মানসিক স্বাস্থ্য ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে নেওয়া
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছিল অনেক স্মৃতি পরিপূর্ণ। আমি থাকতাম রোকেয়া হলে। রোকেয়া হলে আমার প্রথম আসা ১৯৯৪ সালে। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে মামার বাসায় ঢাকা বেড়াতে গেলাম। আমার সেজআপি বললেন, চল তোকে রোকেয়া হল দেখাতে নিয়ে যাই। আপি থাকতেন প্রধান ভবনের ৬১ নম্বর কক্ষে। লিফট থেকে বের হতেই দেখা হলো লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট সাত আট ইঞ্চি উচ্চতার ছিপছিপে এক আপার সঙ্গে। পরে জানতে পেরেছি ওনার নাম জেবু। আমাকে দেখে সেজআপির কাছে পরিচয় জানতে চাইলেন। সেজআপি পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার ছোট বোন। জেবু আপা খুব উচ্ছলভাবে বললেন, বাহ তোমার ছোট বোন তো খুব হ্যান্ডসাম। ‘হ্যান্ডসাম’ শব্দটা আমার কানে বাজল। সালাম দিয়ে মৃদু হেসে রুমে চলে গেলাম।

সেজআপির রুমমেটরা খুব ভালো। তাঁদের সঙ্গে আমার অনেক মজার সময় কেটেছিল। তারা বলেছিলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো তখন তারা আমাকে তাদের রুমমেট করে নেবেন এবং সত্যি তাই হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে রোকেয়া হলের বাসিন্দা হলাম তাদেরই রুমমেট হয়ে। হাজার মেয়েদের মাঝে একাকিত্বের জীবন শুরু হলো।
হলে আমার প্রথম রাত—তাই কিছুটা খারাপ লাগছিল। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। প্রচণ্ড গরম তাই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বারান্দার কোণে টবের গাছে কিছু জোনাকি নেচে চলেছিল। জোনাকির নৃত্য, সেই সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসা মৃদু বাতাসের ছোঁয়া আমাকে ভুলিয়ে নিয়ে গেল অন্য জগতে। সেখানে ভাবছিলাম মা-বাবার সঙ্গে গলাগলি আর ছোট দুই ভাইয়ের সঙ্গে মারামারির কথা। হঠাৎ কাঁধের ওপর হাতের স্পর্শ অনুভব করে পেছনে তাকিয়ে দেখি জেবু আপা।
জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিরুর বোন না?
—হ্যাঁ।
—ফয়জুন্নেসা হল দেখেছ?
—না।
—চলো তোমাকে ফয়জুন্নেসা হল দেখাব।
বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে পাঁচ তলা থেকে নামিয়ে নিয়ে গেলেন নিচে। তারপর প্রধান ভবন আর অনার্স ভবনের মাঝে পিচঢালা পথে আমার কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি নাম তোমার?
বললাম, শিল্পী।
বললেন, বাহ খুব সুন্দর নামতো। তারপর তিনি হেড়ে গলায় বেসুরো সুরে গাইতে শুরু করলেন, শিল্পী আমি তোমাদের গান শুনাব, তোমাদের মন ভরাবো।
কিছুটা বিব্রত হয়ে চারদিকে তাকালাম। দেখলাম কিছু মেয়ে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর হাসছে। একেতো হলের প্রথম দিন, তার ওপর সিনিয়র আপার পাল্লায়। কীভাবে হাতছাড়া হবো বুঝতে পারছিলাম না। তরপর এক ঘণ্টা হলের আনাচকানাচে হেঁটেছেন আর আমাকে নজরুল-রবীন্দ্রসহ নানা প্রকার গান শুনিয়েছেন। তবে কোনো গানেরই সুর-তাল-ছন্দ ছিল না।
একপর্যায়ে বললাম আর হাটতে পারছি না। ক্লান্ত লাগছে, রুমে যাব।
জেবু আপা বললেন, না আরেকটু থাক, তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।
এবার নতুন ভবনের বারান্দায় বসে গান ধরলেন—ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে। সেই সঙ্গে আমিও ঢলতে শুরু করলাম। পরদিন ক্যানটিনে সকালের খাবার খেতে গিয়ে বুঝলাম গত রাতের জেবু আপা পর্ব অনেকেই জেনে গেছেন। যারা আমার গল্প শুনেছেন তারা আমাকে দেখছেন। কেউবা এসে বলছেন, তুমি ঠিক আছোতো? কেউবা বলেছেন poor girl, কেউবা হেসেছেন সহানুভূতির হাসি। আমি বুঝে গেলাম জেবু আপাকে হলের অনেকেই চেনেন আর তার সুবাদে আমাকেও চিনে গেছেন অনেকে।
ডিপার্টমেন্টে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বন্ধু সুবর্ণার রোকেয়া হলে সিট হয়েছে। হলে এসে দেখি সে জেবু আপার ডাব্লিং। মনে মনে ভাবলাম কপাল! সুবর্ণার সঙ্গে প্রতিদিন জেবু আপার অনেক মজার ঘটনা ঘটত। যার কিছু কিছু ছিল দুঃখজনক। তবে সে ঘটনাগুলো এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য জেবু আপা। জেবু আপা ছিলেন হলের সবার থেকে সিনিয়র। থিসিস, এমফিল ইত্যাদি করে ১২ বছরেরও অধিক সময় ধরে তিনি হলে থাকেন। যার কথায় কিছুটা জড়তা ছিল। আচরণ ছিল সবার থেকে ভিন্ন। ওনার কোনো বন্ধু ছিল না। পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগও ছিল না। শেষের দিকে তিনি সন্দেহ করতেন সবাইকে এবং মাঝে মাঝে কিছু মেয়েদের দেখিয়ে বলতেন যে, তাঁরা তাঁকে মেরে ফেলবে।
বহুবার হলের হাউস টিউটরেরা সিট বাতিল করতে এসেও তাঁর অসুস্থতা আর মানবিক কারণে করতে পারেননি। আমি যখন হল ছেড়েছি খুব সম্ভবত তখনো তিনি ফয়জুন্নেসা হলের বাসিন্দা ছিলেন। জানি না, জেবু আপা এখন কোথায় আছেন, তবে শুভ কামনা ভালো থাকুন। শুনেছি ছোটবেলায় জেবু আপাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল। ডাকাতদল যখন সব লুটপাট করে নিচ্ছিল আর ওনার বাবা-মাকে প্রহার করছিল তখন তিনি ভয়ে চিৎকার করছিলেন। আর তারপর থেকেই ওনার কথার জড়তা আর আচরণের সমস্যা শুরু। নিঃসন্দেহে জেবু আপা মেধাবী ছিলেন। না হলে শিক্ষার এতগুলো স্তর কৃতিত্বের সঙ্গে পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতেন না। ওনার সমস্যা ছিল মানসিক। যার দীর্ঘদিন যথোপযুক্ত কোনো চিকিৎসা না হওয়ার কারণে তা দিন দিন বেড়েছে আর একটি মেধা একটি আপার সম্ভাবনা হারিয়ে গেছে।
আমার ডিপার্টমেন্টে একটি ছেলে পড়ত নাম তার জুবায়ের। ভর্তি হওয়ার মাসখানিকের মধ্যে সে আমাদের এগারোজন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। বিষয়টি মেয়েদের মধ্যে জানাজানি হলে সব মেয়েরা সম্মিলিতভাবে তাঁকে প্রেমিক হিসেবে গ্রহণ করে। তাঁকে দেখলেই মেয়েরা মেরে জুবায়ের, ডার্লিং বলে ডাক দিত। ছেলেরাও তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করত। তারপর জুবায়ের আমাদের বিভাগ ছেড়ে পরের বছর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। সেখানেও একই কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া হয়। প্রায় দুই বছর পর সে আমাদের এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে জানায়, তার পরিবারে ৩০ বছর বয়সে সবাই পাগল হয়ে যায় এবং তারও সেই সমস্যা শুরু হয়েছে। জুবায়ের মেধা তাঁকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল। কিন্তু মানসিক সমস্যার কারণে সে অন্যান্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছিল। নিজেকে সামলাতে না পেরে আর যথোপযুক্ত সাহায্যের অভাবে সে হারিয়ে গেছে। তবে আশীর্বাদ তার জন্য, যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

লেখিকা
লেখিকা

আমার জন্ম শহর চাঁদপুরে। সেখানে এক পাগল ছিলেন যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে পাস করা। তবে তিনি সব সময় পাগল থাকতেন না। শীতকাল এলেই পাগল হয়ে যেতেন আর রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতেন। মাঝে মাঝে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে বক্তৃতা দিতেন। পাগল অবস্থায় তিনি বাংলায় কথা বলতেন না। ছোটবেলায় আমি ইংরেজিতে দুর্বল ছিলাম। একবার পরীক্ষার আগে দোয়া করেছিলাম, আল্লাহ আমাকে ইংরেজি পরীক্ষার দিন ওনার মতো পাগল করে দাও। তবে ভাগ্য আমার সুপ্রসন্ন, আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেননি।
আমার পরিচিত এক খালাম্মা ছিলেন, যিনি আশির দশকে বিএ, বিএড পাস করা স্কুল শিক্ষিকা। প্রথম সন্তান প্রসবের পর তাঁর প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতা দেখা দেয়। আমাদের দেশে প্রসূতি মাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা নেই। সবাই ভাবলেন, উনি পাগল হয়ে গেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ওনার স্বামী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার পর তারও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। একদিকে নিজের প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতা অন্যদিকে স্বামীর এহেন অবস্থা—তার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অর্থ কষ্ট, পারিবারিক অপ্রতুল সাহায্য, উপযুক্ত চিকিৎসা মেলেনি, ভালোও হননি। হারিয়ে গেছে দুটি মেধা—তাঁদের একটি সম্ভাবনাময় সন্তান, একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।
চাঁদপুরে আরেকজন পাগল ছিলেন, নাম মধু পাগলা। তিনি সব সময় লুঙ্গি মাথায় বেঁধে হাঁটতেন আর রেল রাস্তায় ঘুমাতেন। তার শিক্ষা কতটুকু ছিল জানি না। পৃথিবীর এত জায়গা থাকতে কেন-ই-বা রেল রাস্তায় ঘুমাতেন তাও জানি না। তিনি ঘুমালে স্থানীয় জনগণ তাঁকে রেল রাস্তা থেকে তুলে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দিতেন। বাঁচানোর জন্য শত প্রচেষ্টা করার পরও মধু পাগলা হারিয়ে গেছেন—সবার অগোচরে রাতের অন্ধকারে রেলের চাকার ঝমঝম শব্দে নিজের দেহকে ত্রিখণ্ডিত করে।
আরেকজন—নাম তার আবদুল্লাহ। বাবা-মার প্রথম সন্তান। জন্মের পর সব শিশু কাঁদে, তবে আবদুল্লাহ কাঁদেনি। নার্স ঘোষণা দিলেন সে মৃত। তারপর ডাক্তার এসে প্রচেষ্টার পর শোনাল তার কান্না। নির্বাক মায়ের চোখে নেমে এল অশ্রু। মাতৃত্বের গর্বিত অশ্রু। ধীরে ধীরে আবদুল্লাহ বড় হলো। তার চোখের চাহনি দেখে লোকে বলত তার সঙ্গে জিন আছে। ও ঠিকমতো কথা বলতে পারত না। ভীষণ জেদি আর গোঁয়ার ছিল। বুদ্ধি-জ্ঞানও কম। সবাই তাকে মারত। দুঃখে মা তাকে আরও মারত আর বলতেন তুই মরস না কেন। আবদুল্লাহর নতুন ভাইবোন হলো, আবদুল্লারও আদর কমতে শুরু করে। খাটে আর তার জায়গা হয় না। বিছানা হয় মেঝেতে। সবাই যখন স্কুলে তখন আবদুল্লাহ হাঁটে রাস্তায় রাস্তায়। পরনে ময়লা কাপড়। রাস্তার ছেলেরা তাকে ঢিল ছোড়ে। সেও পাল্টা ঢিল ছোড়ে। হাঁটতে হাঁটতে সে পথের দিশা হারিয়ে ফেলে। খুঁজে পায় না বাড়ি ফেরার পথ। নতুন এ পথে সে পায় নতুন পরিচিতি—আবদুল্লাহ পাগল।
প্রতিটি শহর ও অনেক গ্রামে এ রকম অনেক পাগল আছেন, যাদের কেউ বা পাগল হন ফেনসিডিল খেয়ে, কেউ বা পাগল হন ভালোবেসে প্রতারিত হয়ে কিংবা পারিবারিক অপ্রতুল ভালোবাসা, শারীরিক পরিবর্তন বা মানসিক চাপ বা আঘাতের কারণে। কখনো বা কাউকে পাগল বানানো হয় জমিজমার বিরোধের কারণে। তাদের অধিকাংশের জীবনে মেলে না যথোপযুক্ত সেবা, ভালোবাসা আর চিকিৎসা।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যকে বিবেচনা করা হয় না। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা বা psycho-counseling-এর কোনো ব্যবস্থা নেই। একজন শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীর কোনো মেধা বা আচরণগত সমস্যা দেখেন, তখন তাকে গরু, গাধা, অপদার্থ, বেকুব, ঘোড়া, ইবলিস বলে গালি দেন। কখনো বা প্রহার করেন। তবে বাবা-মা বা স্বজনদের শাসন বা আচরণ যে এ থেকে ভিন্ন তা কিন্তু নয়। আমাদের শিক্ষা এতটাই জ্ঞানভিত্তিক যে শিক্ষার্থীর মানসিক কিংবা শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে আমরা নজর দিই না। এ বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও রয়েছে সচেতনতা আর জ্ঞানের অভাব। অভাব রয়েছে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণের। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করার জন্য নেই কোনো মনোবিজ্ঞানী। তা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় হোক কিংবা মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় হোক। তা ছাড়া মানসিক চিকিৎসার জন্য শহর-গঞ্জে নেই পর্যাপ্ত মনোচিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানী।
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বা গৃহে সুস্থ পরিবেশের অপরিহার্যতার বিষয়ে আছে পারিবারিক অসচেতনতা আর জ্ঞানের অভাব। সময়ের বিবর্তনে পারিবারিক, সামাজিক ও আত্মীয়তার বন্ধনগুলো জটিল হচ্ছে। সহনশীলতা আর সংবেদনশীলতা কমেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন বিপদ লুকিয়ে থাকে। তাই এক সময় বাবা-মা বা শিক্ষক কাউকে অমানুষ বললে সে অমানুষ হয়নি। কিন্তু বর্তমান সময়ে কাউকে অমানুষ বললে সে নিজেকে মূল্যহীন মনে করে হয়তোবা অমানুষই হওয়ার চেষ্টা করে কিংবা হতাশায় ভোগে কিংবা আত্মহত্যা করে।
সম্প্রতি কুমিল্লা বোর্ডে এইচএসসি ফলাফল প্রকাশের পর এগারোজন ছাত্রের আত্মহত্যা এবং একটি ছাত্রের রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট পারিবারিক ভুল সিদ্ধান্ত, হতাশা, প্রতিবেশীদের কটাক্ষ মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলারই বহিঃপ্রকাশ। অকৃতকার্যতা মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয় বা জীবনকে শেষ করে দেওয়া নয়। অকৃতকার্যতা কখনো বা হতে পারে নতুন জীবনের শুরু। অমাদের চিন্তাশীলতা আর মনন মানসিকতায় দরকার আমূল পরিবর্তন। দরকার সহযোগিতা ও পথপ্রদর্শন।
আশার বিষয় দেশে এখন অটিজম নিয়ে কাজ ও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD), অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD), Attention Deficit Hyperactivity Disorder (ADD, ADHD), Bipolar Disorder (Manic Depressive Illness), Schizophrenia, Borderline Personality Disorder, Dual diagnosis (Addiction and Mental Illness) এবং Serious Eating Disorders (anorexia, bulimia)সহ অন্যান্য মানসিক রোগসমূহকে।
আজ যে শিশুটি চাঁদের হাসি হেসে পৃথিবীর বুকে এসেছে তাকে সুস্থভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব বাবা-মা, সর্বোপরি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের। এ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যখন কোথাও দৈন্যতা থাকে তখনই সেই চাঁদের আলোয় হেসে ওঠা শিশুটি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক বা নেশার মতো অসুস্থ জীবন বেছে নেয়। কেউবা হয়ে যায় জেবু আপা, মধু পাগলা, জুবায়ের, খালা, আবদুল্লাহ কিংবা ইংরেজিতে কথা বলা সেই প্রতিভাবান ছেলেটির মতো। গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবচেয়ে বড় অভিভাবক হলো রাষ্ট্র। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবমূল্যায়ন করে একটি রাষ্ট্র কখনো সুস্থ জাতি উপহার দিতে পারে না। আমাদের অপ্রকাশিত আবেগ, অনুভূতিগুলো মরে যায় না। আমরা তাদের জীবিত কবর দিই যা পরবর্তী জীবনে ফিরে আসে মানসিক রোগ হয়ে। সেবাই হোক অনুভূতি, মনন, সচেতনতা, শ্রদ্ধা আর প্রকাশের বাহক। পাগল যেন না হয় কারও পরিচয়।

*ড. নূরুন নাহার বেগম: সহযোগী অধ্যাপক, East Stroudsburg University, Pennsylvania, USA.