বোন ছাড়া ভাইদের জীবন অসম্পূর্ণ

আমরা তিন ভাই। কোনো বোন নেই। তাই ছোটবেলায় মনে মনে খুশি হতাম এই ভেবে, আমার বাবা–মাকে মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে ফতুর হতে হবে না। পাশাপাশি অবশ্য অন্য একটা ব্যাপারও ঘটত। সেটা হচ্ছে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আমার সমবয়সী কোনো মেয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলে আমরা খুবই লজ্জা পেতাম। এমনকি স্কুলে যাওয়া আসার পথে ঘাড়টা এমনভাবে কুজো করে হাঁটতাম যেন আশপাশে দিয়ে কোনো মেয়ে গেলে দেখা না যায়। আর স্কুলে রোল নম্বর বরাবরই প্রথম দিকে থাকাতে মেয়েরা একটু আধটু কথা বলার উৎসাহ দেখালেও আমি লজ্জায় তাদের সঙ্গে কথা বলতাম না। যদি কোনো প্রয়োজনে কথা বলতে হতো তাহলে সেটাও গলায় আটকে যেত আর সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যেত। তাই যত বড় হতে থাকলাম ততই বোনের প্রয়োজন বেশি বেশি অনুভূত হতে লাগল। এমনকি আমি মাঝেমধ্যে মাকে জিজ্ঞেস করেই বসতাম, আমাদের বোন নেই কেন? মা হাসতে হাসতে আমার ছোট ভাইকে দেখিয়ে দিয়ে বলতেন, ও তোদের বোন। আমি তখন বুঝতাম বোনের আশায় আমাদের মা–বাবা কেন আরও বেশি সন্তান নেননি। এভাবে আমরা তিন ভাই একমাত্রিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে শুরু করলাম।
স্কুল–কলেজের সীমানা পেরিয়ে একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম। কিন্তু মেয়েদের প্রতি ভীতিটা তখনো কাটেনি। সেটা কেটেছিল আমার বান্ধবী জিনিয়ার সংস্পর্শে। একসময় পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করলাম। এরপর কাকতালীয়ভাবে পরিচয় হলো বোন তন্বীর সঙ্গে। ঠিক কীভাবে পরিচয় হয়েছিল সেটা আর এখন আমার মনে নেই। কিন্তু সে প্রকৃতই আমার বোন হয়ে গেল কিছুদিনের মধ্যে। ছেলেদের সাধারণত মেয়েদের সঙ্গে পরিচয় হলে শুরুতে সেটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলেও বেশির ভাগ সময় সেটা প্রেমের সম্পর্কে মোড় নেয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তারা দিনে দিনে পাকাপোক্তভাবে আমার বোনের আসন নিয়ে নেয়। তাই তন্বীও একসময় আমার বোন কাম অভিভাবকের আসনে আবির্ভূত হলো। তন্বী আমাকে দাদা ডাকে। ওদের বাড়ি আমাদের পাশের জেলা ঝিনাইদহে। তিন বোনের সবচেয়ে ছোটজন সে। অতি আদরের মেয়ে। তাই আমার কাছেও সময়ে অসময়ে বিভিন্ন আবদার করত। আমি বাইরে রাগ দেখালেও মনে মনে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করতাম, এমন একটা বোন আমার আছে সেটা ভেবে।
একবার পয়লা বৈশাখে ঢাকায় বেড়াতে এসে বায়না ধরল, দাদা আমি তোমার সঙ্গে ঘুরব। আমি বললাম সেটাতো খুবই ভালো কথা। কারণ আমি ওই দিন পড়ে পড়ে ঘুমাই। তোর অছিলায় একটু ঘোরা হবে। কিন্তু জনগণ তোকে আমার সঙ্গে ঘুরতে দেখলে তাদের উর্বর মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে। আর তোর আর আমার গায়ের রং একেবারে বিপরীত। তাই ভাইবোনের সম্পর্কটা বোঝানো মুশকিল হয়ে যাবে। তন্বী বলল, যাই হোক তুমি আর আমিতো জানি আমাদের মধ্যে কী সম্পর্ক। আমি বললাম, ঠিক আছে। ওই দিন সকালে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে ওঠানোর দায়িত্ব তোর। তন্বী বলল, ঠিক আছে। এরপর পয়লা বৈশাখে আমরা রবীন্দ্র সরোবর থেকে শুরু করে সারা ধানমন্ডি চষে বেড়ালাম। খুব ভিড় দেখলেই সে আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। সে তার ভাইয়ের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তার হাত সর্বশক্তি দিয়ে ধরে আছে। সারা দিন ঘোরাঘুরি শেষ করে আমি ওকে ওর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার সময় বললাম, আমি আজ বুঝতে পারলাম মানুষের কেন বোন থাকা দরকার। তন্বী জিজ্ঞেস করল, কেন দাদা? আমি বললাম, বোন ছেলেদেরকে দায়িত্বশীল করে। বলেই আর দেরি না করে চোখের পানি লুকাতে লুকাতে নিজের বাসার দিকে পা বাড়ালাম।
আমি বিভিন্ন উপলক্ষে ঝিনাইদহে ওদের বাড়িও গিয়েছি। আমাকে ওর বাবা–মা নিজের ছেলের মতো আদর করতেন। তন্বীও আমার মাকে মা ডাকা শুরু করল। আমার মাও অনেক খুশি হলেন একজন মেয়ে পেয়ে। আমি নারিকেলের নাড়ু খুবই পছন্দ করতাম। তাই আমি বাড়ি এলেই মা নাড়ু বানাতেন। একবার ছুটিতে আমিও বাড়ি এসেছি। ওদিকে তন্বীও রাজশাহী থেকে ঝিনাইদহ এসেছে। ছুটি শেষে সে আবার রাজশাহীতে ফিরে যাবে। ওর বাস কুষ্টিয়ার ওপর দিয়েই যাবে।
সেদিন মা আমাকে এক বয়্যাম নাড়ু দিয়ে বললেন, তুই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বসে থাক, তন্বীর বাস যখন থামবে তখন ওকে দিয়ে দিস। আমি বললাম, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। বাস থামবে কিছুক্ষণের জন্য সময়টা ব্যয় হবে যাত্রী নামাতে আর ওঠাতে। আমি কীভাবে ওকে নাড়ুর বয়্যাম পৌঁছে দেব। মা তখন বললেন, তুই হেলপারকে দিয়ে দিবি। হেলপার তন্বীর কাছে পৌঁছে দেবে। আমি আগে থেকেই গিয়ে বাসস্ট্যান্ডে বসে থাকলাম। তন্বীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হলো কোন বাসে ওরা আসছে। কারণ খুলনা টু রাজশাহী রুটে বিআরটিসির বেশ কয়েকটা বাস চলে। নির্দিষ্ট বাস আসার পর আমি হেলপারের হাতে নাড়ুর বয়্যাম দিয়ে দিলাম। এইভাবেই আমার মা তন্বীকে মাত্র কয়েক দিনেই নিজের মেয়ের জায়গায় স্থান দিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তখন বুঝলাম মায়ের মনের কোণে একজন মেয়ের জন্য ঠিক কতটা স্নেহ জমা ছিল। তার আপন ছেলের সবচেয়ে পছন্দের খাবার মুহূর্তেই তার মেয়েকে দিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি।
এরপর আমার পরিচয় হয় আমার আরেক বোন জেনির সঙ্গে। জেনির সঙ্গে কীভাবে পরিচয় হয়েছিল সেটাও আজ আর পরিষ্কার মনে নেই। কিন্তু এখন ফেসবুকে ওর সঙ্গে আড্ডা খুব জমে। আমি বলি তুইই আমার আসল বোন। আমাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, অন্ততপক্ষে তোকে কারও কাছে বোন বলে পরিচয় দিলে আমাকে আলাদা করে আর ব্যাখ্যা দিতে হবে না। শুনে জেনি একইসঙ্গে মন খারাপ করত আবার খুশিও হতো। মন খারাপ করত কারণ আমি ওকে ঘুরিয়ে কালো বলেছি বলে আর খুশি হতো আমি ওকে আসল বোন বলেছি বলে। আমি বলতাম আমি তোকে কী নামে ডাকব? বুড়ি নামটা তোর কেমন লাগে। ও ছেলেমানুষি সুলভ সারল্য নিয়ে বলত, নামটা ঠিক আছে কিন্তু বুড়ি ব্যাপারটা বয়সকে মনে করিয়ে দেয় কিনা? আমি বললাম তাহলে ঠিক আছে, তোকেও শিশু বলে ডাকব। উল্লেখ্য, আমি তন্বীকেও শিশু বলে সম্বোধন করতাম। আসলে ভাইদের কাছে তাদের সব বোনের মর্যাদাই সমান। জেনির সঙ্গে পরিচয়ের পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। সে ওর মনের মানুষের কথা আমাকে বলত। ঝগড়া হলেও আমাকে বলত আর জিজ্ঞেস করত এখন কী করব। আমি বিজ্ঞ গুরুজনের মতো ওকে বিভিন্ন উপদেশ আদেশ দিতাম।
এরপর একদিন ওর মনের মানুষের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিল। পুরো নাম আরিফুজ্জামান খান। জেনি ডাকে আরি বলে। আমি কথা বলার সময় যত দূর সম্ভব বড়ভাই সুলভ ভাব গাম্ভীর্য বজায় রাখলাম। তখন ওরা বিয়ের আয়োজন করছে। আমাকে দুজন মিলেই দাওয়াত দিল। আমি মনে মনে খুবই খুশি হলাম বড় ভাই হিসেবে এতটা গুরুত্ব পেয়ে। আবার খারাপও লাগছিল যেতে পারব না বলে। আমি বললাম আসতে পারি আর না পারি, তোদের জন্য আমার দোয়া থাকবে সব সময়। এরপর ওরা সংসার শুরু করল। আমি আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য লালমাটিয়ার সেন্ট জনসে জীবনে প্রথমবারের মতো কোচিং শুরু করেছি। একদিন ক্লাসের বিরতিতে আমাকে একটা ছেলে এসে বলল, আপনি দাদা, তাই না? আমিতো খুবই অবাক। তারপর সে বলল আপনি জেনিকে চেনেন। আমি তখন ওকে চিনতে পারলাম। সে আমার বোনজামাই আরিফ ওরফে আরি। এরপর আরিফ বলল, দাঁড়ান আপনার বোনকে একটা চমক দিই। বলে ওর মোবাইল থেকে জেনিকে কল দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বলল কথা বলেন। আমি একবার কথা বলতেই, জেনি বলল দাদা তুমিও কোচিং করছ। এরপর অনেক কথাই হলো। ওরা দুজন মিলেই বাইরে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কোন ক্যাটাগরিতে আসবে সেটা নিয়ে একটু বিভ্রান্তি ছিল। অবশেষে ওরা দেশেই সেটেল হয়েছে। ওদের কোলজুড়ে এসেছে আমার ফুটফুটে ভাগনি। ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের নানা কর্মকাণ্ড দেখি আর লাভ দিয়ে যাই।
জীবনের পথ পরিক্রমায় এখন আমি অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। এখানেও আমার একজন যমজ বোন পেয়েছি। যমজ বোন বলার কারণ হচ্ছে আমাদের দুজনেরই এসএসসি ও এইচএসসি একই সালে। যদিও আমাদের পরিচয়ের শুরুটা একটু অন্যভাবে। একবার একটা দরকারে বিজয় দাদা ও রুপা বৌদি এবং তাদের পরিবার নিয়ে ফেসবুকে লিখলাম। তখন দাদা বললেন, ইয়াকুব ভাই আপনার বৌদিকেও ট্যাগ করেন। আমি বললাম বৌদিতো আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই। তিনি বললেন, ঠিক আছে তাহলে আমি আপনাকে ওর আইডির লিংক দিচ্ছি। আপনি অ্যাড করে নিয়েন। সেই থেকে শুরু। এই মানুষটা বাইরে অনেক চুপচাপ থাকার চেষ্টা করলেও আমি বুঝতাম তার মধ্যে স্বভাবজাত চঞ্চলতা আছে, যেটা তিনি অনেক কষ্টে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। নতুন কারও সঙ্গে পরিচয়ের পর আমি সব সময়ই এসএসসির ব্যাচ জিজ্ঞেস করি। বৌদিকেও আমি ওনার ব্যাচ জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলাম আমরা একই ব্যাচের। একই ব্যাচের মানুষ হলে গল্প করতে সুবিধা হয়। কারণ আমরা একই রকমের বিবর্তন দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। তাই একজন একটা কোনো কিছুর উল্লেখ করলে খুব সহজেই অন্যজন সেটা বুঝতে পারে।
আমি রুপা বৌদিকে বললাম, তাহলেতো আপনি আমার যমজ বোন, কারণ আমরা একই ব্যাচের। তিনি বললেন হবে হয়তোবা না হলে পাগলামির এতটা মিল থাকার কথা না। আমি বললাম আপনার কথায় যুক্তি আছে। এরপর থেকে আমরা দুই ভাইবোন মিলে বিভিন্ন রকমের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা করা শুরু করলাম। আমরা দুজন মিলে পরিকল্পনা করে সেটা ফাইনাল করে তারপর আমরা আমাদের পরিবারকে জানাই। এভাবে আমরা সিডনির বেশ কিছু বিখ্যাত সুন্দর জায়গা একসঙ্গে দেখে ফেললাম। আমার গিন্নি আর বিজয় দাদা দুজনই একটু রাশভারী ধরনের মানুষ। তাই কোথাও বেড়াতে গেলে বাচ্চাদের সঙ্গে পাগলামিতে মেতে উঠি আমরা দুই ভাইবোন। এতে বাচ্চারা যেমন একদিকে খুশি হয় আমরাও তেমনি আমাদের শৈশব কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলোতে ফিরে যাই। বৌদি পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়াতে কাকা বাবুর অনেক আদরে বাঁদর হয়েছিলেন। তিনি সেই গল্প বলেন আমাকে আর আমি বলি শৈশবের আমার সেই সব ভয়ংকর অভিযানের গল্প। কোথাও গেলে দাদা আর বৌদিকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দাঁড় করিয়ে ভাই হিসেবে ছবি তুলে দায়িত্ব পালন করি।
রুপাদির মেয়ে এলভিরাকে আমি মা বলে ডাকি আর ছেলে রেনোরকে বলি মাস্তান। একইভাবে তারাও আমার মেয়ে তাহিয়া আর ছেলে রায়ানকে মা বাবা বলে ডাকেন। বিশেষ করে তিন বছরের রায়ানের দুষ্টুমি দেখে বৌদি বলেন, এই না হলে আমার বাপ! আমি আর বৌদি মিলে আমাদের পারিবারিক দাওয়াতগুলোতে সবাইকে জ্বালিয়ে মারি। বিভিন্ন সামাজিক কাজেও আমরা দুই ভাইবোন মিলে একসঙ্গে হাত লাগাই। আমাদের দুজনের মনই খুব বেশি স্পর্শকাতর। মানুষের কষ্ট দেখলে এই মানুষটা শিশুর মতো কান্নাকাটি শুরু করেন দেখে আমি বুঝি তিনি সত্যিকার অর্থেই আমার যমজ বোন। ঢাকাতে বেড়াতে গেছেন। একজন কমবয়সী ছেলে এসে ভিক্ষা চেয়েছে। সেটা দেখে ওনার খুব মন খারাপ হয়েছে। আমাকে মেসেজ দিলেন ইয়াকুব ভাই আমি এই সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের জন্য কিছু করতে চাই। আমি জানি আপনিই শুধু আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। এতটাই মিল আমাদের ভাইবোনের মধ্যে।
অতি সম্প্রতি আমার গিন্নি চাকরি শুরু করেছে। বাসায় আমি একা মানুষ দুই বাচ্চা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি দেখে রুপাদি সব সময় মেসেজ দিয়ে সাহস জোগান। ভাইয়া এখন আপনাকে আরও শক্ত হতে হবে। এখন আপনার যত কষ্টই হোক ভাবিকে বলবেন, তুমি তোমার জব সামলাও আমি বাসা সামলাচ্ছি। আর আমরাও আপনাদের এই পরিস্থিতি পার করে এসেছি তাই কোনো কিছু লাগলে আপনার এই বোনকে জানাতে সংকোচ করবেন না। ওনার কথা শুনি আর মনে মনে চলার শক্তি ফিরে পাই।
আমি খুবই সৌভাগ্যবান, সৃষ্টিকর্তা আমাকে রক্ত সম্পর্কের একজন বোন না দিয়ে তন্বী, জেনি আর রুপাদির মতো বোন পাঠিয়েছেন। আমার বোনেরা হয়তো আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারেন না কিন্তু বিপদে যে মানসিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন সেটা অমূল্য। মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়ার সবচেয়ে বড় সার্থকতায় বোধ হয় এটা যে, একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ অনায়াসেই অন্য একজন মানুষের শুভাকাঙ্ক্ষীতে পরিণত হয়। আর এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে যেহেতু উভয় পক্ষেরই কোনো প্রকার স্বার্থ নিহিত থাকে না তাই এই সম্পর্কগুলো হয় জলের মতো স্বচ্ছ। আমার দাদির আপন কোনো ভাই ছিল না। তাই তিনি যেখানেই বেড়াতে যেতেন একজন করে ভাই পাতিয়ে নিয়ে আসতেন। এমন একজন ভাইকে আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার দাদি আর সেই ভদ্রলোক এমনভাবে গল্প করছিলেন, যেন তারা ছোটবেলা থেকেই একে অপরকে চেনেন। একেবারে অপরিচিত মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা অবচেতনভাবে হয়তো আমি দাদির কাছ থেকে পেয়েছি।
সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে দুই প্রকারের মানুষ পাঠিয়েছেন—ছেলে আর মেয়ে। এই দুই প্রজাতির মানুষের মধ্যে অনেক রকমের সম্পর্ক বিদ্যমান। মেয়ে কখনো মা, আবার কখনো বোন, আবার কখনো কারও প্রেমিকা বা স্ত্রী আবার সেই মেয়েই কারও বন্ধু বা বান্ধবী। কিন্তু পৃথিবীতে এখনো কিছু মানুষ আছেন বিশেষ করে বাঙালিদের মধ্যে যারা ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সম্পর্কটাকে এখনো প্রেমের বা বিয়ের বাইরে কল্পনা করতে পারেন না। এটা আসলেই খুবই দুঃখজনক বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মতো একটা উদার মানসিকতার দেশে এসেও তারা এই মনোভাব থেকে নিজেদের এখন পর্যন্ত বের করে আনতে পারেননি। তারা কখনো ভাবেন না, একজন ছেলে সে একই সঙ্গে কারও প্রেমিকা, স্বামী বা বাবা আবার কারও বন্ধু। তাই সে যদি বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব বা কোনো একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যায় সেটা সব সময়ই কেন প্রেমের হতে হবে। কারণ দুজন মানুষেরই আলাদা দুটো দুনিয়া আছে, সেইসঙ্গে আছে দায়িত্বও।
...
মো. ইয়াকুব আলী: মিন্টো, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>