বিশ্বজুড়ে এটা স্বীকৃত যে কোনো ব্যক্তি, বিষয়, মত বা পথকে সমর্থন করার বিষয়টি একান্তই ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার হলে প্রতিষ্ঠানের জন্যও তা স্বীকৃত। কারণ, প্রতিষ্ঠানের পেছনে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিই মুখ্য। এর উল্টোটাও সত্য। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি, বিষয়, মত বা পথকে সমর্থন না করার বিষয়টি একান্তই ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এই সমর্থন না করার জন্য কাউকে দোষারোপ করা যায় না। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই মান্য বিষয়টি সবাই মেনে চলাই দস্তুর।
আর এর ব্যতিক্রম হলে তা সংবাদের শিরোনাম হয়। ঠিক এই কাজই করতে চলেছেন দুই মার্কিন সিনেটর। মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট সিনেটর বেন কার্ডিন ও ওহাইওর রিপাবলিকান সিনেটর রব পোর্টম্যান সিনেটে একটি প্রস্তাব এনেছেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমর্থনে এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে কোনো আমেরিকার কোম্পানি যদি ইসরায়েলকে বয়কট করে, তাহলে মার্কিন আইন অনুযায়ী তারা বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হবে। কী অদ্ভুত নিয়ম বানাতে চলেছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা! মার্কিন সংবিধানে স্বীকৃত প্রতিবাদ বা বিরোধিতার অধিকার প্রস্তাবিত খসড়ায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে।
আরব বিশ্বে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো তাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে চলেছে। আরব দেশগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে প্রবল পরাক্রমে ইসরায়েলের টিকে থাকার একমাত্র কারণ এটিই। আর ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার অন্ধ সমর্থন অপ্রকাশ্য কোনো বিষয় নয়। তারপরও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন, তখন বিস্মিত হতে হয়। কারণ, তা ছিল আমেরিকার এত দিনকার নীতির ব্যত্যয়। ধনকুবের আরবদের জন্য হোক আর অন্য কোনো কারণেই হোক, আমেরিকা এই ভারসাম্যের নীতি বজায় রেখেছিল। কিন্তু ট্রাম্প সেখান থেকে সরে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন।
এখন ট্রাম্পের সেই নীতিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে চান দুই সিনেটর। এর পেছনে আমেরিকার ইহুদি লবির জোর সমর্থন আছে। বেকায়দায় থাকা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যারপরনাই খুশি। কিন্তু আমেরিকার অধিকার রক্ষা আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা, ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমর্থকেরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এর যত না কারণ ইসরায়েল প্রতি অপ্রীতি, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, যা আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এর প্রণেতারা।
ফলে একটা প্রশ্ন বরাবরের মতো উঠে আসছে, ইসরায়েল স্বার্থ সুরক্ষায় আমেরিকান নীতিনির্ধারকেরা কী শেষ পর্যন্ত নিজেদের নাগরিকের মৌলিক অধিকারও হরণ করবে।