু আছে। ইব্বি কিছু মনে না করলে কৌতুকটা শুনিয়ে দিতে চাই।

–মনে করার কিছু নেই জর্জ।

–আমেরিকার দামি অ্যাটর্নিকে তুমি ঘণ্টায় এক হাজার ডলার দিয়ে যে সর্বনাশ ডেকে আনবে, সাংবাদিকেরা সে কাজটি একদম বিনে পয়সায় করে বসবে! দেখো বব উডওয়ার্ড আর নিউইয়র্ক টাইমস কী করেছে।

–জর্জ! মোবারক হাত উঠিয়ে বলতে শুরু করলেন, ধর্মালয়ে গেলে লোকজন শান্তি পায়। ধর্মালয়ে প্রবেশের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না। পানশালায় ভিড় লেগে থাকে। সেখানে গাঁটের পয়সা ব্যয় করে লোকজন মাতাল হয়, নিজের বিপদ ডেকে আনে! মানুষ কি স্বভাবেই নিজেকে ধ্বংস করতে ভালোবাসে জর্জ?

–খুবই ভাবনার কথা বন্ধু।

গতকাল সকালে সেমিট্রির পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সেমিট্রির এমন দেয়াল দেখে ভাবনা হলো, মানুষ কী মৃত্যুর জন্য এমন মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, সেমিট্রিতে দেয়াল দিয়েও তা ঠেকানো যাচ্ছে না!

শাহানা ও মোবারক সমস্বরেই বলে উঠলেন, হ্যাঁ মানুষ নিজেই নিজের ধ্বংসের জন্য যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে আজকাল!

জর্জ হালকা কথায় ফেরার চেষ্টা করেন। তো সু, আমরা তো বকবক করেই যাচ্ছি! নিজের কথা বলো? বলো, শেষ ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলো কবে?

–যেদিন ডাক্তার বলে দিয়েছে, নেশা ধরে এমন কোনো জিনিস আমি ছুঁয়ে দেখতে পারব না!

সম্মিলিত হাসির মধ্যেই ইউনাইটেড এয়ারের ফ্লাইটিট আকাশে উড়াল দেয়। উড্ডয়নের আগেই নাতালিয়া টেক্সট করেছেন জর্জকে–‘মিস ইউ জর্জ’!

–‘মিস ইউ হানি’-জর্জও পাল্টা টেক্সট দিলেন দ্রুত! জর্জ তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, নাতালিয়া মেয়েটা মনে হয় আমাকে ভালোইবাসে বন্ধুরা!

–স্ত্রীর জন্য এখনই কান্নাকাটির দরকার নেই।

অক্টোবরের শুরুতেই এবারে বেশ শীতের আমেজ চলে এসেছে। শীতের এই আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও বাড়ছে মহামারি ভীতি। মোবারক তাঁর ভয় লুকিয়ে রাখতে পারেন না। বললেন, ইহুদি অর্থোডক্স গোষ্ঠীর কাণ্ডজ্ঞান বলতে কিছু নেই।

–দেখেছ ব্রুকলিন আর নিউজার্সির লেকউড শহরে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। ইহুদি বহুল ওইসব এলাকায় এরা সামাজিক ব্যবধান মানছে না। মাথায় জোব্বা লাগিয়ে দিব্যি ধর্মসভা করছে গাদাগাদি করে! নিজেরাও মরবে, অন্যদেরও মারবে!

জর্জ আবারও কথা ঘুরিয়ে দিলেন। জানালেন, যৌবনে ব্রুকলিনে বসবাস করার সময় শোনা কৌতুকটা শোনাতে চান মন হালকা করার জন্য!

পাশের বাড়ি থেকে ইহুদি বন্ধুর কান্না শুনে এগিয়ে গেলেন জর্জ, গিয়ে বিব্রতই হলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে ফেরত আসা সেনা বন্ধুটি কাঁদছে হাউমাউ করে।

–কাঁদছ কেন?

–জানতে পেরেছি স্ত্রী আমার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে।

–সরি। এমন হয়! তারপরও একজন সৈনিকের এমন করে কান্নাকাটি করতে নেই। মোকাবিলা করতে হয়।

–আমার সব বন্ধুর নাম জিজ্ঞেস করেছি। একজনেরও নাম আসেনি!

–তাহলে কাঁদছ কেন?

–আমার বন্ধুদের একজনেরও কেন তাকে পছন্দ হলো না!—বলেই প্রতিবেশী বন্ধুটি আবার হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।

অক্টোবর সারপ্রাইজ’ কথাটা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার নির্বাচনের আগে বেশ চালু আছে। নভেম্বরে নির্বাচন হয়। অক্টোবরে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটে, যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে এমন অক্টোবর সারপ্রাইজ ঘটেছে অনেকবার।
ট্রাম্পের করোনা প্রসঙ্গ উঠতে বললেন জর্জ

মোবারক সুযোগটি হাতছাড়া করলেন না। বললেন, জর্জ, তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছিল?

প্রসঙ্গ এড়াতেই শাহানা এগিয়ে আসলেন। আচ্ছা, এবারের নির্বাচনে কী আবারও অনেক অক্টোবর সারপ্রাইজ থাকছে!

জর্জ খুশিই হলেন, ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ কথাটা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার নির্বাচনের আগে বেশ চালু আছে। নভেম্বরে নির্বাচন হয়। অক্টোবরে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটে, যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে এমন অক্টোবর সারপ্রাইজ ঘটেছে অনেকবার।’

এবারের সারপ্রাইজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা সংক্রমণ। রিপাবলিকান দলের পুরো প্রচারণা শিবিরইতো করোনার কবলে।

মোবারক কাশি দিয়ে বলেন, প্রকৃতির এ এক রহস্যময় আচরণ! আছে নিষ্ঠুরতা। আছে কার্যকারণ। ট্রাম্পের আয়কর দাখিলের তথ্য প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস আরেকটি সারপ্রাইজ দিয়েছে।

এ নিয়ে নিউইয়র্কের বন্ধুর কাছে শোনা কৌতুক বলতে শুরু করেন শাহানা।

ব্রুকলিনের এক ইহুদি মুদির দোকানে বছরে লাভ হয়েছে ৮০ হাজার ডলার। আয়কর নিরীক্ষা করতে আইআরএস থেকে এজেন্ট উপস্থিত। ৮০ হাজার ডলার আয় করেও কোনো আয়কর কেন দেওয়া হলো না?

দোকানির উত্তর, সারা বছর পরিবারের সবাই মিলে কঠোর পরিশ্রম করেছি। এমনকি সাবাত বা ইয়াম কাপুরের দিনেও ছুটি নিইনি। এমন কঠিন পরিশ্রম করে বছরে ৮০ হাজার ডলার আয় নিয়ে তোমাদের এত মাথা ব্যথা কেন? আমার প্রতি আইআইআরএস সব সময় খারাপ ব্যবহার করে আসছে!

আইআরএস অফিসার বিনয়ের সঙ্গে বলেন, তোমার আয় নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন অন্য জায়গায়।

–কি সেটা?

দেখা যাচ্ছে, ব্যবসার ব্যয় হিসেবে আয়কর দাখিলে দেখানো হয়েছে, বার কয়েক তোমার স্ত্রী–কন্যার ইসরায়েল ভ্রমণ ব্যয়কে ব্যবসার লোকসান হিসেবে দেখানো হয়েছে।

–অফিসার, আমাদের মুদির দোকানে ডেলিভারি সার্ভিসও আছে!

উচ্ছ্বসিত মোবারক বললেন, ব্রুকলিন থেকে তেল আবিবে ডেলিভারি সার্ভিস! জব্বর বলেছ সু! একদম ট্রাম্পের যুক্তি!

হঠাৎই আড্ডায় নীরবতা চলে আসে। কেউ কোনো কথা বলছে না।

ফাতিমা টেক্সট করে জানতে চাচ্ছেন, আমরা কী নিয়ে আলাপ করছি আজ?

বন্ধু মোবারককে জানাই, তাঁর স্ত্রী টেক্সট করেছেন।

–তোমাকে যখন টেক্সট করেছে! তুমিই জানাও!

–এ বিভ্রান্তির সন্ধ্যায় চলো রবীন্দ্রনাথের একটা চার লাইনের কবিতা শুনি!

শাহানা উৎসুক হয়ে কবিতাটা শোনেন,

‘স্তব্ধতা উচ্ছ্বসি উঠে গিরিশৃঙ্গরূপে,

ঊর্ধ্বে খোঁজে আপন মহিমা।

গতিবেগ সরোবরে থেমে চায় চুপে

গভীরে খুঁজিতে নিজ সীমা।’

ইংরেজি অনুবাদটা পাঠিয়ে দিই ফাতিমাকে,

In the mountain, stillness surges up

to explore its own height;

in the lake, movement stands still

to contemplate its own depth.