মস্কো বিমানবন্দরে ফ্লাইট মিস করার গল্প

মস্কো বিমানবন্দরে ভারী তুষারপাত
ছবি: লেখক

২০১৮ সালের মার্চ। গন্তব্য ছিল হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট। ভোর পাঁচটার ফ্লাইটে করে দিল্লি থেকে বুদাপেস্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলাম রাশিয়ার অ্যারোফ্ল্যাট বিমানে করে। সবকিছু খুব ভালোভাবেই চলছিল। কারণ, সঙ্গে ছিল আমার খুব কাছের বন্ধু। উচ্চতর শিক্ষার জন্য দুজন হাঙ্গেরির একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই দুজনের ভ্রমণটা ছিল খুব আনন্দময়।

যাত্রাপথে মস্কো বিমানবন্দরে আমাদের বিরতি ছিল এক ঘণ্টা। মস্কোতে তখন দুপুর সাড়ে ১২টা, যখন বিমানটা অবতরণ করল। যাত্রীতে ভরপুর বিমানটিতে আমাদের আসন ছিল পেছনের সারিতে। সুতরাং বিমান থেকে বের হতেই অনেক বিলম্ব হয়ে গেল, প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা। বাইরে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছিল। তার মধ্যে পুরো মস্কো শহর যেন বরফের চাঁদরে আচ্ছাদিত হয়ে গেছে। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই শুধু বরফ।

সবকিছুই স্বাভাবিকভাবেই চলছিল, কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেল বিমান থেকে বের হওয়ার পর যখন জানতে পারি, বুদাপেস্টের বোর্ডিং পাস হচ্ছে টার্মিনাল দুইয়ে। প্রথমত, দেশের বাইরে এটা ছিল আমাদের প্রথম বিমান ভ্রমণ। এ কারণে অনেক নিয়মকানুনই জানা ছিল না। আর দ্বিতীয়ত, নিয়ম অনুযায়ী আধঘণ্টা পূর্বেই বোর্ডিং পাস বন্ধ করে দেয় বিমানবন্দর। তার মধ্যে আমাদের হাতেও তখন সময় ছিল স্বল্প। আমরা যখন টার্মিনাল দুইয়ে পৌঁছালাম, তখন আমাদের হাতে ২০ মিনিট বাকি ছিল। বিমান যাত্রী নিয়ে ততক্ষণে আকাশে উড়াল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। মনটা আমাদের ভীষণ খারাপ হয়ে গেল ফ্লাইট মিস করার পর। মস্কো বিমানবন্দরে হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যারোফ্ল্যাট অফিসের ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করার জন্য বলল। তখন অ্যারোফ্ল্যাটের অফিসে গিয়ে আমাদের সমস্যার কথা খুলে বলার পর নতুন করে বিমানের টিকিট কাটতে হবে বলে সরাসরি জানিয়ে দিল অফিস কর্তৃপক্ষ। সেদিন বুদাপেস্টের একটাই ফ্লাইট ছিল রাত নয়টার দিকে। কী আর করা, আমরা তো তখন নাছোড়বান্দা। দুজনের কাছেই যথেষ্ট ইউরো ছিল। তাই আর সময় নষ্ট করিনি, সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট কাটার জন্য প্রস্তাব দিলাম। তার জন্য নতুন করে ৫০০ ইউরো গুনতে হলো।

মস্কো বিমানবন্দরের ভেতরের অংশ
ছবি: লেখক

মস্কো থেকে বুদাপেস্ট বিমানপথে সাড়ে তিন ঘণ্টার দূরত্ব, আমাদের সময় ছিল আট ঘণ্টা। কিছু খাবার খেয়ে দুজনেই বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। যদিও ওয়াই–ফাই বিমানবন্দরে ছিল, তবে যাদের রোমিং করা সিম কার্ড ছিল, শুধু তারাই সংযুক্ত করতে পারত। তবে শেষ পর্যন্ত এ দীর্ঘস্থায়ী বিরতির অবসান ঘটল, আমরা পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্যের শহর বুদাপেস্টে। জীবনের প্রথম দেশের বাইরে বিমানভ্রমণ, গল্পটা ছিল আমাদের দুজনের জীবনে এক সেরা অভিজ্ঞতা।

লেখক: মনির হোসেন পর্তুগালপ্রবাসী গণমাধ্যমকর্মী