ব্রাসিলিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী পালন
বৈশ্বিক করোনা মহামারি আর ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পরিমিত পরিসরে ব্রাসিলিয়ায় পালিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী। গত বছরের মতো এবারও ব্রাসিলিয়ার কয়েকটি স্থানীয় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে জাতীয় শোক দিবস উদ্যাপনের পরিকল্পনা থাকলেও ব্রাজিলের কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহ অবস্থার কারণে সীমিত পরিসরে এবারের জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করা হয়। এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারবর্গের উপস্থিতিতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে এবারের জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।
সকাল দশটায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে সূচিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদত বরণকারী সকলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দূতাবাস পরিবারের সকলকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে দূতাবাস পরিবারের শিশু-কিশোরেরা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক’ চিত্রাঙ্কন ও রচনা লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
জাতীয় শোক দিবসের এ কর্মসূচিতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, ভাষা শহীদ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের ক্রম অগ্রসরমাণ আর্থসামাজিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নির্মিত তিনটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে সঠিক ভাবে জানতে হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কেও পড়াশোনা ও গবেষণা করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত আরও উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুকে সঠিক ভাবে জানতে হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কেও পড়াশোনা ও গবেষণা করতে হবে। রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে যে কোনো অপপ্রচার ও তথ্য বিকৃতির বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র কয়েকজন বিপথগামী সৈনিকের কাজ নয় বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত জুলফিকার তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রসরমাণ আর্থসামাজিক উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আরও বেশি নিবেদিত হয়ে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ারও আহ্বান জানান।বিজ্ঞপ্তি