বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের আগ্রহ প্রকাশ
বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিন রশিদ আল জায়ানির সঙ্গে গত রোববার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ ও বাহরাইনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেন। গত ডিসেম্বর মাসে আবদুল লতিফ বিন রশিদ আল জায়ানিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমন্ত্রণপত্রের একটি কপি বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবার হস্তান্তর করেন রাষ্ট্রদূত। বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্রটি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন এবং শিগগিরই ঢাকা সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম কোভিডকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন–অগ্রযাত্রার সাফল্যগাথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক ঈর্ষণীয় হার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ ছাড়া তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম বাহরাইন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং বাহরাইন সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
করোনাকালে দেশে গিয়ে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় এক হাজার প্রবাসী বাহরাইনে ফিরে আসতে পারছেন না উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ বিষয়ে বাহরাইন সরকারের প্রাসঙ্গিক সব কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া প্রবাসীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। তিনি আটকে পড়া এই প্রবাসীদের বাহরাইনে ফিরিয়ে আনতে বাহরাইনের বাদশাহর সদয় বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তের আশ্বাস প্রদান করেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক কালে সাধারণ জনগণ, সরকারি কর্মকর্তা (সরকারি কাজে), এমনকি কূটনীতিকসহ তাঁদের পরিবারের ভিসা পেতে জটিলতা হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রাষ্ট্রদূত দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে অধিকতর যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পর্যায়ে ভিসা চুক্তিটি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রস্তাব করেন।
২০১৫ সালে ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ সব ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে এফওসি হওয়াটা জরুরি উল্লেখ করেন এবং এ বিষয়ে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ঢাকা প্রথম এফওসি আয়োজনে বেশ আগ্রহী এবং এর প্রস্তুতি হিসেবে দুদেশের সচিবপর্যায়ে সফর হতে পারে। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আশ্বাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাহরাইন সরকার থেকে দূতাবাসের জন্য জমি পেলে বাংলাদেশ সরকার বাহরাইনে নিজস্ব জমিতে দূতাবাস নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে নিজস্ব জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি বাহরাইন সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে বাহরাইন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। রাষ্ট্রদূত তাঁকে বাংলাদেশে বাহরাইনের দূতাবাস স্থাপনের আহ্বান জানান। এ ছাড়া বাহরাইনের বাদশাহ কর্তৃক প্রদত্ত জমিতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ স্কুল বাহরাইনের নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং এ ব্যাপারে তাঁর সহযোগিতা কামনা করেন।