বাবার কোরবানি
রোজার ঈদে আমার খুব একটা খারাপ লাগে না
ঘুমিয়েই আধেক দিন কাটিয়ে দিই... কী আর করার থাকে!
একাকী বিষণ্ন পরবাসী আকাশ, ঝলসে দেয় মেঘেদের দল!
চাঁদ হারিয়ে যায় জীবনানন্দের বেনোজলে...
কারও সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না!
কিন্তু কোরবানি আসলে আমার মন কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে
আমি হারিয়ে যাই শৈশবে, বাবার চেহারা— উদ্বেগ!
একটা জীবন তাকে দেখিনি নিজেকে নিয়ে নিজের পরিবার নিয়ে
কখনো একটুও ভেবেছে, সব সময় নির্ভার—কোনো পিছুটান নেই
কিন্তু কোরবানি আসার ঢের আগে থেকে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত!
যেন সারা বছর সে কোরবানির জন্যই অপেক্ষা করে।
মরিচ মসলা কিনতে হবে, শুকানোর জন্য রোদ লাগবে, দিনের হিসাব!
বস্তাভর্তি চালও শুকাতে হবে, চাঁদরাতে রুটির এলাহী কাণ্ড!
এলাকার একটি ঘরও যেন বাদ না যায়!
বাবার টাকা থাকত না কখনো, প্রয়োজনের তুলনায় সব সময় অভাব!
দুটি গরুই নিত সব সময়, তার পরও মাংস বণ্টনের সময় তার মুখ মলিন!
হাহাকারে ভরে উঠত উঠান, মানুষকে মন ভরে দিতে না পারার হতাশা।
প্রায়শ বলত, আমার যতগুলো মানুষ, পাঁচটি গরুর দরকার।
যদিও আমি নিশ্চিত তাতেও তাঁর মন ভরত না।
যার মন খোদা বানিয়েছে আটলান্টিক সমেত,
তার কুয়োর জলে কী বা হয় আর...
বাবা নেই, কত বছর যেন হয়ে গেছে—
কোরবানিও আমাকে আর টানে না!
কোরবানি বেঁচে থাকলে আরও অনেক আসবে, অনেক দেখব!
কিন্তু বাবার কোরবানি?
আমার বাবা বলে বলছি না,
নিজের সবকিছু কীভাবে কোরবানি দিতে হয়—
বাবা যেন বলতে থাকে নিত্যদিন, বধির বলে শুনি না!
কোরবানি আসলেই মনে পড়ে বাবা ঘুমোচ্ছে তার বাবার পাশে
নতুবা আমার কখনো মনেই হয় না— বাবা বেঁচে নেই!
*লেখক: এমডি নিউরোলজি (অধ্যয়নরত), ইয়াংজো ইউনিভার্সিটি, জিয়াংসু, চীন