ভালো থাকুক ভালোবাসাগুলো
ভালোবাসার সপ্তাহ চলছে। ৭ ফেব্রুয়ারি রোজ ডে দিয়ে শুরু। এরপর ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে প্রপোজ ডে, ৯ তারিখে চকলেট ডে, ১০ তারিখে টেডি ডে, ১১ তারিখে প্রমিস ডে, ১২ তারিখে হাগ ডে, ১৩ তারিখে কিস ডে এবং সবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে।
খুব সুন্দর করে একেকটি দিনের নামকরণ করা হয়েছে। অনেকেই বলেন, বছরে প্রতিটি দিনই তো ভালোবাসার। বিশেষ এক দিন কেন ভালোবাসা জানাতে হবে? কেন প্রতিজ্ঞা করার জন্য, ফুল বা চকলেট দেওয়ার জন্য শুধু একটা দিনকেই বাছতে হবে? তাঁরা ভুল বলেন, তা নয়। নিশ্চয়ই এগুলো বছরের যেকোনো সময় করা যায়, অনুভূতি প্রকাশের কোনো নির্দিষ্ট দিন বা সময় হয় না। তারপরও বিশ্বব্যাপী যদি বিশেষ কিছুদিনকে নির্ধারিত করা হয় উদ্যাপন করার জন্য, তাতে ক্ষতি কী?
পৃথিবীতে বহু মানুষ আছেন, যাঁরা আবেগ প্রকাশে পারদর্শী নন, হয়তো হৃদয়ে একসমুদ্র ভালোবাসা, কিন্তু স্বভাবে চাপা। এ বিশেষ দিনগুলো তাঁদের খুব কাজে আসে। তাঁরা মনের কথা পছন্দের মানুষটির সামনে মেলে ধরার সুযোগ পেয়ে যান। প্রতিবছর বহু প্রেমিকযুগলের বিয়ে হয় এই ভালোবাসা দিবসে। পরিণয়ের জন্য তাঁরা বেছে নেন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে। তাঁদের মনে আশা থাকে, ভালোবাসা দিবসের এই পবিত্র স্পর্শে তাঁদের প্রেমও চিরস্থায়ী হবে, চিরস্মরণীয় হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, বিয়ের তারিখ কি শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারিতে স্থির করলেই বিয়েটি স্মরণীয় হয়ে থাকে?
প্রতিটি মানুষ ভালোবাসার স্বপ্ন দেখে, নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে মনে মনে একটি অসম্ভব সুন্দর জীবনের ছবি আঁকে। আর সে কারণেই তীব্র আবেগ ও আকর্ষণে বারবার সেই বিশেষ একজনের কাছে ছুটে যায় সে...অন্তরের সবটুকু আকুলতা, ব্যাকুলতা নিয়ে তার সঙ্গে নিবিড়ভাবে নিজেকে জড়াতে চায় সে। একহৃদয় প্রেম ঢেলে দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো কিছুর বিনিময়ে শুধু তাকেই চাওয়া এবং অবশেষে অনেক সাধনার পর তাকে একান্ত নিজের করে পাওয়া—এগুলোই থাকে ভালোবাসা দিবসে প্রতিটি প্রেমিক–প্রেমিকার লক্ষ্য।
আমরা বলি, যাক, সম্পর্ক পরিণতি পেল। প্রেমের জয় হলো। তা–ও আবার ভালোবাসা দিবসে। বাহ, এর চেয়ে সুন্দর আর কি হতে পারে?
কিন্তু সত্যি কি তা–ই? জয় করে ফেলাই কি সবকিছুর শেষ? জয়ের মধ্যেই কি আছে সব সার্থকতা?
ছোট শিশুরাও তো অনেক শখের জিনিসের জন্য বায়না ধরে, অস্থির হয়, চোখের পানি ফেলে, যা তাদের মনকে প্রলুব্ধ করে, তা হাতের মুঠোয় পেতে চায় এবং পাওয়ার জন্য আকুল হয়। কিন্তু তারপর? পেয়ে যাওয়ার পর কতক্ষণ থাকে সেই পছন্দ? একসময় ঘরের এক কোনায় অবহেলায় ফেলে রাখে। পাওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত জিনিস অতি দ্রুত তার আকর্ষণ হারায়।
কিছু বড় মানুষও সারা জীবন এ রকম শিশুদের মতোই রয়ে যান। তাঁদের তো বোঝানো যায় না যে জিনিস পেয়ে গেলেই হয় না, যত্ন করতে জানতে হয়। অযত্নে, অবহেলায় সব জিনিস ঘুণে ধরে।
সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেও তা–ই। জয় করে ফেলাই সব নয়। যাকে জয় করেছি, তাকে ধরে রাখতে জানতে হয় ভালোবাসা দিয়ে, গভীরতা দিয়ে, সততা দিয়ে। পরম যতনে নিজের প্রিয় মানুষটিকে আজীবন আগলে রাখতে পারাই হলো একটি সম্পর্কের আদর্শ পরিণতি। সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে আসল সার্থকতা, ভালোবাসার সত্যিকার সফলতা।
ভালোবাসার সপ্তাহে বিয়ে বা প্রেমের পরিণতির স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে যদি আমরা প্রেমকে সারা জীবনের জন্য সত্যিকারের সফল করার স্বপ্ন দেখতে পারি, প্রিয় মানুষটিকে জিতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমৃত্যু তাকে যত্ন করার ইচ্ছা পোষণ করতে পারি, তাহলেই হতে পারে সত্যিকার অর্থে প্রেম ও ভালোবাসার জয়।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমার সব সময় মনে হয়, পৃথিবীতে কোথাও যেন ভালোবাসার অবমাননা না হয়, ভালোবাসার উদ্যাপনগুলো যেন এর মূল্য বুঝে পালিত হয়। এ আবেগের ব্যাপ্তিকাল যেন শুধু সাত দিনের উৎসব আর এক দিনের পরম প্রাপ্তি পর্যন্ত না হয়ে রয়। এর গভীরতা যেন আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করতে পারি।
কাছের ও দূরের সব ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়ের জন্য অনেক শুভকামনা। ভালোবাসার পবিত্র দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ুক সবার জীবনে। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে!
*লেখক: সারা বুশরা দ্যুতি, বেডফোর্ড, ইংল্যান্ড