ভাষা আন্দোলন একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা
বাঙালি জাতির ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এ আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল না, বরং নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন ছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান হয়েছে এবং একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেয়েছে।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে সব ভাষাশহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী লোকজনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি যথাযথভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং এই দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দূতাবাসে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে দূতাবাসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইয়াঙ্গুনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে দূতাবাসের অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একুশের কর্মসূচির সূচনা করেন মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী। এরপর ইয়াঙ্গুনে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দ্বিতীয় পর্বে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দূতাবাসে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে দূতাবাসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইয়াঙ্গুনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পড়েন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। আলোচনা সভায় ইয়াঙ্গুনপ্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। তাঁরা ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ ও দিবসটির তাৎপর্যের ওপর আলোকপাত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অবদান তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী শিশু-কিশোরের উপস্থিতি সবাইকে আনন্দিত করে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস সম্প্রতি ইয়াঙ্গুনে একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়াসের অংশ হিসেবে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। বাংলা ভাষার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাজানো স্টলটি এবং দেশি পোশাকে সুসজ্জিত প্রবাসী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সবার আগ্রহ সঞ্চার করতে সক্ষম হয়।