বীরপ্রতীক সিতারা বেগম ও মুক্তিযুদ্ধ

কিশোরগঞ্জ থাকার সময় মিলিটারি আসার মাত্র দুদিন আগে শহরের ১০-১২ মাইল উত্তরে হোসেনপুর গ্রামে তাঁরা পালিয়ে গেলেন। শহরে লিফলেট ছাড়া হলো এ পরিবারকে ধরিয়ে দিলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। বাবাকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ হাজার, আর মেয়েকে ধরিয়ে দিলে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য যে দুই নারী ‘বীরপ্রতীক’ খেতাব পেয়েছেন, তাঁদের একজন ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম এবং অন্যজন তারামন বিবি। কথা হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা সেই বীর নারীর সঙ্গে। বর্তমানে তিনি আছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। তাঁর স্বামী ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. আবিদুর রহমান, যিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা।

প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে লেফটেন্যান্ট বীরপ্রতীক সিতারা বেগম জানালেন, কীভাবে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য কাজ শুরু করেন।

১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম সিতারা বেগমের। বাবা মোহাম্মদ ইসরাইল এবং মা হাকিমুন নেসা। বৈবাহিক সূত্রে তিনি এখন সিতারা রহমান নামে পরিচিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৯৭০ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সিতারা। স্কুলজীবনে তিনি গার্লস গাইডের দলনেতা ছিলেন। তুখোড় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে শিক্ষাঙ্গনে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। শিক্ষাজীবনে তিনি ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়নসহ বহু খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে প্রচুর সুনাম ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

চিকিৎসক হওয়ার পর ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। এ সময় তাঁর বড় ভাই এ টি এম হায়দারও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন সিতারা। সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে এই বীরপ্রতীক বলেন, ‘১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাক সেনারা যখন বাঙালিদের ওপর হামলা শুরু করল, তখন আমি ছুটিতে বাড়িতে ছিলাম। ছুটিতে আমি কিশোরগঞ্জে আব্বা-আম্মার কাছে আসি। তখন হায়দার ভাই ঈদের ছুটিতে এসেছিলেন। ভাইয়া ছুটি শেষ করে চলে গেলেন। তখনো আমার ছুটি শেষ হয়নি। তাই আমি বাসায় ছিলাম। মার্চ মাসে হত্যাকাণ্ড শুরুর পর কুমিল্লা কমবাইন্ড মেডিকেল হসপিটাল (সিএমএইচ) থেকে তিন-চারটা টেলিগ্রাম আসতে লাগল। আব্বা জয়েন করতে বাধা দিলেন। আব্বা লিখলেন, “সিতারা অসুস্থ।” তারপরও কাজে যোগ দিতে বলা হলে আব্বা আবারও টেলিগ্রাম করে জানান, আমার পা ভেঙে গেছে। তখন কুমিল্লা সিএমএইচ থেকে বলা হলো, আমি যেন ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে থেকে চিকিৎসা সেবা নিই।’

সিতারা বলে চলেন, ‘এরই মধ্যে একদিন ভাইয়া তৎকালীন ক্যাপ্টেন নাসিম ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ মুসালিয়া সেতু উড়িয়ে দিলেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে ভাইয়া আমাদের বাসায় এলেন। অন্যদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি বৈঠক করেন। ভাইয়া এবং অন্য সবাই চলে যাওয়ার পরদিনই ওই এলাকায় পাক সেনাবাহিনীর বিমান উড়তে থাকল। কিছু কিছু জায়গায় তারা বোমা ফেলল। আমাদের বুঝতে বাকি রইল না যে, আমরা আর আর আমাদের বাসায় নিরাপদ নই। আমরা ভাইবোন যেহেতু সেনাবাহিনীতে চাকরি করতাম, তাই আমাদের বাসার ঠিকানা তো পাক সেনাদের কাছে রয়েছেই। ফলে তারা আমাদের ধরতে আসতে পারে। তাই আমরা বড়বাগ গ্রামে গিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় কয়েক দিন থাকলাম।’

কিশোরগঞ্জে রেইড হলো। আবারও পালাতে হলো সিতারাদের। নানা বাড়ি হোসেনপুর দরগা বাড়িতে সপ্তাহখানেক থাকার পর জানা গেল সেখানেও হামলা হতে পারে। ফলে সেখান থেকেও পালাতে হবে। এর পর তাঁরা গেলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সাহেবের বাড়িতে। এরই মধ্যে ভাই মেজর হায়দারের কাছ থেকে চিঠি আসে—বাঁচতে হলে ভারতে পালাতে হবে।

কীভাবে আগরতলা পাড়ি জমান সিতারা ও তাঁর পরিবার, তা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ভাইয়া দুটি ছেলের হাতে পেনসিল দিয়ে লেখা একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। বিশেষ করে আমাকে নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন—সেটাও উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তাঁদের হাতে আমার জন্য একটা ছোট পিস্তলও পাঠিয়েছিলেন। নির্দেশ ছিল, যদি পথে কোথাও পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়ি, তাহলে যেন আমি সেই পিস্তল কাজে লাগাই। নিজেকে বাঁচাতে না পারি আত্মহত্যা তো করতে পারব। আমি ভাইয়ার পাঠানো সেই ছোট্ট পিস্তলটা ব্লাউজের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতাম।’

সিতারা বলেন, ‘পরদিন আমরা রওনা করলাম। শাড়ি পরা খালি পায়ে আমি, আব্বা, আম্মা অন্যদের সঙ্গে রিকশায় উঠলাম। গুজাদিয়ার ঘাটে এসে নৌকায় উঠলাম। নৌকায় সাত দিন, সাত রাত কাটিয়ে আমরা সিলেট সীমান্ত দিয়ে টেকেরঘাট পৌঁছাই। সেখানে পৌঁছার পর দেখি ভাইয়া এসে হাজির। আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু তারপরও কীভাবে ভাইয়া আমাদের খবর জানলেন, সেটা এখনো একটা রহস্য বলে মনে হয়। এর মধ্যে ভাইয়া এক ভারতীয় মেজরকে বলে রেখেছিলেন যে, তাঁর পরিবারকে নিয়ে যাবে ও একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে। সে অনুসারে সেই মেজর একটি পিকআপ ভ্যান রেখেছিল আমাদের জন্য। কিন্তু পেছনে দেখি সিমেন্টের বস্তা ভর্তি। এটা দেখে প্রথমে আশ্চর্য হলেও পরে বুঝলাম, খুব উঁচু-উঁচু বোল্ডারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটি যেন খুব বেশি না লাফায়, সে জন্য ইচ্ছা করেই সিমেন্টের বস্তা রাখা হয়েছিল। সেই পিকআপে করে আমরা বালাটে পৌঁছাই।’

মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু বীর ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ত্যাগ ও সংগ্রামের এক সুবিশাল মহাকাব্য। এ মহাকাব্যের পাতায় পাতায় রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করার বীরগাথা। সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন স্বাধীনতাকামী জনগণের এক বিশাল অংশ নারীরা। তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা সেবা, যত্ন ও স্নেহে সেই প্রতিকূল সময়ে অসুস্থ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন।

আগরতলার মেলাঘরে ব্যবসায়ী হাবুল ব্যানার্জির দেওয়া খেতের জমিতে ডা. জাফর উল্লাহর ও দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের পরিকল্পনা থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাসপাতাল, যা ছিল মূলত একটু বাঁশের ঘর। সিতারা বেগম জানান, হাসপাতালটিতে চার-পাঁচজন মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্র কর্মরত ছিলেন। লন্ডন থেকে ডা. মবিন, ডা. জাফরুল্লাহ, ডা. কিরণ সরকার দেবনাথ, ডা. ফারুক মাহমুদ, ডা. নাজিমুদ্দিন, ডা. আকতার, ডা. মুর্শেদ প্রমুখ এ হাসপাতালে কাজ করেছেন। ১০/১২ জন স্বেচ্ছাসেবী সেনাবাহিনী থেকে এসেছিলেন। সুবেদার পদের ওপরের কেউ ছিলেন না। কোনো ভারতীয় চিকিৎসক এ হাসপাতালে নিয়মিতভাবে থাকতেন না। প্রায়ই রোগীদের ওষুধের জন্য আগরতলা ও উদয়পুরে যেতে হতো ডা. সিতারা বেগমকে। উদয়পুরের ডিসি মি. ব্যানার্জি, আগরতলার এডুকেশন বোর্ডের পরিচালক ড. চ্যাটার্জি মজুমদার ও ডা. চক্রবর্তী এ হাসপাতালকে প্রচুর সহযোগিতা করেছেন।

সিতারা বেগমের কাছ থেকে জানা গেল ওই হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার ছিল। প্লাস্টিক দিয়ে অপারেশন থিয়েটারের মেঝে সম্পূর্ণ ঢাকা থাকত। হাসপাতালে শুধু বাঙালি রোগী, আহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধারাই চিকিৎসার জন্য আসতেন, তা নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও বাংলাদেশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতেন। জেনারেল রব হেলিকপ্টারে গুলিবিদ্ধ হলে তিনি বাংলাদেশ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেই বিখ্যাত বাংলাদেশ হাসপাতালের একমাত্র নারী চিকিৎসক ছিলেন সিতারা বেগম। তিনিসহ অন্যরা গড়ে তুলেছিলেন অসাধারণ এক সেবাকেন্দ্র। আগরতলার বাংলাদেশ হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা বীরপ্রতীক সিতারা বেগমের সংগ্রামী ও স্নেহপূর্ণ জীবনের গল্প অনেক। তিনি জানান, সে সময় বেশির ভাগ রোগীই ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী, যাদের অধিকাংশই হয় ম্যালেরিয়া বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অথবা গুলিবিদ্ধ, আহত। এখনো তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, একবার হাসপাতাল ক্যাম্পের কেরোসিন শেষ হয়ে গেলে আগরতলার ব্যানার্জি বাড়ি থেকে ১০ লিটার কেরোসিন এনেছিলেন।

দুই নম্বর সেক্টরে আশ্রয় নেওয়া মেডিকেলে অধ্যয়নরত কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে অল্প কিছু শয্যা নিয়ে এ হাসপাতাল গড়ে উঠে। পরে তা হয়ে ওঠে প্রায় ৪০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। এ হাসপাতাল হয়ে ওঠে রণক্ষেত্রে আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক আশ্রয়ের ঠিকানা। প্রথম দিকে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হলেও আগস্টের শেষে যখন ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম সিও হিসেবে এর দায়িত্ব নেন, তখন থেকে তাঁর আন্তরিক পরিশ্রম, আত্মনিবেদন ও পরিকল্পনায় হাসপাতালটি এক অনন্য হাসপাতালে উন্নীত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় দিনের পর দিন এ হাসপাতালে সিতারার কাজ ছিল অসাধ্যসাধন করে যাওয়া। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা গুলিবিদ্ধ, স্প্লিন্টারের আঘাতে ঝাঁজরা, গুরুতর জখম মুক্তিযোদ্ধাদের সারিয়ে তুলতে হতো খুব সামান্য ও সাধারণ ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে।

হাসপাতালের কাঠামোগত বর্ণনা দিতে গিয়ে সিতারা বেগম বলেন, ‘রোগীর জন্য প্রতিটি বিছানা তৈরি হতো বাঁশের চারটি খুঁটির ওপর মাচা বেঁধে। প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা ঘরে অস্ত্রোপচার করা হতো। কেবল দিনের বেলাতেই অস্ত্রোপচার হতো। কখনো কখনো রাতে কোনো জরুরি অপারেশনের দরকার হলে ব্যবহার করা হতো হারিকেন কিংবা টর্চলাইট। এমন কাঠামো আর ব্যবস্থা নিয়েও এ হাসপাতাল যুদ্ধের সময়কার সফলতম হাসপাতালগুলোর একটি হিসেবে গণ্য।’

সিতারা বেগমের রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিপুণ পরিচালনার ফলে বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধরত ভারতীয় সেনাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়। সিতারা বেগমের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম এ টি এম হায়দার ও ছোট ভাই এ টি এম সাফদার ছিলেন রণাঙ্গনে। ১৬ ডিসেম্বর রাতে বিশ্রামগঞ্জে বাংলাদেশ হাসপাতালে রেডিওর মাধ্যমে ডা. সিতারা বেগম ও তাঁর সহকর্মীরা ঢাকা মুক্ত হওয়ার সংবাদ পান। তারপর তিনি তাঁর কিছু অসুস্থ রোগীকে কুমিল্লা সিএমএইচে ভর্তি করান। এর পর কুমিল্লা লেডিস কলেজ হোস্টেলে থাকতে হয় সপ্তাহখানেক। কিছু রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাঁদের ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করাতে ঢাকায় চলে আসেন।

মুক্তিযুদ্ধে এ মহীয়সী নারীর সাহসী আবদানের জন্য তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭২ সালে জেনারেল ওসমানী চিঠি দিয়ে তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব পাওয়ার কথা জানান। তারপর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার পান্ডে ঢাকায় এলে তাঁকে ‘সাহসী নারী’ আখ্যা দিয়ে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম ১৯৭২ সালের অক্টোবরে ক্যাপ্টেন আবিদুর রহমানকে বিয়ে করেন। ক্যাপ্টেন আবিদ একজন চিকিৎসক ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জেনারেল শফিউল্লাহর অধীনে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৭৩ সালে অক্টোবর মাসে স্বামীসহ এই বীর প্রতীক যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য পাড়ি জমান। বর্তমানে এই দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।

সিতারা বেগম কথায় কথায় সাহসী ভাই হারানো কথা তুলে ধরেন। একাত্তরে সেনাবাহিনীর যে বীর বাঙালি সদস্যেরা মহান মুক্তিযুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ ও মুক্তিবাহিনীর ভিত্তি কাঠামো তৈরি করেছিলেন, লড়েছিলেন বীরদর্পে, তাঁদের অন্যতম একজন তৎকালীন মেজর ও পরবর্তী সময়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীরউত্তম। বাঙালিদের মধ্যে একমাত্র এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এ কে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন ১৬ ডিসেম্বরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ৬ নভেম্বর দিবাগত ভোররাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীকে। পাকিস্তানি সেনারা যাকে স্পর্শ করতে পারেনি, তিনি এ দেশের কতিপয় সেনার হাতে নিহত হন। তাঁর একমাত্র ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম সাফদার কিশোরগঞ্জ শহরের খড়মপট্টিতে পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর ভাইবোনের অবদান জাতি মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করলে পরিবারের দুঃখটা থাকত না—বলে আক্ষেপ করেন বীর প্রতীক সিতারা বেগম।