বাবার সেবা ভুলি নাই

হাসপাতালে বেডে কখন অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আনা হয়েছে, তা জানি না। জ্ঞান ফিরলে আধো ঘোলাটে চোখে দেখলাম, বাবা আমার পাশে রাতভর জেগে বসে আছেন। কখন সন্তানের জ্ঞান ফিরবে, ছেলের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার অপেক্ষায় সেই রাত নিদ্রাহীন কাটিয়ে দিয়েছেন। কোনো দিন বলেননি, আমার জন্য তাঁকে রাত জাগার কষ্ট করতে হয়েছে।

পাছে পড়াশোনার ক্ষতি হয়, বাজারহাট করতে দিতে নারাজ। ছেলের কষ্ট হোক কোনোভাবেই চাননি বাবা। অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাতে কোনো ত্রুটি করেননি। কলকাতার নেহরু চিলড্রেন মিউজিয়াম, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অফিসের দায়িত্ব পালনের পর ধৈর্য ধরে সেখানে উপস্থিত থাকতে ভোলেননি। পড়াশোনার খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর এড়াত না তাঁর। প্রাইভেট মাস্টারমশাইদের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ছিলেন।

সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর প্রতিটি বইতে ব্রাউন পেপার মলাটে মুড়তে ভুলতেন না। বাড়িতে প্রথম সরস্বতীপূজায় রাত জেগে ঠাকুরঘর তৈরি থেকে লাইট সাজানোর মতো উদ্যোগগুলো মনে পড়ে।

চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাবা অফুরান উৎসাহ সিকিম হাইকোর্টের পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিতে পেরেছিল। একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যের মুখ দেখলেও চূড়ান্ত স্তরে অসাফল্য বাবার উৎসাহ আমাকে বারবার কোমর বেঁধে মাঠে নামতে সাহায্য করেছিল।

সাংবাদিকতা পঠনের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার তৃতীয় স্থানে উওীর্ণ হয়ে সাংবাদিকতা কোর্সে ভর্তি হওয়া শুধু বাবার অদম্য মনোভাবের জন্য সম্ভব হয়েছে। আজ ফ্রিল্যান্সিং কাজে বাবা আমার শক্তি, সাফল্যের চাবিকাঠি, জিয়নকাঠিও বটে। বাবা আমার মাথার ওপর বটগাছের মতো বিরাজমান থাকুক, এ আমার একান্ত ইচ্ছা।

সংযোজনীতে যার কথা না বললেই নয়, তিনি আমার শ্বশুরমশাই। বিয়ের পর তাঁর অপত্য স্নেহ, ভালোবাসা ও পরামর্শ আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। শাশুড়ি গত হওয়ার পর তাঁর নিজের হাতে আতিথেয়তা ভোলার নয়। নিজের হাতে শরবত এগিয়ে দেওয়া ক্লান্ত জামাইকে, শরীর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দিকে লক্ষ রেখে পরিবেশন করা, এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর এড়াত না। আজ সন্তানের পিতা হিসেবে তাঁর এবং বর্তমান জন্মদাতা পিতার স্থান মোক্ষম বুঝতে পারছি এবং মালুম করতে পারছি।

*লেখক: রথীন কুমার চন্দ, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত