মমতায় আগলে রাখা ভালোবাসা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জহির সরকারি কলেজের ইংরেজির শিক্ষক। মফস্বল শহরের ছোট কলেজ। জেলা শহর থেকে খুব বেশি দূরে না হলেও যোগাযোগ অপ্রতুলতার কারণে এলাকাটাকে প্রত্যন্ত অঞ্চল বলা-ই যায়। কলেজটাও ছিমছাম নিরিবিলি। ছাত্র শিক্ষক সবাই সবাইকে চেনে জানে। ছাত্র রাজনীতি আছে ঠিকই তবে এখনো বিষময় হয়ে ওঠেনি। এমন সময়েই রসায়নের শিক্ষক হিসেবে তানভীর এল।
এই ছেলে এখানে কেন? তানভীরকে প্রথম দেখে জহিরের এটাই মনে হলো। এর তো থাকার কথা সিনেমা-টেলিভিশনের পর্দায় নতুবা করপোরেট বসের চেয়ারে। আজকাল তো করপোরেট বসরাও বিরাট সেলিব্রেটি। এক কথায় আদ্যন্ত সুপুরুষ তানভীরকে এই মফস্বল কলেজে বেমানানই লাগে।
সময় যায়। দেখা গেল তানভীর শুধু দেখতেই সুদর্শন না তার গুনের পাল্লাও বেশ ভারী। চমৎকার পড়ায়, দারুণ গান গায়। আবার কলেজের ছেলেদের সঙ্গে যখন ব্যাডমিন্টন কিংবা ভলিবল খেলে তখন বোঝা যায় খেলাধুলায়ও সে বেশ ভালো। অল্প দিনেই শুধু কলেজ না গোটা শহরেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তানভীর। বয়সের মিল থাকায় জহিরের সঙ্গে একটা সম্পর্কও তৈরি হয়। সম্পর্কটা তানভীরের দিক থেকে যতটা সহজ খোলামেলা বন্ধুত্বের, জহিরের দিক থেকে ততটা নয়। হবেই বা কীভাবে। অনেকখানি শ্রদ্ধা, ঈষৎ ঈর্ষা, আর কিঞ্চিৎ হীনমন্যতা মিশে থাকলে কী বন্ধুত্ব হয়। জহির ব্যাপারটা বোঝে, মেনেও নেয়।
কলেজের টিচার্স রুমে জহির আরও কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে গল্প করছিল। স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল নওয়াজ সাহেব আসেন। সোজা জহিরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন, এদিকে আসো একটু জহির। তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে। কেউ কোনো কৌতূহল দেখায় না। সবাই জানে নওয়াজ সাহেব এমনই। পৃথিবীর সব চাইতে তুচ্ছ ​জিনিসও ওনার কাছে জরুরি। আর সেটা বলতে হয় ফিসফিস করে। কে জানে আজকে হয়তো ফিসফিস করে বলবেন, দেখেছ জহির কি গরমটাই পড়েছে। দেশ তো মরুভূমি হয়ে গেল। নওয়াজ সাহেবের সঙ্গে যায় জহির।
তোমার বন্ধু তানভীর তো মনে হয় অবিবাহিত। ফিসফিস করে জরুরি কথা শুরু করেন নওয়াজ সাহেব।
জি, ঠিক জানি না।
কী বলো! এইটাই এখনো জানো না।
জি, মানে কখনো জিজ্ঞেস করা হয় নাই।
শোনো, তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে আমাকে জানাও। প্রিন্সিপাল সাহেব জানতে চেয়েছেন। তার বড় মেয়ের ব্যাপারে...। নওয়াজ সাহেব আরও ক্ষীণ স্বরে ফিসফিস করতে থাকেন।

ঠিক আছে।
সেদিন বিকেলেই তানভীরের সঙ্গে অনেকক্ষণ আড্ডা হয় জহিরের। কিন্তু কথাটা জিজ্ঞেস করা হয় না। এর কয়েক দিন পরে নওয়াজ সাহেবের সঙ্গে আবার দেখা হয় জহিরের।
তোমার বন্ধু তো বিবাহিত। ফিসফিস করে বলেন নওয়াজ সাহেব।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি


তাই নাকি?
হুমম। আজকালকার পোলাপান দেখি সব রহিম বাদশা হয়ে গেছে। দাড়িগোঁফ ওঠার আগেই বিয়ে। বিরক্তির সঙ্গে বলেন নওয়াজ সাহেব।
আরও সময় যায়। ছোট শহরে তানভীরের পরিচিতি-জনপ্রিয়তা বাড়ে। জহিরের সঙ্গে বন্ধুত্বও বাড়ে। তানভীরের অদেখা স্ত্রী সম্বন্ধেও কৌতূহল বাড়ে, বিশেষ করে নারী মহলে।
ভাইয়া তানভীর স্যারের বউ নাকি দারুণ সুন্দরী? জহিরের কলেজ পড়ুয়া ছোট বোন মিতু জিজ্ঞেস করে।
কে বলল তোকে?
সবাই তো তাই বলে।
আর কি বলে?
অনেক বড়লোকের মেয়ে। ঢাকার গুলশানে নাকি বিরাট বাড়ি।
আচ্ছা, এত খবর জানিস। ওদের বাসার কুকুরটার নামও নিশ্চয়ই জানিস।
ফালতু কথা বলবি না ভাইয়া। স্যারের বউ এখানে এলে অবশ্যই আমাদের বাসায় দাওয়াত করবি।
কেন?
কেন আবার তুই তানভীর স্যারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এটা সবাই জানে। আমার বান্ধবীদের বলব। সবার আগ্রহ স্যারের বউয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য।
জহিরের আবারও ভালো লাগা, ঈর্ষা, হীনমন্যতা মেশানো মিশ্র অনুভূতি হলো। তানভীরের ব্যাপারে যেমন হয় সব সময়। সেদিনই কলেজের টিচার্স রুমে আড্ডার সময় প্রসঙ্গ আসে।
এখানে ফার্নিচারের দোকান কোথায় আছে জহির?
কেন?
তোমার ভাবি আসবে। মাস দু-এক থাকবে। একটা ড্রেসিং টেবিল আর ছোট একটা সোফা দরকার।
ঠিক আছে কলেজ শেষে তোমাকে নিয়ে যাব।
এই যে তোমার সঙ্গে এত দিনের পরিচয়-বন্ধুত্ব। তুমি কখনো আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কৌতূহল দেখাও নাই। এটা আমার খুব ভালো লাগে। মৃদু হেসে তানভীর বলে।
তুমি তো নক্ষত্র। এত দূরের নক্ষত্র নিয়ে কৌতূহল দেখিয়ে লাভ কী? জহির মনে মনে বলে।
রোজা আর ঈদের বড় ছুটির পরে তানভীর সস্ত্রীক আসে। বাস স্টপেজে জহির যায়। বন্ধুপত্নীকে প্রথম দেখাতে ধাক্কার মতো খায় জহির। উঁচু কপাল, উঁচু দাঁত-এ রকম মুখকেই মনে হয় ঘোড়ামুখী বলে। গায়ের রংটাও ময়লার দিকে। সব চাইতে যেটা চোখে পড়ে চেহারায় তা হলো লাবণ্যর অভাব। তানভীর পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্ত্রীর সঙ্গে। নাম রুমু। গলার স্বরটা বেশ মিষ্টি কিন্তু তাও আবার আঞ্চলিকতার দোষে দূষিত। মনের গোপন গভীরে কেমন যেন স্বস্তি অনুভব করে জহির। যাক বিধাতা তাহলে একজনকে সবকিছু দেন না।
কলেজ শুরু হওয়ার পরে আরও অনেকের সঙ্গেই তানভীরের স্ত্রীর পরিচয় হয়। সবার মাঝেই একইরকম অনুভূতি হয়। না হয়ে উপায়ও নেই। তানভীরের পাশে সত্যিই খুব বেমানান লাগে রুমুকে।
ভাইয়া তোর বন্ধু তানভীর স্যার তো মহা ধড়িবাজ। মিতু বলে একদিন।
কেন সে আবার কি করল?
কী আবার করবে। বিশাল যৌতুক নিয়ে শাকচুন্নি বিয়ে করেছে।
তুই জানলি কীভাবে?
এত সবাই জানে। দেখিস তুইও আবার বন্ধুর মতো...।
ফালতু ভ্যাজর ভ্যাজর না করে নিজের কাজে যা। জহির তেমন পাত্তা দেয় না।
কিন্তু কয়েক দিন পরেই নওয়াজ সাহেব ফিসফিস করে বলেন, তোমার বন্ধু তো জাত খেলোয়াড়।
মানে কি?
এই যে বিয়ে করেই বড়লোক।
জহির চুপ করে থাকে।
শুনলাম এক কোটি টাকা আর একটা বাড়ি পেয়েছে তোমার বন্ধু। আবার ফিসফিস করে বলেন নওয়াজ সাহেব।
আপনি এত কিছু জানেন কীভাবে?
এত সবাই জানে। যাই বলো শ্বশুরের টাকা ওড়াবার মজাই আলাদা। নিজের টাকা তো কষ্টের টাকা। ওড়াইয়া মজা নাই।
তাই?
হুমম। তোমার তো সময় আছে বন্ধুর কাছে বিদ্যাটা শিখে নাও। লাভ হবে। বলেই খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকেন নওয়াজ সাহেব। জহির বিরক্ত হয়। কথা যে এত আস্তে বলে সে এত জোরে হাসে কীভাবে কে জানে।
দুই মাস পরে রুমা ঢাকা চলে যায়। কলেজে শহরে তানভীরকে নিয়ে ফিসফাস বাড়ে-জনপ্রিয়তা কমে। কিন্তু তানভীরের এ নিয়ে কোনো হেলদোল নাই।
সন্ধ্যার পরে বাসায় চলে এসো। কলেজে জহিরকে বলে তানভীর।
কেন? কোনো দরকার?
না। নতুন একটা মুভি এনেছি। একা একা দেখতে ভালো লাগে না। আর নায়কও তোমার প্রিয় নায়ক।
সন্ধ্যার পরে জহির যায়। মুভি দেখতে দেখতেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আজকে তোমার আর বাসায় ফেরার দরকার নাই। গরুর মাংস আছে, নান্টুকে বলি খিচুড়ি রাঁধতে। আর নান্টু যাওয়ার পথে তোমার বাসায় খবর দিয়ে যাবে। তানভীর বলে। এ রকম আগেও হয়েছে। তাই আপত্তি করে না জহির। তা ছাড়া মুভিটাও ভালো। কিন্তু অল্প সময় পরেই বিদ্যুৎ চলে যায়। মোমের আলোয় খাওয়া শুরু হয়।
ভাবি আবার কবে আসবে? জহির জিজ্ঞেস করে।
ওতো পিজি হাসপাতালে এমফিল করছে। খুব ব্যস্ত। তাড়াতাড়ি আসার সম্ভাবনা নাই।
জহির একটু অবাক হয়। রুমু তাহলে একজন ডাক্তার।
তোমার শ্বশুর বাড়ি তো ঢাকাতেই। তাই না?
না তো? আমার শ্বশুর বাড়ি কুমিল্লার এক প্রত্যন্ত গ্রামে।
তাই। লোকে যে বলে...জহির মৃদু কণ্ঠে বলে।
লোকে কি বলে?
না মানে। ইয়ে...।
ও বুঝেছি। রুমু অনেক বড়লোকের মেয়ে, অনেক যৌতুকের বিনিময়ে আমি রুমুকে বিয়ে করেছি। এই সব তো। তানভীর হাসতে হাসতে বলে।
না মানে...হ্যাঁ।
তোমাকে এত ইতস্তত করতে হবে না জহির। আমি এতে অভ্যস্ত। আসলে আমরা দুজনেই অভ্যস্ত। বলতে পারো আমরা এসব এখন একটু উপভোগই করি। তাই রুমুর বিস্তারিত পরিচয় কাছের লোক ছাড়া বলি না। আমাদের বিয়েটাও কিন্তু দীর্ঘ পরিচয়ের পরে। তানভীর বলে।
তাই নাকি? জহির বিস্ময়বোধ কণ্ঠে লুকিয়ে রাখতে পারে না।
হ্যাঁ। তবে সেসব কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তোমাকে অন্য এক গল্প বলি। দাঁড়াও তার আগে দুকাপ চা বানিয়ে আনি। অভ্যস্ত হাতে কেরোসিনের স্টোভে দ্রুত দুকাপ চা বানিয়ে ফেলে তানভীর।
বিয়ের দুই বছরের মাথায় আমার মেয়ে রুনুর জন্ম হয়। বারান্দার অন্ধকারে তানভীর বলা শুরু করে। রুমুর মেয়ে রুনু। নামটা আমিই রাখি। তখন আমার খুব ব্যস্ত জীবন। বেসরকারি অফিসে চাকরি, টিউশনি আর বিদেশে স্কলারশিপের চেষ্টায় টোফেল, জিআরই। তবে এত ব্যস্ততার পরে বাসায় ফিরে রুনুকে কোলে নিলেই সব ক্লান্তি উধাও হয়ে যেত। আর মেয়েও যেন আমার অপেক্ষাতেই থাকত। কোলে নেওয়া মাত্রই চোখ বড় বড় করে তাকাবে। তিন মাস বয়সেই সে শব্দ করে হাসত। কী যে মায়া, কী যে ভালো লাগা।
এতটুকু বলে একটু চুপ থাকে তানভীর। জহিরও কোনো কথা বলে না।
ম্যাটারনিটি লিভ শেষে রুমু চাকরিতে যোগ দেয়। তানভীর আবার বলা শুরু করে। আমাদের ব্যস্ততা আরও বাড়ে। রুনুর বয়স তখন পাঁচ মাস। অফিসে বসের সঙ্গে কঠিন এক ঝগড়া হলো। ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরে রুনুকে কোলে নিলাম। গত দুদিন যাবৎ রুনুর একটু জ্বর। এখনো জ্বর আছে। কিন্তু কোলে নিতেই দুষ্টুমিভরা এক হাসি দিল।
একটু পরেই চায়ের কাপ হাতে রুমু এসে বলল, শোনো আমার মনে হয় রুনুকে একবার হাসপাতালে নেওয়া উচিত। জ্বরটা কমছে না। বুকেও কেমন ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে।
ধুর। তোমাদের ডাক্তারদের এই সমস্যা সামান্য সর্দি জ্বরকেও বড় মনে করো। আমার মেয়ের কিছুই হয় নাই।
আমার কথা সত্যি প্রমাণ করতেই যেন রুনু খলবল করে হেসে উঠল। পরদিন যথারীতি ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরে শুনি রুমু রুনুকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে ঘণ্টা দু-এক আগে। বুকটা কেঁপে ওঠে। হাসপাতালে ছুটে যাই। রুমুকে পাই আরও দুজন ডাক্তারের সঙ্গে। কেমন উদভ্রান্ত লাগে ওকে। তুই নিজে ডাক্তার হয়েও কীভাবে এত বড় ভুল করলি। একিউট নিউমোনিয়া। ২৪ ঘণ্টা আগে চিকিৎসা শুরু হলেও একটা সম্ভাবনা ছিল। রুমুর সহকর্মী রিতা আপা বলে। রুমু কিছু বলে না। আমার দিকে এক পলক তাকায় শুধু। এখন আল্লাহ আল্লাহ কর বলেই রিতা আপা দ্রুত সরে যান।
এতটুকু বলেই আবার চুপ করে যায় তানভীর। টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। জহির ধৈর্য রাখতে পারে না। জিজ্ঞেস করে, তারপর কি হলো?
তারপর আর কি। রুনু মারা যায় রাত এগারোটায় আমারই কোলে। তুমি বিশ্বাস করবে না জহির, মারা যাওয়ার পাঁচ মিনিট আগেও রুনু আমার দিকে তাকিয়ে সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসিটা হেসেছিল। শেষ বাক্যটা বলতে গিয়ে তানভীরের গলা ধরে আসে। জহির কিছু বলে না। তানভীরের কষ্ট সত্যিকার ভাবে উপলব্ধি করে বলেই মনে হয় কিছু বলতে পারে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে জহির বলে, চলো এখন ঘুমাতে যাই। রাত অনেক হলো।
আর একটু বসো। তোমাকে আসল কথাটাই বলা হয় নাই। আবার শুরু করে তানভীর। রুনু মারা যাবার পরে আমার একধরনের মানসিক বিপর্যয় হলো। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। আর ঘুমাতে পারি না। সবকিছু অর্থহীন ফাঁকা মনে হয়। চাকরি টিউশনি সব ছেড়ে দিলাম। রুমুকে কিছুই বললাম না। কিন্তু যতই স্বাভাবিক থাকার ভান করি না কেনো রুমু ঠিকই টের পেল।
আমি ডাক্তার হিসেবেই বলছি। ২৪ ঘণ্টা আগে চিকিৎসা শুরু হলেও রুনু হয়তো মারা যেত। রুনু জন্মেছিল দুর্বল ফুসফুস নিয়ে-জোর দিয়ে বলে রুমু। আমি কিছু বলি না। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। এরপর থেকে রুমু অফিসের সময়টুকু বাদে সারাক্ষণ আমায় আগলে রাখত। প্রতি বিকেলে নিয়ম করে রুমু আমাকে কোনো না কোনো বন্ধু বা আত্মীয় বাড়ি নিয়ে যেত। আর প্রতি শুক্রবার রাতে বন্ধুরা আসত আমাদের বাসায়। এভাবে মাস দু-এক গেল। আমি একটু স্বাভাবিক হলাম। হঠাৎ একদিন মার্কেটে রিতা আপার সঙ্গে দেখা।
কেমন আছ তানভীর?
এইতো আছি।
তোমাকে আমি মনে মনে খুঁজছিলাম।
কেনো রিতা আপা?
রুমুর ব্যাপারে। রুনুর শোকটা ও ভুলতে পারে নাই। হাসপাতালে মাঝে মাঝেই খুব কান্নাকাটি করে। তুমি ওকে একটু দেখো ভাই।
আমি স্তব্ধ হয়ে শুনি। আমার সামনে ভুলেও রুনুর কথা বলে না রুমু। আমি জানি অন্য সবাইকেও সে নিষেধ করেছে। রুনুর সব খেলনা কাপড় সব কোথায় যেন সরিয়ে ফেলেছে। অথচ...আবারও তানভীরের ভরাট গলা কেমন আর্দ্র শোনায়।
ঝড়ে উপড়ে পড়া পুরোনো কোনো বটগাছ দেখেছ জহির? হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে তানভীর জিজ্ঞেস করে।
নাহ।
আমি একবার দেখেছিলাম। আমাদের এলাকার সব চাইতে পুরোনো বটগাছ এক রাতের প্রবল ঝড়ে উপড়ে পড়ল। সকালে গেলাম দেখতে। বিশাল গাছটা পড়ে আছে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখি গাছের মাঝে পাখির বাসাটা অক্ষত। মা পাখিটা দুটো বাচ্চাসহ সহি সালামতেই আছে বাসাটাতে। মাঝে মাঝেই ভাবি রূপ-রসের এই দুনিয়াতে মানুষের ভালোবাসাও কি বটগাছের মতো? নিজে ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু পরম মমতায় ভালোবাসাকে আগলে রাখবে।
ঝড়ের বেগ বাড়ে। বারান্দার অন্ধকারে দুই যুবক চুপচাপ বসে ঝড় দেখতে থাকে।