মা দিবস এই পরবাসে

মে মাসের ৮ তারিখ মা দিবস। প্রবাসের একটা ঝকমকে দিন। সকাল সকাল কাজে চলেছি। পথে কফিশপে থামলাম, কফিশপের সঙ্গেই ফুলের দোকান। আজকে প্রচুর ফুল সাজানো। সকালের এ সময়টা ফুলের রাজ্যে এক কাপ কফি নিয়ে কাজে যেতে এমনি খুব ভালো লাগে। আজকে দেখছি অনেক ছোট ছোট বাচ্চা এসেছে বাবার হাত ঘরে। ছোট্ট দুহাতে বিশাল বিশাল ফুলের তোড়া ধরে আছে। মায়ের জন্য। বাসায় গিয়ে ফুলের সঙ্গে কিছু একটা বানিয়ে নাশতা দেবে বিছানায়। সে কী ব্যস্ততা তাদের। আমার নিজের মাও খুব ফুল ভালোবাসে। বাসার সামনে ছোট্ট বাগানে এখনো কাজ করেন তিনি। মৌসুমি ফুলে বাগান তাঁর ভরে থাকতেই হবে। একগুচ্ছ কদমসহ এ রকম কোনো এক ভোরবেলা তার দরজায় দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে। ঝকমকে সকালে বর্ষার ফুলের কথা কেন মনে হলো কে জানে।

পুরো ফ্রিওয়েতে ছুটির দিন হিসেবে গাড়ির ব্যস্ততা বেশি। পথটুকু মায়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে যাই আমি। তাঁকে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ২০ মিনিটের অফিসে গেলাম। হাসপাতালে সবার মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব। সহকর্মী, নার্স, রোগীর লোকজন যে–ই দেখছেন, স্বল্পপরিচিত হলেও জিজ্ঞেস করছেন তুমি কি মা? শুভ মা দিবস।

মাঝবয়সী এক রোগী মহাঝামেলা করছেন গত কয়েক দিন। যা বলি তাতেই জুড়ে দেয় তর্ক। তাঁর খাবার পছন্দ না, এত নিয়ম (রেস্ট্রিকশন) ভালো লাগছে না, এত ওষুধ ভালো লাগছে না, মানে যতটুকু ঝামেলা করা সম্ভব সব করছেন। আজকে গিয়ে দেখি তাঁর মা বসে আছেন পাশে। স্যুপ মুখে তুলে দিচ্ছেন, রোগীকে যা যা বলছি তিনি মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছেন মায়ের সঙ্গে সঙ্গে। গত কয়েক দিনের মেজাজি রোগীকে আর খুঁজে পেলাম না। একটু পর নার্স ফুল হাতে এলেন রুমে। রোগী ফুল আনিয়েছেন মায়ের জন্য। বুঝে গেলাম এ রোগীর ভালো হয়ে বাসায় যেতে আর বেশি সময় লাগবে না। যা বলব এখন থেকে সবকিছু শুনবেন। তাঁর মা বলেছেন যে।

কয়েক দিন আগে আমার ছেলে বলেছিল, মা ফ্লাওয়ার শোর টিকিট কাটি? কার্লসবাড পাহাড়ে ফুলের চাষ হয় আর মার্চ থেকে মে মাস হয় শো। আজকে কাজ শেষ করছি তাড়াহুড়ো করে। ছেলে টিকিট কেটেছে। সাড়ে তিনটার দিকে ফোন করে বলল মা সাড়ে চারটার এক মিনিটও দেরি করে হাসপাতাল থেকে বের হবে না কিন্তু। দিলাম দৌড় তাঁকে তুলতে। বাসার সামনে দেখি আমার মেয়েও দাঁড়িয়ে আছে। মা দিবসে সারপ্রাইজ দেবে বলে সে দেড় ঘণ্টা ড্রাইভ করে কলেজ থেকে চলে এসেছে। আমরা রওনা হলাম পাহাড়ে ফুল দেখব বলে। এটা মা দিবস, আমার একান্ত নিজের একটা আনন্দময় দিবস।

প্রায় ৬০ বছরের ওপর কার্লসবাড পাহাড়ে ৫০ একর পাহাড়ি ঢালে এ বাগান। মার্চের শুরু থেকে মে মাসের শুরুটা র‌্যানিনকুলাস ফুলে ফুলে সাজানো থাকে এ পাহাড়।

আমরা গেলাম মা দিবসে দেখতে। অসম্ভব ভিড়। পার্কিং করে গিয়ে ট্রাক্টরের লাইনে দাঁড়ালাম। ছোট শিশুরা ছোটাছুটি করে আইসক্রিম কিনছে, পপকর্ন খাচ্ছে, একটা ঝলমলে মা দিবস। ট্রাক্টর আমাদের নিয়ে গেল পাহাড়ে ওপরে, দেখলাম ফুল দিয়ে বানানো আমেরিকার পতাকা, বাগানে চেয়ার বা বেঞ্চ বসানো রূপকথার রাজ্য, একটা পাহাড়ে শুধু সব সূর্যমুখী ফুল, সব জায়গায় সবাই বসছে, ছবি তুলছে। ঘণ্টাখানেক ছিলাম কিন্তু এ জায়গাটায় সারা দিন থাকা যায়। সন্ধ্যার আগে আগে কন্যা চলে গেল নিজের কলেজে, বাবুও নিজের মতো। আর আমি গেলাম বন্ধুদের সঙ্গে মা দিবস পালন করতে। অবশ্যই একটা দিন মা দিবস না, সারা বছরই মা দিবস। তবু এ দিনটা ছিল বলেই উদ্‌যাপনের একটা ব্যাপার থাকল। পৃথিবীর সব ভালো মায়েদের মা দিবসের শুভেচ্ছা।