বাড়ির উঠানে ঈদের নামাজ
দক্ষিণ--পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন। প্রায় সাড়ে সাত হাজার দ্বীপ নিয়ে এই দেশ। জনসংখ্যার অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মালম্বী। জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ৬ শতাংশের নিচে। মুষ্টিমেয় মুসলিম বাস করেন দেশের দক্ষিণে মিন্দানাও প্রদেশে। আর কিছু মুসলিম দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই এখানে মসজিদের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
আমি থাকি লুজন প্রদেশে। আমার বাসা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ আছে। জুম্মা এবং ঈদের নামাজ সাধারণত সেখানেই পড়া হয়। ঈদগাহে নামাজ পড়ার সুযোগ খুব কম।
করোনা ভাইরাসের জন্য ১৭ মার্চ থেকে কমিউনিটি কোয়ারেন্টিন এবং লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে গেছে মসজিদ গির্জায় লোক সমাগম। আমরা চারজন বাংলাদেশি একই কম্পাউন্ডে থাকি। নিয়মিত নামাজ একসঙ্গে পড়লেও পড়া হচ্ছে না জুম্মার নামাজ। চিন্তায় ছিলাম ঈদের নামাজ নিয়ে।
প্রবাসে পরিবারবিহীন ঈদ বলতে পরে ঈদের নামাজ পড়া আর নিজের মতো করে কিছু দেশীয় খাবার রান্না করে খাওয়া। সেই ঈদের নামাজ এবার অনেকটা অনিশ্চিত। বাংলাদেশের চেয়ে একদিন আগেই এখানে ঈদ পালন করলাম। চাঁদ দেখার রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। মুসলিম কমিউনিটির নির্ধারিত মুফতি কর্তৃক ঈদের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ২২ মে রাতে জানানো হয়েছে ২৪ মে ফিলিপাইনে ঈদ পালন করা হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ীর উঠোনে নামাজ পড়ব। কিন্তু সমস্যা তৈরী হলো নামাজের খুৎবা নিয়ে। খুৎবা পড়ার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে জানলাম খুৎবা ছাড়াও নামাজ হবে।
চারজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের বাড়ির উঠোনে ঈদের নামাজ হবে। এর মধ্যে ২৩ মে দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হলো। নতুন চিন্তা শুরু হলো, এমন বৃষ্টি থাকলে উঠোনে নামাজ পড়া সম্ভব হবে না। এশার নামাজ পড়ে একটি সুন্দর সকালের প্রত্যাশায় ঘুমিয়ে গেলাম। ফজরের নামাজের পেলাম চমৎকার ঝকঝকে আকাশ। সকাল ছয়টায় আমরা নামাজ পড়লাম। এর পর চারজন মিলেই দেশীয় কিছু রান্না করলাম। আমাদের পাশেই ছিলেন আমাদের বাংলাদেশী এক হিন্দু ধর্মালম্বী সহকর্মী তাকেও দাওয়াত দিলাম। পাঁচজন মিলে খেয়ে দেয়ে গল্প করে উদযাপন করলাম এবারের প্রবাসের ঈদ।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।