বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে ভাষা আন্দোলন যেমন মহিরুহ রূপ পেত না, একাত্তরে তেমনি বাংলাদেশ নামক প্রাণের ভূখণ্ড স্বাধীন হতো না। বাংলাদেশিরা ঐক্যবদ্ধ বলেই আমরা বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি। শুধু আমরা কেন, যেকোনো জাতির জীবনে ঐক্যের গুরুত্ব যে অপরিসীম-সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। জাতি হিসেবে বিদেশের মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলেও ঐক্যের বিকল্প নেই।
জীবন-জীবিকার তাগিদে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী হয়েছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রচুর অভিবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এ দেশের নাগরিক হলেও স্বদেশি বা প্রিয় মাতৃভূমিকে ভুলে যাননি তাঁরা। এই চেতনাকে ধারণ করে আমেরিকায় বিশেষ করে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তারই একটি সংগঠন হলো চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (চট্টগ্রাম সমিতি)।
বিশাল একটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে চট্টগ্রাম সমিতি বাঙালিদের ছোট্ট একটি সংগঠন। অথচ কেবল অনৈক্যের কারণে ছোট্ট এই সংগঠনটি এখন ভেঙে যাওয়ার পথে। সমিতির এক ভবনের দখল নিতে চায় দুই পক্ষ। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। দুই পক্ষই আলাদাভাবে গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন-তারিখও ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে তারা। নির্বাচিত হওয়ার পর ভবনের অফিসে কে বসবেন, আর কে বসবেন না—তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের লড়াইটা আর প্রথম স্তরে নেই। সেখানে এখন বাংলাদেশিদের তৃতীয় প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। তারপরও শুধু অনৈক্যের কারণে বিদেশ বিভুঁইয়ে অপরিচিত পরিবেশে রাজনৈতিক দিক থেকে তেমন অগ্রগতি হয়নি। নিউইয়র্ক নগরের বাংলাদেশি কমিউনিটির মূল সংকট দ্বিধা-বিভক্তি। আর এর ফল কখনো ইতিবাচক হয়নি বলে প্রমাণ রয়েছে অনেক।
দ্বিধা বিভক্ত চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশনের দুই পক্ষের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। দুই পক্ষের সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা ও শক্তির মহড়ায় ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড ও কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস এলাকা সরগরম। দুপক্ষই দুটি নির্বাচন কমিশনের আওতায় নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক পক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মে, আরেক পক্ষের হবে ৩০ মে।
শুধু আমরা নই, আসলে এমন পরিস্থিতি কেউ-ই প্রত্যাশা করে না। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, আর এ কারণে তিল তিল করে গড়া সংগঠনের ভাঙন কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই সব বিভেদ ভুলে এক হতে হবে। বিষয়টি এখনই গুরুত্বের সঙ্গে সব পক্ষকেই ভাবতে হবে। সব পক্ষকে এক হয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে সামনের দিকে। আলোকিত করতে হবে বাংলাদেশের নাম। তা না হলে বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশিদের পুরোনো সাফল্যও ম্লান হয়ে যাবে। আর এই ঐক্যের শক্তি হয়তো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দূর নিয়ে যাবে।