মধ্যপ্রাচ্য থেকে এত স্বর্ণ আসার কারণ কী

বাড়তি প্রণোদনার পরও রেমিট্যান্সের প্রবাহে বাধা হয়ে থাকবে বৈধ স্বর্ণমানব! প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে প্রণোদনা চালু করার পর দেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বেশ বেড়ে গিয়েছিল, এমনকি করোনার প্রথম বছরে তো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এ বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার কারণ শুধু প্রণোদনা হিসাব করলে ভুল হবে। করোনার সময় অনেকের চাকরি চলে গিয়েছিল, দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল অনেক প্রবাসীকে, অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে এসেছেন। এই একেবারে চলে আসা প্রবাসীরা তাঁদের এন্ড অব সার্ভিস ও ব্যবসার মূলধন একত্রে দেশে নিয়ে আসার ফলেও রেমিট্যান্স বেড়ে গিয়েছিল তখন অপ্রত্যাশিতভাবে।

ধীরে ধীরে আবার যখন রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে, তখন অনেকে  প্রবাসীরা দেশে আটকে থাকার ফলে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা দেন। এই ধারণা কিছুটা সঠিক হলেও, আরও অনেক কারণ রয়েছে।

সরকার কর পরিশোধ করে দেশে স্বর্ণ নিয়ে আসার প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে ছুটিতে যাওয়া প্রবাসীদের নানা রকমের প্যাকেজ দিয়ে ক্যারিয়ার বানিয়ে তাঁদের মাধ্যমে স্বর্ণ পাঠাচ্ছেন দেশে। প্যাকেজের মধ্যে ছিল রিটার্ন টিকিটসহ অর্থ। যাত্রীদের কাজ, এয়ারপোর্ট পার করে দেওয়া। এয়ারপোর্ট থেকে বের হলেই চক্রের সদস্যরা বুঝে নেন।
প্রথমদিকে অনেক প্রবাসী ঝামেলা এড়াতে এসব এড়িয়ে গেলেও, এখন নিজেরা আগ্রহী হয়ে খোঁজেন এসব ব্যবসায়ীকে, কারণ হচ্ছে টিকিটের উচ্চমূল্য! স্বল্প ও মধ্যম আয়ের প্রবাসীরা আকাশছোঁয়া দামের টিকিট কিনতে হিমশিম খেয়ে স্বর্ণের ব্যবসায়ীদের কাছে যান, তাঁদের স্বর্ণ বহন করে টিকিটের টাকার অর্ধেকটা হলেও পাচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেককেই চিনি, যাঁরা আগে এভাবে না গেলেও, টিকিটের চড়া দামের কারণে বাধ্য হয়ে এ পথেই হাঁটছেন। একটি ফ্লাইটে ৩০০ যাত্রী দেশে এলে, এখন ২৮০ জনই স্বর্ণ নিয়ে আসেন। টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এলে অনেকেই এ পথে যাবেন না। সরকারের উচিত এদিকে নজর দেওয়া।

অনেকের হয়তো মনে হতে পারে, সরকার তো কর পাচ্ছে স্বর্ণের বিপরীতে, তাহলে এতে তো সরকারের লাভই হচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, যত টাকার স্বর্ণ দেশে যাচ্ছে, সে টাকা হুন্ডির মাধ্যমে উচ্চমূল্য দিয়ে সংগ্রহ করছেন স্বর্ণের ব্যবসায়ীরা, ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্সের প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে দিন দিন। একজন প্রবাসী এক লাখ টাকাতে প্রণোদনা ২ হাজার ৫০০ টাকা পেলেও, হুন্ডিতে বিনিময় করলে ৫-৬ হাজার টাকা বেশিই পাচ্ছেন। আর এর ফলেই অনেক প্রবাসী সেদিকেই ঝুঁকছেন। তাই শুধু প্রণোদনা বাড়িয়ে চুপচাপ রেমিট্যান্স বাড়ার আশায় বসে না থেকে প্রবাসীদের টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি আসা-যাওয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে, রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরও বাড়বে।


*লেখক: জাহেদুল আলম, শারজা, সংযুক্ত আরব আমিরাত