ভিনদেশির বাদ্যযন্ত্রে সোনার বাংলার সুর
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে ঘুরে বেড়ানোর তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। নিউইয়র্ক শহরের কোলে হাডসন নদীতে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালাকৃতির মূর্তিকে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্থাপত্য হিসেবে আজও বিবেচনা করা হয়।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রায় তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এক বৃষ্টিস্নাত দিনেই ঠিক করলাম স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে যাব। সঙ্গে ছিলেন আমার নিউইয়র্কপ্রবাসী ভগ্নিপতি মোস্তাফা জামাল। পর্যটকবাহী ফেরিতে চেপে লিবার্টি আইল্যান্ডে যেতে হলে প্রথমে যেতে হয় নিউইয়র্ক শহরের ঐতিহাসিক ব্যাটারি পার্কে। আর এখান থেকে পাওয়া যাবে স্ট্যাচু অব লিবার্টি যাওয়ার ছাড়পত্র।
দুপুর গড়ানোর আগেই আমরা চলে এলাম গন্তব্যস্থানে। নির্ধারিত ফি দিয়ে টিকিট কেটে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা চৌকির দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে কানে ভেসে এল অচেনা বাদ্যযন্ত্রের সুর। মনে হলো কে যেন পিয়ানো বাজাচ্ছে। কিছুটা কাছে যেতেই দেখা মিলল বর্ষীয়ান এক কৃষ্ণাঙ্গের। গলায় ঝোলানো রয়েছে বিশালাকৃতির ড্রাম। আর তাতে লেখা আছে ‘মে পিস প্রিভেইল অন আর্থ’ অর্থাৎ ‘পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক’।
ভদ্রলোকের পাশে এসে দাঁড়াতেই তিনি জানতে চাইলেন আমরা কোন দেশের নাগরিক। উত্তরে বললাম বাংলাদেশ। তখনই সঙ্গে থাকা স্টিল ড্রামে তিনি বাজালেন আমাদের চিরচেনা জাতীয় সংগীতের সুর ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।’
কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি ও ভাইয়া দুজনই আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম। দুজনই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম ওই বাদ্যশিল্পীর দিকে। কেমন যেন একটা শিহরণ জাগল বুকে। সুদূর এই মার্কিন মুল্লুকে এসে এমন জায়গায় এক ভিনদেশি তার বাদ্যযন্ত্রে আমাদের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে শোনাবেন তা কখনো ভাবিনি! এ এক অনন্য অনুভূতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তির সঙ্গে পরে আলাপচারিতায় জানতে পারলাম, যেকোনো দেশের নাম বলা মাত্রই সেই দেশের পরিচিত কোনো গান কিংবা জাতীয় সংগীত বাজাতে পারেন তিনি। একবার ভেবে দেখুন, কতটা অধ্যবসায় আর সাধনা করলে মানুষ এ ধরনের সংগীত চর্চাও করতে পারেন।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানোর পরে তিনি একে একে শোনালেন চীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পরিচিত গানের সুর। আমরা করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানালাম। তার অসাধারণ এই প্রতিভা আশপাশে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মুগ্ধ করল। পর্যটকরাও খুশি মনে যে যার সাধ্যমতো তাকে বকশিশ দিলেন। স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের তিনি এভাবেই নিখাদ আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন।