বাবা হারানো স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি

আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম বাবা। বাবা এমন এক বৃক্ষ, যে বৃক্ষের ছায়ায় আস্থার খোরাকে বেঁচে থাকার শক্তি পায় সন্তান। প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা মানে শক্তি আর সাহস। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। এই ভালোবাসা বিশেষ কোনো একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। মা-বাবার জন্য ভালোবাসা প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ। যদিও মা-বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতিবছর নির্দিষ্ট করে একটি দিন পালিত হয়ে আসছে। আসলে মা-বাবার জন্য ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট দিন নেই। সন্তানের জন্য প্রতিদিন বাবা দিবস এবং প্রতিদিনই মা দিবস। বাবা মানে একটু শাসন, অনেক ভালোবাসা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বাবা ছাদ হয়ে থাকেন।

কালবৈশাখীতে হঠাৎ ভেঙে যাওয়া বটবৃক্ষের মতো হয়তো কারও কারও জীবনে বাবা নামের বৃক্ষটি হারিয়ে যায়। তখন বটবৃক্ষের নিচে থাকা গাছগুলোর মতো বাবা-হারা সন্তানদের সব ঝড়-বৃষ্টি-রোদ মোকাবিলা করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়। অনেকে হয়তো ঝড়ের তাণ্ডবে জীবন থেকেই হারিয়ে যায়।

‘বাবা’ একটি শব্দ ও দুটি বর্ণের হৃদয়ের স্পন্দন। বাবাকে নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি, সেটি কয়েক কোটি শব্দ দিয়েও পূরণ করার নয়। আমার বাবা ১৯৮৮ সালের ২২ এপ্রিল (৯ বৈশাখ) দিবাগত রাতে তারাবি নামাজে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত‌্যুকে আলিঙ্গন করে কাঁদিয়ে গেলেন আমাদের। দেখতে দেখতে ৩৩টি বছর চলে গেল। কিন্তু আজও বাবার স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। বাকি জীবনের জন‌্য খুঁজে পাচ্ছি আত্মবিশ্বাস।

আমি গর্ব করি বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা মরহুম সোনাহর আলী কাঁচা মিয়া ছিলেন একজন সৎ, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। অল্প সময়েই তাঁর নামডাক, সুনাম বিশ্বনাথসহ সিলেটের ব্যাপক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের একজন জনপ্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। তিনি পালের চক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। যে কারণে তাকে অনেকে কাঁচা মেম্বার নামে বেশি স্মরণ করে থাকেন।

অন‌্যায়ের বিরুদ্ধে ওনার বলিষ্ঠ ভূমিকা সব সময় মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখনো তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিয়ে গল্প করেন, একজন সন্তান হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা। কোনো দিবসে নয়, যত দিন বেঁচে আছি, বাবাকে নিয়ে আমার প্রতিটি ক্ষণ মধুময় হয়ে থাকবে। ‘বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি’- এই কথাটি কোনো দিন বলা হয়নি। বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর মিস করি প্রতিনিয়ত।

আমি একজন সাহসী ও বিপ্লবী মানুষের সন্তান, যাঁর পরিচয় দিতে গর্বে বুকটা ভরে উঠে। আমার বয়স যখন সাত, বছর তখন বাবাকে হারালাম। বড় হয়ে যখন সমাজে চলাফেরা করি, মাথার ওপর বাবার ছায়া কী জিনিস, হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি। বাবা হারানোর স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। বাবার স্মৃতিগুলো বড় কাতর করে রাখছে। পিতৃবিয়োগের কষ্ট এভাবে আমাকে আচ্ছন্ন করবে, তা ভাবিনি। বাবা সব সময় আমাদের নিয়ে গর্ব করতেন। আমরা চার ভাই চার বোন ও মা আছেন। আমি সবার ছোট। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই ফারুক আহমেদ আমাদের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করে আজও তিনি পিতার মতো সবাইকে একসঙ্গে আগলে ধরে রেখেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন, আমিন।

লেখক: মো. আলম হোসেন, বেলজিয়াম