বিনম্র শ্রদ্ধায় গ্রিসে জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী পালন

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে জাতীয় শোক দিবস পালন।লেখক

বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির অংশগ্রহণে বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী। মুজিব বর্ষের এই শোক দিবসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাঁর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার অনন্য সুযোগ হিসেবে নিয়ে সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।

করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শোক দিবস পালন করা হয়। শনিবার সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন কর্তৃক জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। জাতির পিতা ও ১৫ই আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দূতাবাস প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করা হয়।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দূতাবাস চত্বরে জাতির পিতার মহতী কর্মময় জীবনের আলোকচিত্র এবং বঙ্গবন্ধুর অমূল্য বাণীর সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই প্রদর্শনীতে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবনের, বিশেষত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও বিশ্ব অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ ও কর্ম তৎপরতার চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণগুলো থেকে তাঁর স্মরণীয় কিছু বাণীও প্রদর্শন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং তাঁর অমূল্য বাণীর সংযোজন অনুষ্ঠানে যোগদানকারী বিপুলসংখ্যক দর্শকের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে জাতির পিতার মহতী জীবন ও কর্ম সম্পর্কে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দূতাবাস চত্বরে আয়োজিত এই প্রদর্শনী আগামী এক সপ্তাহ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস।
লেখক

১৫ই আগস্ট বিকেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রেরিত বাণী পাঠের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। জাতির পিতার গৌরবোজ্জ্বল কর্মময় জীবনের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর জাতির পিতা ও ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতির পিতার ত্যাগ ও তিতিক্ষার জীবনাদর্শ ও কর্মের ওপর আলোচনায় বক্তাগণ বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর করার দাবি জানান।

বক্তাগণ জাতির পিতার ঐতিহাসিক অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন যে, ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ এবং দর্শনকে হত্যা করতে পারেনি। বক্তারা বর্তমান সরকারের অধীনে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মুজিব বর্ষে জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তাঁরা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা এবং আদর্শ বাস্তবায়নে নতুন প্রজন্মসহ সকলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রতীক। তিনি এই মুজিব বর্ষে জাতির পিতার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ হতে সকলকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, স্বাধীনতা উত্তর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি আদায়ে তাঁর প্রাজ্ঞ, রাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতার মর্যাদায় আসীন করেছে।

রাষ্ট্রদূত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর লক্ষ অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলার গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর লক্ষ অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলার গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি গ্রিসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়া আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে করোনা পরিস্থিতিতে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পরিবর্তিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান।

আলোচনা অনুষ্ঠানের পর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস এর সভাপতি হাজি আব্দুল কুদ্দুস, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসান উল্লাহ হাসান, গ্রিস আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিন শেখ, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার, সহসভাপতি সামাদ মাতুব্বর, আবিদ হানজালা, সদস্যসচিব বাচ্চু বেপারী, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল হাওলাদার, যুবলীগের কামরুল ইসলাম, রাসেল মিয়া, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুমিন খানসহ বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন গ্রিসে বসবাসকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ।