বিস্ময় জাগানো হলদে শিলা

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের একটি গিজারের পাশে সপরিবারে লেখিকা
ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের একটি গিজারের পাশে সপরিবারে লেখিকা

ইয়েলো স্টোনের নাম দিলাম আমি হলদে শিলা। প্রকৃতির অপার বিস্ময় দেখে এলাম এই হলদে শিলায়। ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক পৃথিবীর প্রথম ন্যাশনাল পার্ক। এই হলদে শিলাতে হলুদ রঙের সমারোহ। এখানে আছে একটা আগ্নেয়গিরি। সাধারণ আগ্নেয়গিরি নয়, অ্যাকটিভ সুপার ভলকানো। অতি উচ্চবংশ, সর্বদা ক্রিয়াশীল। আর তিনি ছড়িয়ে আছেন হলদে শিলার বিশাল এলাকা জুড়ে। হলদে শিলার সর্বত্র তার গর্জন, আস্ফালন। এই ভয়ংকর মৃত্যু দূতকে দেখতেও এত ভালো লাগবে সত্যি আগে বুঝিনি।

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে। এগুলো হলো মন্টানা, আইডাহো আর ইউমিং। আমি কানাডার যে অংশে থাকি সেখান থেকে মন্টানা সীমান্ত গাড়িতে ড্রাইভ করে গেলে তিন ঘণ্টা। ইয়েলোস্টোন পর্যন্ত যেতে আট ঘণ্টা। মাইলের পর মাইল লোকালয় চোখে পড়ে না। হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়েও এবং দু-একটা ছোট শহরে বিশ্রাম নিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে আরও অনেক বেশি সময়ই লেগে গেল।
রাতে হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন হলদে শিলা অভিযানে বের হয়েছিলাম। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আর ইউটিউব দেখে যে ভয়টা জেঁকে বসেছিল তা এখন শরীরের কাঁপুনিতে প্রকাশ পেল। আমরা একটা সুপার আগ্নেয়গিরির ওপর দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি, হেঁটে বেড়াচ্ছি। যেটা তার ধ্বংস ক্ষমতা পৃথিবীকে দেখিয়েছে কয়েকবার। শেষবার হলদে শিলার এই সুপার ভলকানো তার গরম লাভা আর বিষাক্ত ধোয়ায় পৃথিবীকে ঢেকে দিয়েছিল ছয় লাখ ৪০ হাজার বছর আগে। এরপরও হয়েছে দু-একটা ছোটখাটো অগ্ন্যুৎপাত। হলদে শিলার মধ্যভাগে ৩০ মাইল বাই ৪৫ মাইল ক্যালডেরা তৈরি হয়েছে। সাধারণ ভাষায় ক্যালডেরা হচ্ছে অগ্ন্যুৎপাতের পরে যে অংশ দিয়ে লাভা বের হয়েছিল সে এলাকা ভেঙে ভূগর্ভে দেবে যাওয়া। কিন্তু যে আগুন আর তাপ (ম্যাগমাটিক হিট) এ অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয়েছিল তা এ ক্যালডেরার মধ্যে এখনো সক্রিয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, হলদে শিলায় একটার ওপর দিয়ে আর একটা এ রকম ভাবে কাছাকাছি চারটা ক্যালডেরা আছে যা বড় বড় কয়েকটা অগ্ন্যুৎপাতের ফল। পৃথিবীতে যে অল্প কয়েকটা সুপার ভলকানো আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এই ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি তার ক্ষমতা প্রকাশ করে চলেছে বিস্তীর্ণ পার্কের পুরোটা জুড়ে। বিভিন্ন গিজার (উষ্ণ প্রস্রবণ), হট স্প্রিং, ফিউমারোল আর মাডপট হচ্ছে তার শক্তির ক্ষুদ্র নমুনা। প্রতিবছর দর্শনার্থীরা এগুলো দেখতেই ভিড় করেন।
আমরা হলদে শিলা পার্কে প্রবেশ করেছিলাম এর পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে। কিছু দূর যাওয়ার পর নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রেখে আমরা গিয়েছিলাম লোয়ার গিজার বেসিন দেখতে। চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো গিজার, হট স্প্রিং, মাডপট। তার মধ্য দিয়ে সুন্দর করে কাঠ দিয়ে বানানো হাঁটা পথ। কিছু কিছু জায়গায় একটু চওড়া যাতে মানুষ দাঁড়িয়ে দেখতে পারে। এই নির্দিষ্ট পথের নিচে নামা নিষেধ কারণ ওখানকার মাটি স্থির নয়, পানি প্রচণ্ড গরম। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বেশির ভাগ গিজারের পানি সুপার হিটেড। ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তার তাপমাত্রা। আমাকে ভীষণ অবাক করেছে, কারা, কীভাবে এই ভয়ংকর জায়গার ওপর বিশাল এলাকা জুড়ে কাঠের কাঠামো তৈরি করেছে মানুষকে নিরাপদে দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এই লোয়ার গিজার বেসিনে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে আছে আগ্নেয়গিরির সবগুলো বৈশিষ্ট্য। প্রথমেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম হট স্প্রিংয়ের সামনে।
হট স্প্রিং দেখতে পুকুরের মতো। পাড় দিয়ে উপচে পড়ছে হালকা পানির স্রোত। পৃথিবীর উপরিভাগের পানি যখন মাটির গভীরে চুঁইয়ে আগ্নেয়গিরির অত্যন্ত উত্তপ্ত ম্যাগমার (গলিত পাথর) সংস্পর্শে আসে তখন তা প্রচণ্ড গরম পানি আকারে ওপরে উঠে আসে। এসব পুকুরের ওপরে সারাক্ষণ বাষ্প দেখা যায়। ওপরে উঠে আসার পথ প্রশস্ত হয় বলে এর তাপ ও চাপ কমে আসে। সে জন্য এগুলো ধীরে ধীরে বাষ্প আকারে পানি বের করে দেয়। এসব পুকুরের গাঢ় নীল পানি প্রমাণ করে এর গভীরতা। এর চারপাশে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করেছে বিভিন্ন রং। মনে হয় যেন পুকুরের পাড় জুড়ে কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে লাল, হলুদ, সোনালি রং করে দিয়েছে। অনিন্দ্য সুন্দর এই দৃশ্য দেখে এর ভয়াল ক্ষমতা টের পাওয়ার উপায় নেই। এর রংকে আগুনের শিখার সঙ্গেও তুলনা করা যায়। এসব হট স্প্রিং হাজার হাজার গ্যালন পানি পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়।
মাড পট সবচেয়ে ভয় জাগায় মনে। কাদামাটি বগ বগ করে ফুটছে আর মাঝে মাঝে ছিটকে উঠে আসছে ওপরে। এ এলাকাগুলো প্রচণ্ড অ্যাসিড। পানির পরিমাণ খুবই কম থাকে এখানে। পৃথিবীর গভীর থেকে উঠে আসা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে কিছু অণুজীব শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে এবং এই পচা ডিমের গন্ধযুক্ত গ্যাসকে পরিবর্তন করে ফেলে সালফিউরিক অ্যাসিড গ্যাসে। এই গ্যাস পাথরকে ভেঙে কাদামাটি বানিয়ে ফেলে। বিভিন্ন গ্যাস এই কাদামাটির ভেতর দিয়ে পৃথিবীর ওপর বেরিয়ে আসতে থাকে যা ওখানে তৈরি করে প্রচণ্ড বুদ্‌বুদ, ছিটকে ওঠা আর গরগর শব্দ। এ ভয়ংকর দৃশ্য আর পচা গন্ধে এখানে বেশিক্ষণ থাকা যায় না।
এর পাশেই রাগে যেন ফুঁসছে ফিউমারোল। রান্নার সময় প্রেশার কুকার থেকে যে রকম করে হিস হিস শব্দ আর ধোয়া বের হয় ঠিক সে রকম। এগুলো হলো এই পার্কের সবচেয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জায়গা। ১১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে এর তাপমাত্রা। এগুলোকে স্টিম ভেন্টও বলা হয়। এগুলো পানির পাইপ লাইনের মতো মাটির গভীরে গরম পাথর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে এ লাইন বা গর্তগুলোতে পানির প্রবাহ থাকে কম। প্রচণ্ড তাপে পৃথিবীর ওপর উঠে আসতে আসতে পুরো পানিটাই বাষ্পে পরিণত হয়। সে জন্য এসব মুখগুলোতে সাদা ধোঁয়া দেখা যায়, পানি বের হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগ্নেয়গিরির গভীর ম্যাগমা অংশ থেকে তাপ ও গ্যাস আর পানির মাধ্যমে এগুলো তৈরি হয়। এগুলো শত শত বছর বা তারও বেশি এভাবে থাকতে পারে আবার পর্যাপ্ত উপাদানের অভাবে এক সপ্তাহেই মিলিয়ে যেতে পারে। এই পার্কে আনুমানিক চার হাজার ফিউমারোল আছে। এসব এলাকার আশপাশে মাঝে মাঝে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয় তাই কেউ যদি অসুস্থ ফিল করে তাদের দ্রুত ওই জায়গা থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে।
এ অংশটায় আরও রয়েছে ফাউন্টেন বা ঝরনার মতো সুন্দর সুন্দর গিজার। পৃথিবী বিখ্যাত অপূর্ব সুন্দর গিজারটি আমরা দেখেছিলাম আরও পরে। এখান থেকে কিছু দুর গাড়ি চালিয়ে গেলে মিডওয়ে গিজার বেসিন। এখানে রয়েছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হট স্প্রিং, যার নাম গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক স্প্রিং। অসাধারণ এর সৌন্দর্য। তবে ভীতি নিয়ে দেখলে মনে হতে পারে এক্ষুনি অগ্ন্যুৎপাত হবে। এটাই বুঝি এই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। অবশ্য যা কিছু দেখছি সবই তো আসলে তাই। লাল, হলুদ, নীল অসাধারণ রঙের খেলা এই বিশাল স্প্রিংয়ে। যেন একটি প্রিজমের ভেতর থেকে রংধনু বেরিয়ে আসছে। এই বেসিনে রয়েছে বেগুনি পাড় আর গাঢ় নীল আরও একটি স্প্রিং। এক সময়কার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিজারটিও এখানে। যা এখন কর্মক্ষমতা হারিয়ে হট স্প্রিংয়ে পরিণত হয়েছে। ১৮৮০ সালে এটি তীব্র শক্তিতে ৩০০ ফুট উঁচুতে তার বিশাল জলরাশি উগরে দিয়েছিল। এখন এটি প্রতি মিনিটে চার হাজার ৫০ গ্যালন ফুটন্ত পানি বের করে দেয়।

গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক স্প্রিংয়ে লেখিকার বড় মেয়ে
গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক স্প্রিংয়ে লেখিকার বড় মেয়ে

এভাবে পথে পথে ছড়িয়ে আছে বিস্ময়কর সব দৃশ্য। এরপর আমরা গিয়েছিলাম ওল্ড ফেইথফুল গিজার দেখতে। এর নাম ওল্ড ফেইথফুল কারণ এই গিজারটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিস্ফোরিত হয়। সেই ১৮৭০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এটি মোটামুটি তার বিশ্বাস ভাঙেনি। প্রতি ৪৫ থেকে ৯০ মিনিট পরপর এর মধ্য থেকে তীব্র বেগে প্রচণ্ড গরম জলরাশি বের হয়ে আসে। পাঁচ মিনিট পর্যন্ত এর উচ্চতা বাড়তে থাকে। এক শ থেকে এক শ ৮৪ ফিট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে এর জলরাশি। তিন হাজার সাত শ থেকে আট হাজার চার শ গ্যালন ফুটন্ত পানি বের করে দেয় এটি। তারপর আবার মিলিয়ে যায়। পরবর্তী বিস্ফোরণ সময় পর্যন্ত শুধু ছোট্ট ঢিবির মতো পাহাড় থেকে অল্প সাদা ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। অভূতপূর্ব সে দৃশ্য। মনে পড়ে ছোটবেলায় ভূগোল বইয়ে পড়েছিলাম উষ্ণ প্রস্রবণ, কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না এটা কীভাবে সম্ভব। হট স্প্রিং আর গিজার মোটামুটি একই রকম। হট স্প্রিংয়ে পানিগুলো তার তাপ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দিতে পারে আর গিজারের ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানির লাইন বা পথগুলো সংকোচনের কারণে বাধা পায় তার তাপকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দিতে। তাপ বের হয়ে আসতে পারে না বলে বাড়তেই থাকে আর উপরিভাগের পানির চাপে গভীরতাও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ফুটন্ত পানি তীব্র বেগে গিজারের মুখ দিয়ে উপচে পরে। এটা ভেতরের চাপ কমায় ও ভয়ংকর ফুটন্ত অবস্থা থেকে পুরো সিস্টেমকে রক্ষা করে। এই ওল্ড ফেইথফুলের আশপাশে রয়েছে আরও কিছু সুন্দর গিজার যেগুলো নির্দিষ্ট পথ ধরে হেঁটে দেখতে গেলে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে। মাত্র ছয়টা গিজারের ক্ষেত্রে কখন বিস্ফোরিত হবে তার আনুমানিক সময় ভিজিটর সেন্টারের লবিতে টাঙানো থাকে। বাকি গিজারগুলো অনিশ্চিত। তাদের আচরণ সম্পর্কে এখনো নির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। এ পার্কেই আরেকটি গিজার আছে যার পানি তিন শ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে ওঠে। তবে গত ৫০ বছরেও এর পূর্ণ বিস্ফোরণ দেখা যায়নি। আমার বর এর নাম দিয়েছে নিউ ফেইথ লেস, কারণ এটার কোনো বিশ্বাস নেই কখন বিস্ফোরণ ঘটায়। আমার বাচ্চারা এই নাম শুনে মহা খুশি। যদিও ওই গিজারটি আমাদের দেখা হয়নি।
পুরো পার্ক এলাকার সবকিছু দেখতে হলে অনেক সময় নিয়ে যেতে হবে। পার্কের ভেতরের ম্যাপ দেখে পরিকল্পনা করতে হবে কখন, কীভাবে কোনটা দেখা যায়। আর অবশ্যই পার্কের ভেতরে অথবা খুব কাছাকাছি থাকতে হবে কারণ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গাড়ি চালিয়ে যেতেও অনেকটা সময় চলে যায়। একদিনে কোনো ভাবেই পুরোটা দেখা সম্ভব না এই বিশাল পার্কের। বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে এডুকেশন সেন্টার, সেখানে বিভিন্ন এক্সিবিশন হয়। এর ম্যাপ ধরে আগাতে থাকলে রয়েছে আরও আরও সব দেখার মতো বিষয়। এর ক্যানিয়ন ভিলেজ, দুটা জলপ্রপাত, যার একটা কি না নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকেও দ্বিগুণ উঁচু, ইয়েলোস্টোন লেক—সবই বিস্ময়াভিভূত করবে। যেদিক দিয়ে পুরোনো অগ্ন্যুৎপাতের লাভা গড়িয়ে গিয়েছিল তার প্রভাবেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে লেক। এর Mammoth Hot Springs এলাকা রং ও রূপে অতুলনীয়। যে চারটা বিষয়ের অল্প বর্ণনা দিলাম পুরো পার্ক জুড়েই আছে সেগুলো ছোট বড় নানা বৈচিত্র্য নিয়ে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বন্য প্রাণী। গাছপালার ঘনত্ব কিছুটা কম, বিক্ষিপ্ত। কিছু অংশ মরুভূমির মতো। সীমাহীন বিস্ময় ছড়িয়ে আছে পুরো পার্ক জুড়ে। ফটোগ্রাফার উইলিয়াম হেনরি জ্যাকসনের ছবি আর চিত্রশিল্পী থমাস মোরানের স্কেচ প্রভাবিত করেছিল ১৮৭২ সালে এই পার্ককে প্রথম ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে।
এত যে বিস্ময়, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিস্ময় হচ্ছে, যে লাখ লাখ মানুষ এই পার্কে বেড়াতে যায় সেই মানব জাতির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না যদি এই সুপার আগ্নেয়গিরি আবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়। বিজ্ঞানীরা সারাক্ষণ কান পেতে আছে এর বুকে, যদি কোনো লক্ষণ টের পাওয়া যায়। অনেক বিজ্ঞানীই বলছেন মানব সভ্যতার ইতিহাসে এ সম্ভাবনা নেই। আবার এর ঠিক বিশ্বাসও নেই। বিজ্ঞানীরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যদি এই উচ্চবংশ প্রেয়সীর মন বুঝতে পারেন। হলদে শিলা পার্কের বিভিন্ন তর্জন গর্জন দেখে আমার কেবলই একটা গল্প মনে পড়ছিল সেটা হচ্ছে, এক লোক চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ভীষণ কাঁপছে। তো তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এত কাঁপছেন কেন? জবাবে সে বলল, কাঁপুনির আর দেখছেন কী, খালি একটা প্রশ্ন জিগায়েই দেখেন! হলদে শিলার আগ্নেয়গিরি যা দেখাচ্ছে তা-ই থাক, এর বেশি কিছু আর কাউকে দেখতে না হোক।