ভূত
চোখে একরকম জড়তা নিয়ে দুপুর ১২টায় আমার ঘুম ভাঙল। সারা জীবন ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা আমি এই নববিবাহিত জীবনে প্রতিদিন দেরি করে উঠছি। রাজ্যের আলস্য ধরেছে। সারা দিন একা থাকতে হয়, তাই ঘুমিয়েই আধাবেলা পার করি। ফাহিম সকাল সকাল অফিসে চলে যায়। থাইল্যান্ডের এই ছোট শহরে সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছে। চাকরি পেয়েই সে আমাকে ফোন দিয়েছিল আর গান করেছিল, ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি হৃদি শুনছ’। আমিও আর দেরি না করে তিন মাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমিককে বিয়ে করে ফেললাম। বিয়ের পর ১৫ দিন ধরে আমি এই নতুন ডুপ্লেক্স বাসায় আছি। বাসাটা এখন আমার বেশ ভালো লাগে। প্রায় প্রতিদিন আমি একটু একটু করে সাজাই। অথচ প্রথম দিন কী ভয়টাই না পেয়েছিলাম!
বিয়ের সাত দিন পর আমরা নবদম্পতি রাত প্রায় ১২টায় ঘুটঘুটে অন্ধকার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থেকে নামলাম। ট্যাক্সিচালক চলে যাওয়ার পর চিঠির বাক্স থেকে চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকে আমার তো গা ছমছম করে উঠল। পুরো অন্ধকার একটা দোতলা বাসার দরজা খুলতেই কতগুলো চামচিকা উড়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। আবছা অন্ধকারে একটা কাঠের সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে আর উঁচু জানালায় বড় বড় পর্দা। ফার্নিচারগুলো সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। পুরো বাড়ি দিয়ে কী রকম ধুলো ধুলো গন্ধ। হঠাৎ মনে হলো দুপদাপ শব্দ হচ্ছে। আমি তো পুরো চমকে তাকালাম। হিন্দি ছবি হলে ভয়ে ফাহিমকে জড়িয়ে ধরতাম, কিন্তু বাস্তবে আমার মুখ ভয়ে শুকিয়ে গিয়েছিল। একটু পর বুঝতে পারলাম, বাসাটা কাঠের টাউনহোমস, তাই পাশের বাসাটা একদম লাগোয়া। ওই বাড়িতে কেউ হাঁটাচলা করলেই বেশ জোরে শব্দ হচ্ছে। তেলাপোকা, মাকড়সা—এরাও আমাদের অভ্যর্থনা করল। কী নেই সে বাড়িতে!
আমি মিন মিন করে বললাম,
–এ রকম বাসা নিয়েছ? আমি দিনের বেলা একা একা কীভাবে থাকব? আমার বিবাহিত জীবনের রোমান্টিক গল্পটা হরর হয়ে যাবে নাকি?
ফাহিম মাথা চুলকে বলল,
-আমাকে বাসাটা খুলে দেখায়নি। এ কমপ্লেক্সের অন্য একটা বাসার ভেতর দেখেছিলাম। আমার খুব সুন্দর লেগেছিল। বিয়ের আগে আমি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম। সেটা ছোট ছিল। বারান্দা ছিল না। তোমার জন্যই ফুল ফার্নিশড বাসা নিলাম। এত অল্প দামে এ রকম ডুপ্লেক্স পাওয়া যায় না। মাত্র ১৫ মিনিট দূরে সমুদ্র। কিছু ছোটখাটো দোকানও আছে গলির মুখে। বারান্দায় দাঁড়ালে দূরে সমুদ্র দেখা যাবে। যখন থেকে আমাদের প্রেম, আমার খুব ইচ্ছা ছিল বিয়ের পর সমুদ্রের কাছাকাছি থাকব। বাসাগুলো কিন্তু অনেক সুন্দর। দিনের বেলা দেখবে তোমার ভালো লাগবে। বাইরে সারি সারি ঝাউগাছ। আমার কাছে তো স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল।
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
-স্বপ্নের বাড়ি না ভূতের বাড়ি, আল্লাহ জানে! মনে হচ্ছে, এ বাসা অনেক দিন কেউ খোলেনি। পোকামাকড় আর ধুলোবালুর বসতি। বাতাসে ঝাউগাছ নড়ার শব্দ পাচ্ছি।
মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ে কোনোরকমে মুঠোফোনের আলো জ্বেলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরতলায় উঠে দেখলাম বড় দুটি ঘর। একটি ঘর আমাদের বেডরুম আর অন্য ঘরটি দ্বিতীয় বেডরুম। রুমের বাতি জ্বালাতেই দেখলাম বেশ সুন্দর, পরিপাটি ঘর, যেন একটা অভিজাত হোটেলের রুম। রুমের সঙ্গেই সুন্দর ব্যালকনি। সিঁড়ির ঠিক অন্য প্রান্তে আরেকটি ঘর। ওই ঘর ভেতর থেকে লকড মনে হলো।
আমি ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।
-এই, ওই রুমের চাবি কোথায়?
সে আবারও মাথা চুলকে বলল,
-না মানে, যে থাই বুড়ির থেকে বাসা নিলাম, সে তো ইংরেজি ভালো বোঝে না। কিন্তু অন্য বাসাটির ডিজাইন ঠিক এক রকম। সে এই ঘর দেখিয়ে অভিনয় করে বলেছিল, ‘নো ওপেন’। ওই ঘর বোধ হয় তালাবদ্ধ থাকবে। আমাদের শুধু দুটি বেডরুম, বারান্দা আর নিচতলার লিভিং, ডাইনিং ও কিচেন।
আমার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলল,
-ধুর, বাদ দাও। আমাদের জন্য এক বেডরুমই যথেষ্ট। ওই ঘর বুড়ির থাক। আমরা বরং আমাদের সময়টা উপভোগ করি। তুমি চিন্তা করতে পারো, এ বাসায় শুধু আমরা দুজন থাকব! তোমার–আমার লাল-নীল সংসার। সমস্যা হলে লিজ ক্যানসেল করে অন্য জায়গায় চলে যাব।
কিন্তু বাসাটা ধীরে ধীরে আমার ভালো লেগে গেল। কেমন যেন একটা রিসোর্ট রিসোর্ট ভাব আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমরা সৈকতে চলে যেতাম। থাইল্যান্ডের বিখ্যাত পাতায়া সৈকত মাত্র এক ঘণ্টা দূরে। সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতেও ভালো লাগত। লোকাল মার্কেট থেকে সুন্দর সব ঘর সাজানোর জিনিস কিনতাম, সি ফুড খেতাম। এ নির্জনতা নবদম্পতির জন্য আদর্শ। আমাদের আশপাশে যারা থাকে, তারা কেউ ইংরেজি বোঝে না। তবে তারা হাসিখুশি জাতি। দেখলেই হাসে, আমরাও হাসি। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য সব মেয়েরাই চালায়, মেয়েরাই বেশি কর্মঠ। পুরুষদের দেখা যায় সন্ধ্যায় হলেই বিয়ার নিয়ে বসেছে, চোখ ঢুলুঢুলু। অকর্মার ধাড়ি একেকটা।
তবে একটা খটকা আমার মনে রয়ে গেছে। একটি পুরো বাসা ভাড়া দিয়ে সেই বাড়ির একটি ঘর তালাবদ্ধ করে রাখা বেশ অদ্ভুত। ওই ঘরের ভেতর কী আছে, সেটা জানতে আমার বেশ কৌতূহল হয়।
২.
এ শহরের আবহাওয়া একটু অন্যরকম। প্রতিদিন দুপুরবেলা বৃষ্টি নামে। আজও নেমেছে। ঝিরঝির ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আমি ভাবছি, আজ ছাতা মাথায় দিয়েই কাছের গ্রোসারি থেকে কিছু জিনিস কিনে আনব। তারপর নতুন কিছু রান্না করব। আমার রান্নাবান্নার অবস্থা খুব খারাপ। এ বিদ্যায় আমি শূন্য নম্বর পেয়ে ফেল করছি। বিয়ের আগে কোনো দিন রান্নাঘরে উঁকিও দিইনি। তবে ইউটিউব ভরসা করে আজ কিছু একটা রেঁধেই ফেলব আর ফাহিম বাসায় এসে চমকে যাবে। এ রকম একটা প্ল্যান মাথায় এঁটে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। বৃষ্টি এসে যেন ঘর ভিজে না যায়, সে জন্য জানালা বন্ধ করতে গিয়ে দেখলাম, নিচের প্যাটিওতে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থাইদের বয়স বোঝা মুশকিল। তবে মেয়ে নয়, সম্ভবত মহিলা। বৃষ্টিতে হয়তো রাস্তায় নামতে পারছে না।
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ইংরেজি যে সে বোঝে না, তা জানি। বৃষ্টিতে আটকে পড়া মেয়েটির সঙ্গে আমার বেশ গল্প জমাতে ইচ্ছা হলো। অনেক দিন ফাহিম ছাড়া কোনো মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি কথা হয়নি। কিছুটা একাকিত্ব আমাকে পেয়ে বসেছে।
আমি দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম।
মেয়েটি আমাকে দেখে খুব ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে রইল।
আমি বাংলাতেই বললাম,
-তুমি আটকে গেছ?
আমার মনে হলো, যে ইংরেজি বোঝে না, তার সঙ্গে বাংলা বলাও যা ইংরেজিও তা।
সে আমার দিকে একটু দুঃখী মুখ করে তাকিয়ে আছে। তার কাঁধে একটা ঝোলা। ঝোলার ভেতর কিছু আর্ট পেইন্ট ব্রাশ দেখা যাচ্ছে। মেয়েটির হাতে নোটবুক।
আমি আবার বাংলায় বললাম,
-তুমি ছবি আঁকো?
এবারও সে ভাবলেশহীন।
আমি হাত দিয়ে পেইন্টিংয়ের ব্রাশ দেখালাম।
এবার ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখা দেখা দিল।
আমি বললাম,
-আমি আঁকতে পারি না। আমার এই গুণ নেই। আমার কোনো গুণ নেই। আমি রান্নাও করতে পারি না। তবে সবার সবকিছু থাকতে হয় না। সবাই যদি গান গাইত, ছবি আঁকত, নাচতে পারত, তাহলে আলাদা করে পেইন্টার, সিঙ্গার, ড্যান্সার শব্দগুলোর জন্ম হতো না। যেমন সবাই কথা বলে, হাঁটে। আমরা তো কোনো মানুষকে ‘হাটক’ বলি না।
আমি কথা বলছি, নিজেই হাসছি।
সে নোটবুক বের করে আমার একটা ছবি এঁকে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।
হুবহু আমার মুখ। চ্যাপটা নাক, গোল মুখ আর বড় বড় চোখ। আমি তো খুশিতে আত্মহারা।
আমি অভিনয় করে জিজ্ঞেস করলাম,
-কফি খাবে?
সে মনে হলো ঘাড় কাত করল।
আমি ভেতরে আসলাম কফি বানাতে।
ফিরে গিয়ে দেখি বৃষ্টি ধরে গেছে আর মেয়েটিও নেই। শুধু আমাকে আঁকা ছবিটা পড়ে আছে।
৩.
-হ্যাঁ গো, তোমরা তো আর এলে না।
গ্রোসারি স্টোরে বাংলা শুনে আমি চমকে গেলাম। এ শহরে এখন পর্যন্ত ইংরেজি শুনিনি আর বাংলা?
সালোয়ার–কামিজ পরা একজন বাঙালি মহিলা, কপালে সিঁদুরের টিপ, হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি বললেন,
-তুমি নিশ্চয়ই ফাহিমের বউ?
-জি। আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না।
-আমি তোমাদের পাশের গলিতেই থাকি। ফাহিম যখন বাসা নিতে আসে, তখন আমরাই ওকে সাহায্য করেছিলাম। ফাহিম তোমাদের দাদার ইউনিভার্সিটির জুনিয়র।
এবার একটু আবছাভাবে মনে পড়ল। ফাহিম বলেছিল বটে কাছে একটি বাঙালি পরিবার থাকে। ওদের কাছেই এই বাসার খোঁজ পেয়েছিল।
আমি এবার বেশ বিনয়ী হয়ে উত্তর দিলাম,
-জি জি, বলেছিল আপনাদের কথা।
-আমার নাম অপর্ণা। তোমার নামটি হৃদি?
-জি
-সারা দিন কী করো গো, হৃদি? আমার বাড়িতে এসো। গল্প করা যাবে।
-জি আসব। আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় আর প্রতিদিন দুপুরবেলা বৃষ্টি হয়। দিনের বেলা বের হইনি তেমন।
-বৃষ্টি হয়?
-হ্যাঁ। আমি তো দেখি প্রতিদিন বৃষ্টি।
-কী জানি বাবা, আমার তো মনে পড়ছে না গত ১৫ দিনে বৃষ্টি হয়েছে। বাসা কেমন লাগছে? সব ঠিকঠাক? ওই বাসাটা আমার খুব পছন্দ। বাড়ির পর্দাগুলো ভীষণ সুন্দর। এখানে সব বাসা এক রকম আর সব বাড়ির কেয়ারটেকার ওই বুড়ো মহিলা। যখন অনেক দিন খালি ছিল, তোমার দাদাকে বলছিলাম আমরা ওটা নিই। উনি রাজি হলেন না।
-কেন?
-আর বোলো না। ছেলে মানুষ কিন্তু ভিতুর ডিম। বলে না যে বাড়িতে একজন মারা গেছে, ওই বাড়িতে থাকব না।
এবার আমার একটু ভয় লেগে গেল। নার্ভাসভাবে বললাম,
-ওই বাসায় মারা গেছে?
-হ্যাঁ, একটা মেয়ে মারা গিয়েছিল। বছর খানেক আগে। খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল। এসব বাড়ির আসল মালিক ছিল বুড়ির ভাই আর ওই মেয়ে ছিল ওর ভাইয়ের মেয়ে। ভাই মারা যাওয়ার পর মেয়েটিকে বুড়ি দেখত। মেয়েটা একটু অন্যরকম ছিল। সারা দিন ছবি আঁকত আর বেশি কথা বলত না। মেয়েটার একটু লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি ছিল, বুদ্ধি কম ছিল, কিন্তু কিছু গুণ ছিল। বুড়ি অনেক আদর করত। মাঝেমধ্যে নিজের কাছে এনে রাখত। আমি দেখেছিলাম সুন্দর মতন একটা মেয়ে। ওই ঘটনার পর এই বাসা ছেড়ে এখন বুড়ি অন্য একটা বাসায় থাকে। বুড়ি বলছি দেখে কিছু মনে কোরো না। ওর বিশাল থাই নামটা আমার মনে থাকে না।
আমার ভেতরে কী যেন দুম দুম করে বাজছে। বাসায় ফিরে যেতে আর পা চলছে না।
বাসায় এসে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তালাবদ্ধ ঘর দেখে কেমন যেন ভয় লাগছিল।
দরজার ছোট কি–হোল দিয়ে ঘরের ভেতর উঁকি দিলাম।
অল্প আলোতে একটা বিছানা আর ওয়ার্ডরোব দেখা যাচ্ছে। ঘরের ঠিক কোনায় একটা ছবি আঁকার ইজেল।
আমি ভয়ে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু কে যেন শক্ত করে আমাকে ধরে ফেলল।
৪.
গত এক বছরে ফাহিম আমাকে প্রায়ই বলে অন্য কোথাও বাসা নেবে। বউদি ওকে বলেছে, এই বাড়ি অলক্ষুনে। একটা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে এখানে রাখা ঠিক নয়। ফাহিম লক্ষ করে, আমি কোথাও যেতে চাই না। আমার যেতে ইচ্ছে করে না। আমার শরীর একটু একটু ভারী হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না। নিচে গিয়ে পানি খাব, খুব আলসেমি লাগে। তখন পাশ ফিরে দেখি কেউ একজন এক গ্লাস পানি রেখে গেছে। যেদিন রান্না করতে ইচ্ছা করে না, সেদিন বাসায় হাঁড়িতে গরম তরকারি থাকে। মায়াবতী এই অদৃশ্য সঙ্গী ফেলে এই শরীরে কোথায় যাব? বিদেশ–বিভুঁইয়ে এমন যত্ন আমি কোথায় পাব? ছোটবেলা থেকে আমার এমন সব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতো, যাদের মধ্যে মা মা ভাব আছে। তা ছাড়া আমরা এই বাসায় না থাকলে মেয়েটির ভয় লাগবে। মেয়েটাকে একা ফেলে যেতে ইচ্ছা হয় না। আমি এই বাড়িতেই থেকে যাই। ফাহিমকে কিছু বলি না। সে তো এত ব্যস্ত, সারা দিনে আমার খবর নেয় কোথায়? দিনের বেলা মুভি দেখে দেখেও বোরড হয়ে গেছি। তবে বিমোহিত হয়ে দরজার কি–হোল দিয়ে ছবি আঁকা দেখি মাঝেমধ্যে। ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ ছবি আঁকে। মানুষের প্রতিভা আমাকে সব সময় মুগ্ধ করে।
মাঝেমধ্যে আমার রান্না খেয়ে ফাহিম অবাক হয়ে যায়। বলে, এ রকম রান্না তুমি কোথায় শিখেছ? তবে খাটের নিচে যে ছবি আঁকার খাতাটা আছে, ওটা এখনো দেখাইনি। যে আমি একটা সোজা করে দাগ দিতে পারি না, সেই আমি কত ছবি এঁকেছি। দরজার কি–হোল দিয়ে ছবি আঁকা দেখে দেখে সেই ছবি আমিও এঁকে ফেলতে পারি। তাজ্জব ব্যাপার, শুধু ওই ছবিগুলোই আমি অনায়াসে এঁকে ফেলতে পারি, যেন কেউ আমাকে দিয়ে আঁকিয়ে নিচ্ছে। শেষ ছবিটা এমন, একটা শীর্ণ–বৃদ্ধ হাত একটি মেয়েকে ধাক্কা দিচ্ছে। পুলিশকে দেখাব? কেউ কি আমাকে বিশ্বাস করবে?
*লেখক: ইশরাত মাহেরীন জয়া, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র