পিরুর যেদিন মৃত্যু হয় সেদিন ড. শরাফত হোসেনের স্ত্রীর চলে যাওয়ার দ্বিতীয় দিন। সকালে অফিসে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তিনি একটা টেলিফোন পান।
তোমার দেশ থেকে আসা একটা ছাত্রের অকাল মৃত্যুর জন্য আমি দুঃখিত। যদি পার ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে স্কুলের পক্ষ থেকে একটু যোগাযোগ কর। শরাফত সাহেব নিজের স্ত্রীর চলে যাওয়ার কষ্ট বাদ দিয়ে পিরুর মৃতদেহ দেশে পাঠানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অবশ্য এতে করে নিজের বিষণ্নতা কিছুটা হলেও ভুলতে পারলেন। অন্যের মৃত্যু দিয়ে নিজের বিষণ্নতা দূর। মৃত্যু বলেই কথা। প্রতিটি প্রাণীর জন্মের পর সবচেয়ে বড় সত্যি হচ্ছে তাকে নিয়তির কাছে প্রত্যাবর্তন করতেই হয়। প্রত্যাবর্তন শব্দটি তিনি অস্পষ্ট স্বরে দুবার উচ্চারণ করলেন। তারপর স্ত্রীর কথা ভাবলেন। বুকের ভেতর একটু হাহাকার করে উঠল। বাইরে থেকে বোঝা গেল না। এখনো কষ্টের ক্ষত পুরোপুরি শুকায়নি। কোনটার আবেদন বেশি। পালিয়ে যাওয়া স্ত্রীর নাকি মৃত পিরুর প্রতি। চিন্তা করতে তিনি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেন।
শরাফত হোসেন আর্থিকভাবে সাহায্য করা ছাড়াও পিরুর দাফন–কাফনের জন্য এদিক সেদিক যোগাযোগ করলেন। স্থানীয় বাংলাদেশি, ভারতীয়, আরব ও পাকিস্তানি কিছু ছাত্রের সহায়তায় পিরুকে শেষ পর্যন্ত লোগান শহরেই মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাহিত করা হয়। ওটা ছিল খ্রিষ্টানদের কবরস্থানের সীমানা ঘেঁষে মুসলমানদের জন্য বরাদ্দকৃত সামান্য একটু জায়গা। এই ব্যাপারে পিরুর বাংলাদেশের পরিবার ও কিছু দূর সম্পর্কের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। পিরুর কবরস্থানের জায়গাটি তার অ্যাপার্টমেন্টের কাছে। নাম গার্ডেন অব সোলস। রান্নাঘরের সামনের জানালা দিয়ে তাকালেই অদূরেই গার্ডেন অব সোলসের সাইন দেখা যায়। গেটের দুই পাশে দুটি বিশালাকার বৃক্ষ। গাছটি তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করে সমাধিস্থলের বিরাট একটা অংশ নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিয়েছে। দিন রাত কারণে অকারণে সেই সাইনের ওপর বাতি জ্বলে। মৃত মানুষদের সমাধিস্থলে বাতিরই বা কী প্রয়োজন। তারা তো দিবালোকের ঊর্ধ্বে।
শরাফত হোসেন তার বিষণ্নতা দূর করার জন্য পরের দিনই মনোবিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হলেন। ডাক্তার সাহেব বিরস মুখে শিক্ষকের স্ত্রীর কাহিনি শুনে কিছু ঘুমের ওষুধ আর নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দিলেন। আমেরিকা এক অদ্ভুত জায়গা। যে কোনো বিষয়ে কাউন্সেলিং নেওয়া যায়। গরম মাথা ঠান্ডা করা থেকে শুরু করে বাসার পোষা কুকুর বিড়ালের কাছ থেকে কীভাবে প্রভু ভক্তিসুলভ আচরণ আদায় করা যায় সেই সব ব্যাপারেও কাউন্সেলিং সেবা পাওয়া যায়। প্রয়োজন শুধু অর্থের। মনোচিকিৎসক আরও পরামর্শ দিলেন কাজের পাশাপাশি অন্য কোনো শখ বা হবির প্রতি মনোযোগী হলেও বিষণ্নতা মোকাবিলা করা সহজতর হবে।
শরাফত হোসেনের সঙ্গে পিরুর সঙ্গে খুব সখ্যতা না থাকলেও মৃতের প্রতি তার মায়াবোধ বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হলো। আফটার অল ছেলেটা জীবনটাকে অসম্পূর্ণ রেখেই চলে গেল। পিরুর বাবা বছর দেড়েক আগেই পরলোকগমন করেছিলেন। তার মায়ের অনুরোধ ছিল ছেলের মরদেহ দেশে পাঠানোর। কিন্তু দুই কী তিন সপ্তাহের মধ্যেও তা সম্ভব ছিল না। স্বল্প সময়ে পুলিশি তদন্তের রিপোর্ট ও উড়োজাহাজের টিকিট সহজপ্রাপ্য ছিল না। উপরন্তু শীতে আবহাওয়াও ছিল প্রতিকূল।
২.
শরাফত হোসেনের লেখালেখির হাত ছিল ভালোই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে প্রায়ই পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠাতেন। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য লেখার সময় বের করতে পারতেন না। আমেরিকায় স্ত্রী চলে যাওয়ার পর তার একাকিত্বের মুহূর্তগুলো ছিল বিভীষিকাময়। রাতেও ঘুমাতে পারতেন না। বিছানা ছেড়ে প্রায়ই রান্না ঘরের জানালার পাশে এসে দাঁড়াতেন। হাতে মদের গ্লাস নিয়ে জানালার অদূরে মিটমিট আলোর মাঝে বারবার একটা সাইন পড়তেন। গার্ডেন অব সোলস। কখনো কখনো দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। পিরুর কথা ভাবতেন। মনে মনে দুঃখ পেতেন। আফসোস হতো যে ছেলেটাকে তিনি কখনো বাসায় ডাকেননি। অনেকবার প্ল্যান করেছিলেন একদিন বাসায় ডেকে অন্য আরও কিছু বাংলাদেশি ছাত্রসহ ভালোমন্দ খাওয়াবেন। এ কথা স্ত্রীকে একবার বলেছিলেনও। কিন্তু খুব একটা উৎসাহ পাননি। ক্যাম্পাসে দেখা হলে হাই হ্যালো টাইপের কথা হতো। পিরুর কথা ভাবতে ভাবতে তার চোখের আয়নায় স্ত্রীর মুখ চলে আসত। যতই সে ভুলে যেতে চাইত ততই সেই আয়নার ছবিটা স্পষ্টতা পেত। কী আশ্চর্য। বারবার মনে হতো দৈহিক মৃত্যু নিয়ে তার স্ত্রী চলে গেলেও সে হয়তো এত ব্যথিত হতো না। উপলব্ধির মৃত্যু আরও কষ্টের। দেহের মৃত্যু হয় একবার আর উপলব্ধির মৃত্যু প্রতিটি নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে। প্রতিদিন, ক্ষণে ক্ষণে।
পিরুর মৃতদেহ শেষবারের মতো দেখতে এসেছিল একটি ব্লন্ডি মেয়ে। অনেকে বলাবলি করছিল এই সেই মেয়ে যার জন্য সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তার নাম সিন্থিয়া এলভিস। মাথায় স্কার্ট দিয়ে ধীর পায়ে সে পিরুর কাছে যায়। তারপর একপলক তাকিয়ে থাকে। তার চোখে ছিল অশ্রুধারা। তার সঙ্গে মেয়েটির ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু ছিল তা কেউ জানে না। জানবেও না কখনো। জানা সম্ভবও নয়। তবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে শরাফত হোসেন প্রতারণার কিছুই দেখতে পাননি। মানুষের চোখ তার দেহের চটুরতা ঢাকতে পারে না। তবে তার মূল্যায়নও ভুল হতে পারে। সিন্থিয়া আগ বাড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে। যতটুকু জানতে পেরেছেন তা হচ্ছে সিন্থিয়া আর পিরু একই ক্লাসে ছিল। শুরু থেকেই ওরা এক সঙ্গে প্ল্যান করে ক্লাস নেয়। ওরা একে অপরের ভালো বন্ধু। এক সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরত। সিন্থিয়া তাকে তার বাবার খামার বাড়িতেও নিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। সুন্দরী সিন্থিয়ার প্রতি পিরু মনে মনে স্বপ্নের বাসা বানাতে শুরু করে। সে তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। অথচ মেয়েটির কাছে সেটা ছিল স্রেফ বন্ধুত্ব। দুই সমাজে বড় হওয়া দুটি মানুষের মন মানসিকতা, সংস্কৃতিগত বিভেদ ও সর্বোপরি পিরুর লাজুকতা তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিল। একজনের কাছে যা ছিল জীবনসঙ্গিনী হওয়ার ইঙ্গিত অন্যজনের কাছে তা নিতান্তই বন্ধুত্ব।
বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েও স্পষ্ট করে পিরু কখনো সে মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা জানাতে পারেনি। এটা ছিল তার চরম ব্যর্থতা। যেদিন সিন্থিয়া জানাল যে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড ইরাক যুদ্ধ থেকে থেকে ফিরে এসে তাকে বিয়ে করবে, সেদিন পিরুর স্বপ্নের পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে এলো। তার কিছুদিন পর সে স্বেচ্ছায় নিজ দেহ ত্যাগ করল সবার অগোচরে।
৩.
শরাফত হোসেন তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আসলে তার ঘুম ভেঙে গেল দুঃস্বপ্নে। দেখলেন কেউ একজন এসে তার দরজা নক করছে। তিনি দরজা খুলে দেখেন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আগন্তুক তার দিকে এক হাত বাড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা নীল রঙের খাম।
পিরু, তুমি? তোমার হাতে কি এটা?
জি স্যার, আমি পিরু। আমি আপনার একটা ক্লাসে ছিলাম। খামের ভেতর একটা চিঠি। দয়া করে এটা সিন্থিয়া নামক আপনার এক ছাত্রীকে দেবেন, প্লিজ। সেও আপনার ক্লাসে আছে।
শরাফত হোসেন কিছুটা চিন্তাচ্ছন্ন হলেন। ডেমোক্রেটিক সিটিজেনশিপ নামে একটা ক্লাস তিনি এখন নিচ্ছেন। মনে পড়ল সিন্থিয়া এলভিস নামে বন্ডি একটা মেয়ে তার ক্লাসে আছে। বেশ সুন্দরী, চোখে পড়ার মতো। হয়তো সেই কারণে তার নামটা স্মরণ করতে কষ্ট হলো না। প্রশ্ন না করে কী ভেবে তিনি নীল খামটা হাতে নিলেন।
স্যার, আসি বলে পিরু প্রস্থান করতে চাইল।
দাঁড়াও, একটা কথা ছিল। এত মানুষ, ইমেইল আর পোস্ট বক্স থাকতে আমাকে দিয়ে কেন চিঠিটা দিতে চাচ্ছ? আমি চাইলেও তো অনেক কিছু করতে পারি না। তুমি তো জান শিক্ষক হিসেবে এটা মেয়েটির হাতে দিলে আমি চাকরি হারাতে পারি।
স্যার, আপনিই বুঝতে পারবেন নিজের ভালোবাসার মানুষ চলে গেলে জীবন কী বিভীষিকাময় হয়। আপনার স্ত্রীও তো আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আমার স্ত্রীর চলে যাওয়ার কথা তুমি জানলে কী করে? তুমি তো তার আগের দিনই মারা গিয়েছ? শিক্ষকের প্রশ্নে কর্ণপাত না করে পিরু ইতিমধ্যেই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করছে। শব্দ করে সে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে। শিক্ষক তার চলে যাওয়া দেখে চিৎকার করে ডাকলেন, দাঁড়াও, দাঁড়াও পিরু। তার ঘুম ভেঙে গেল।
দুঃস্বপ্ন থেকে উঠে আসার পর উনি সোফাতে বসে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে রইলেন। পাশেই টেবিলের ওপর রাখা মোটা একটা পুরোনো ডায়েরি নিজের দিকে টেনে নিলেন। এক এক করে পাতা ওল্টাতে লাগলেন। বাংলাদেশ ও আমেরিকার অসংখ্য নতুন পুরাতন মানুষদের নামধাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাকারে পাতাগুলো ভরপুর। মাঝে মাঝে এলোমেলো গল্প, কবিতার টুকরো টুকরো অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবই আংশিক। কোনটিই সম্পূর্ণ নয়। কবিতার সঙ্গে তিনি নিজের জীবনকেও তুলনা করলেন। দেখলেন সেটাও পরিপূর্ণ নয়। আংশিক। নিজের লেখা কয়েকটি কবিতা বিড়বিড় করে পড়লেন। মনে করতে পারলেন না কেন লিখেছিলেন, কোন প্রেক্ষাপটে। ডায়েরির পাতাগুলো ওল্টাতে ওল্টাতে তিনি একটা পৃষ্ঠায় এসে থেমে গেলেন। এক ব্যক্তির নাম লেখা। পিয়াল হক পিরু। তার টেলিফোন নম্বর, লোগান শহরে তার বাসার ঠিকানা। ইমেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি। বাংলাদেশে তার বাসার ফোন নম্বর, বাবার নাম। যখন সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন সে এই তথ্যগুলো পেয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিসের বাংলাদেশ ক্লাব থেকে। শরাফত হোসেন তখন বাংলাদেশ ক্লাবের উপদেষ্টা ছিলেন। ডায়েরির পরের পাতাগুলো একবারেই খালি। মোটা ডায়েরিটি যত দূর পৃষ্ঠা উল্টানো গেল শুধু ধু ধু শূন্যতা। শরাফত হোসেন শূন্য পাতাগুলোর প্রথমটিতে কিছু একটা লেখা শুরু করলেন।
মানুষ, প্রাণী, জীব বা জৈব যাই হোক না কেন প্রাণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, সে দেহের কাছে একবারই ধরা দেয় আর একবারই পলায়ন করে। প্রাণের এই আগমন আর নির্গমনের মাঝামাঝি সময়টাকে বলে জীবন বা অস্তিত্ব। এই অস্তিত্ব রক্ষায় কেউ জয়ী হয়ে কিছুদিন বেঁচে থাকে আবার কেউ পরাজয় নিয়েই প্রস্থান করে। পিয়াল হক পিরু নামক ব্যক্তিটি তার ব্যতিক্রম। আপাতদৃষ্টিতে তাকে পরাজিত ও পলায়নপর যুবক হিসেবে দেখা গেলেও আমি লেখক হিসেবে তার জীবনের পরিপূর্ণতা দান করব। তার আংশিক জীবনে যেটুকু ব্যর্থতা ছিল সেটুকু তার বাকি জীবনের সফলতায় ঢেকে যাবে। অনেক বছর আগে সুদূর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ময়মনসিংহ অঞ্চলের কোনো এক হাসপাতালে মায়ের গর্ভ থেকে পিরুর জন্ম হয়। সেখান থেকে সে মা, বাবা, পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার আদর, ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বড় হতে থাকে। জীবনের অনেক ধাপ অতিক্রম করে আস্তে আস্তে সে জীবনের পরিপূর্ণতার দিকে এগোতে থাকে। সফলতার এক ধাপ অতিক্রম করে সে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সুদূর আমেরিকায় আসে ছাত্র হিসেবে। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ, নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এই যাত্রায় সে খুব বেশি সফল হতে পারেনি। মাঝপথে সে নিজেই নিজের নির্গমনের পথ খুঁজে নেয়। সে ফিরে যায় না ফেরার দেশে। হিসাব নিকাশের বাইরে, লোকান্তরে। আমেরিকার সরকারি ফাইলেও তার জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ আছে কিনা আমি সন্দিহান। তবে তার মৃত্যুর তারিখ সেখানে স্থায়ীভাবে স্থান পেয়েছে। তার প্রথম জন্ম ও দৈহিক মৃত্যুর এখানেই পরিসমাপ্তি।
আমি ড. শরাফত হোসেন লেখক হিসেবে আজকে এখান থেকে পিয়াল হক পিরুকে নতুন জীবন দান করলাম। আশা করা যায় এই জীবনে সে পরিপূর্ণতা পাবে। নতুন জীবনে সে বেঁচে থাকবে তার আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নবিলাস, ভালোবাসা, তৃপ্তি, অতৃপ্তির মধ্য দিয়ে। যে জীবনের কাছে সে হার মেনেছে সেই জীবনকে সে জয় করতে শিখবে। তার চলার পথ যতই বন্ধুর হোক না কেন সে সবকিছুকেই উপেক্ষা করে জীবন চলার পথে ব্রত হবে।
গভীর মনোযোগ দিয়ে লেখক শরাফত হোসেন লিখে চললেন।
পিরু তেত্রিশ বয়সের টগবগে যুবক। সে আমেরিকাপ্রবাসী। ইউটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাস করা ছাত্র। তার বাবা বিত্তশালী সরকারি সচিব কিন্তু বাবার অর্থের মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। উপরন্তু তার পড়ালেখার পেছনে বাবার অবৈধ অর্থায়নের পুরোটাই দেশে ফেরত দেবার ব্যাপারেও সে দৃঢ় বিশ্বাসী। এই উদ্দেশ্যে সে বাংলাদেশে একটা চ্যারিটি ফাউন্ডেশন খুলেছে। নাম প্রয়াস ফাউন্ডেশন। সে সবার ডাকে সাড়া দেয়। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী, বিদ্রোহী, আপসহীন। সে আমাদের মাঝে বাস করে। বিচরণ করে আমাদের সমাজেই। সে সর্বত্র, সর্ব পেশায়। কখনো সে নিউইয়র্কের ক্যাবি। কখনো সে কারখানার শ্রমিক। কখনোবা সে স্যুটটাই পরা নিতান্ত করপোরেট চাকুরে। মরে যাওয়ার ভয় তাকে যতটুকু না বিচলিত করে তার চাইতে সে বেশি সোচ্চার ও প্রতিবাদী বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে। ভালোবাসার তৃষ্ণায় সে যতটুকু না তৃষ্ণার্ত তার চেয়ে বেশি সে বলবান বাস্তবতার কঠোরতাকে গ্রহণ করবার।
লেখক শরাফত হোসেন পিরুকে নিয়ে ছেড়ে দিলেন পৃথিবীর ব্যস্ততম মহানগর নিউইয়র্কের রাস্তায়। ভূমিকার শেষে পিরুকে নিয়ে গল্পের প্রথম পর্বের নাম জুড়ে দিলেন নিউইয়র্কের আকাশে বৃষ্টি।
পিরু বেঁচে থাকে লেখকের স্বপ্নপুরে, গল্পে গল্পে, আরও অসংখ্য চরিত্রের মাঝে। পিরুর বিচরণ আমেরিকার প্রতিটি শহরে, প্রতিটি রাজ্যে। সে চলে যায় একবার কিন্তু ফিরে আসে বারবার। (শেষ)
(লেখকের ইমেইল: [email protected])
ধারাবাহিক এই রচনার আগের পরর্ব পড়তে ক্লিক করুন:
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/659539
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/664300
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/667288
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/670195
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/681721
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/684313