ব্রাজিলে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির উদ্যোগ
লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতি ব্রাজিলে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষ ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২১ সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল ১৬ থেকে ২২ নভেম্বর ব্রাজিল সফর করে।
সফরে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ব্রাজিলে ওষুধপণ্যের রেজিস্ট্রেশন, রপ্তানি, বাজারজাতকরণসহ সার্বিক বিষয়ে ধারণা লাভ করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্য বাংলাদেশ প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশি ওষুধপণ্য ব্রাজিলে রপ্তানি করতে পারবে।
ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১১টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রতিনিধি সফরে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মো. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম শফিউজ্জামানও ছিলেন। হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস ছাড়াও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস, নুভিস্তা ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এমিকো ল্যাবরেটরিজ, ডেল্টা ফার্মা, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, বেক্সিমকো ফার্মা এবং এসিআই হেলথকেয়ারের কর্মকর্তারা প্রতিনিধিদলে ছিলেন।
বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ব্রাজিলের বর্তমান ওষুধপণ্যের বাজারের আয়তন প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রাজিল পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম ওষুধপণ্যের বাজার হবে বলে ওষুধশিল্পের গবেষকেরা ধারণা করছেন। ওই সময় ব্রাজিলের ওষুধপণ্যের বাজারের আয়তন ৩৯ থেকে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্রাজিল প্রতিবছর প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের ওষুধপণ্য আমদানি করে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ ও ভারত থেকে বর্তমানে ব্রাজিল ওষুধপণ্য আমদানি করে।
তুরস্কে দায়িত্ব পালনকালে এ বিষয়ে সফল অভিজ্ঞতার আলোকে এবারও ব্রাজিলে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিনিধিদলের সফরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। সফরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ব্রাসিলিয়াতে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ব্রাজিল সরকার বাধ্যতামূলকভাবে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে এবং সে কারণে ব্রাজিলে ওষুধপণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতাও ব্রাজিলের সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ব্রাজিল সরকার বর্তমানে এ খাতে প্রতিযোগিতা উৎসাহিত করছে এবং এ কারণে তারা বাংলাদেশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। বর্তমান সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত মানের ওষুধপণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের সহযোগিতা কামনা করেন। ব্রাজিলের বাজারে প্রবেশের বিষয়ে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
ব্রাসিলিয়াতে ব্রাজিলের ওষুধপণ্যের রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের (ANVISA) সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সফল আলোচনা হয়। ওষুধপণ্য রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে ব্রাজিলের বিধিবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। ব্রাজিল সরকার সাম্প্রতিককালে এ–সংক্রান্ত বিধিবিধান আধুনিকীকরণ ও আন্তর্জাতিক বিধিসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার ফলে বাংলাদেশি ওষুধপণ্য কোম্পানিগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে বাংলাদেশের ওষুধপণ ব্রাজিলে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে বলে আলোচনায় উঠে আসে। এ ব্যাপারে ANVISA কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের ওষুধপণ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ব্রাজিলের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের বাজার, ব্যবসাপদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা লাভের জন্য তিনটি ফার্মাসিউটিক্যাল বাণিজ্যিক সংগঠনের (SINDUSFARMA, ABIQUIFI, ABIMO) সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় দেশটির বাণিজ্যনগরী সাও-পাওলোতে।
এ সফরে প্রতিনিধিদলের সব সদস্যই ব্রাজিলে ওষুধপণ্যের রেজিস্ট্রেশন, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি সার্বিক বিষয়ে ধারণা লাভ করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্য বাংলাদেশ প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশি ওষুধপণ্য ব্রাজিলে রপ্তানি করতে পারবে।