‘বাঙাল মুল্লুকে এসে আয়ু শেষ’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

বাতাসে আর ফেসবুকে দুই মন্তব্য দেখার পর মনে মনে ভাবছি, এবার কিছু লেখা যেতে পারে। ইশতিয়াক রুপু আহমদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাইডেন ভাই ধন্যবাদ। তুষা শিন্নী ও বনরুটি চলে এসেছে।’

বাতাসে শোনা গেল, ‘ও বাইডেন ভাই, কে বলেছে জোয়ানকি দেখাতে?’

আরম্ভ করা গেল না, নতুন নতুন সাবজেক্ট এসে ভিড় শুরু করল। এর মধ্যে হাসির এক পশলা মিষ্টি (?) বয়ান সব মনোযোগ কেড়ে নিল। তাকে বললাম, ওই গল্পটা এবার লিখি, ‘কে ডরান না বউকে?’

-ওটা আর নতুন নয়, সবাই না হলেও জানে অনেকেই।

-তবুও লিখব।

এ সময় মেসেঞ্জারে কল। গিয়াস সাহেব কোনো ভূমিকা ছাড়াই শুরু করলেন, দুই শ্রেণির লোক বেয়াদব। এক. অতি জ্ঞানী, দুই. মূর্খ। অতি জ্ঞানীরা অজ্ঞদের অবজ্ঞা করে, উপহাস করে কথা বলে।

বললাম, প্রকৃত জ্ঞানীরা বিনয়ী হয়। ঔদ্ধত্য থাকে না। সংস্কৃত ওই প্রবাদ শুনেননি?—‘বৃক্ষ নত হয় ফলভারে আর মানুষ বিনয়ী হয় জ্ঞানভারে।’

আর মূর্খের কথা বলছেন, এটা...ফোনের ওপারে কেউ নেই।

ফিরে আসি লেখায়। হ্যাঁ, কি নিয়ে লেখা যায়?

কোথায় ছিলাম? এক ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছি। ওখান থেকে বেরোতে হবে, না হয় আজও লেখা হবে না।

মনে পড়ে কচির কথা। স্থপতি ও লেখক আনোয়ার ইকবাল কচি। সম্প্রতি আমার এক লেখার পাঠ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, ভিন্ন স্বাদ, ভালো লেগেছে, তবে খুব কম লিখি।

সত্তর/আশির দশকে যুগভেরীর সাহিত্য আড্ডা থেকে যে কয়েকজন তরুণ লেখক আলোর দ্যুতি ছড়িয়েছেন চারদিকে, কচি তাদের অন্যতম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর বাসিন্দা, একজন সফল স্থপতি এবং লেখক। কচি সম্পর্কে প্রথম আলোর ইব্রাহীম চৌধুরীর মন্তব্যটিই আমার কাছে সবচেয়ে যথার্থ মনে হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘স্থপতি না হয়ে শুধু লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাতে পারতেন।’

কচির প্রতি আমার আশীর্বাদ সব সময়, সর্বক্ষণ।

ভণিতা নয়, সত্য হলো, আলস্য বাসা বেঁধেছে। এক/দুলাইন লিখে আর লিখতে ইচ্ছে করে না। অবশ্য এই আলস্য শৌখিন নয়, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার ফসল। মাঝে-মাঝে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি, যেমন আজ করছি।

কখনো অদ্ভুত সব ভাবনায় পেয়ে বসে। ব্যাখ্যা করছি। এক সময় প্রথম আলোয় লেখা পাঠাতাম কাগজে লিখে। জানতাম না, একমাত্র আমার লেখাটাই তাদের টাইপ করাতে হতো।

একদিন ফোনে ইব্রাহীম চৌধুরী বললেন, মাহবুব ভাই, আপনি পড়ে যান। আমি খানিকটা থতমত। সত্তর দশকে দৈনিক সংবাদের অভিজ্ঞতা উঁকি দিল। বার্তা সম্পাদক সন্তোষ গুপ্ত। আমি নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেটের। কষ্ট করে প্রতিবেদন তৈরি করে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ফোন সংযোগ পেয়ে দিতে যাব, সান্তোষদা বললেন, মাহবুব বলে যাও। আমি দুলাইন পড়ে থেমে যাই। লেখার সময়তো দিতে হবে। সন্তোষদা বললেন, থামছ কেন, পড়ে যাও। আরও কয়েক লাইন পড়ে থামলাম।

-না, থামবে না, পড়তে থাকো, পড়তে থাকো। পুরো প্রতিবেদন পড়ে শোনালাম।

সন্তোষদা বললেন, ঠিক আছে, রাখো।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। কত কষ্ট করে প্রতিবেদন তৈরি করলাম, তার চেয়ে কষ্ট করে ফোন সংযোগ পেলাম। আর এখন দেখছি ছাপাই হবে না। কী আর করা, সন্তোষ গুপ্ত আমার বস, কিছু বলার নেই।

পরদিন আমার চোখ ছানাবড়া, পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলাম হেডিংয়ে পুরো রিপোর্ট হুবহু ছাপা হয়েছে। এ কি করে সম্ভব? সন্তোষদা কি জাদু জানেন? পরে জানলাম, এ ধরনের নোট নেওয়ার দক্ষতা তাঁর ছিল।

ভাবছি, ইব্রাহীম চৌধুরীও কি এভাবে জাদু শিখে ফেললেন। ঘোর কাটল তাঁর কথাতেই।

—মাহবুব ভাই, নতুন প্রোগ্রাম সেট করেছি কম্পিউটারে, আপনি বলে যাবেন, সঙ্গে সঙ্গে টাইপ হতে থাকবে।

বিজ্ঞান নব নব আবিষ্কারে নিবেদিত। যত দিন যায়, সহজ থেকে সহজ প্রযুক্তি মানুষের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়। ভাবছি, এমন প্রযুক্তি যদি আবিষ্কৃত হতো, মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ করে দেওয়া হলো, বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো গুছিয়ে টাইপ হতে থাকল কম্পিউটারে। বাহ, কি চমৎকার। আমার মতো অলসরা বেঁচে যেতো

বিজ্ঞান নব নব আবিষ্কারে নিবেদিত। যত দিন যায়, সহজ থেকে সহজ প্রযুক্তি মানুষের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়। ভাবছি, এমন প্রযুক্তি যদি আবিষ্কৃত হতো, মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ করে দেওয়া হলো, বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো গুছিয়ে টাইপ হতে থাকল কম্পিউটারে। বাহ, কি চমৎকার। আমার মতো অলসরা বেঁচে যেতো।

জানি না, এ ধরনের টেকনোলজি আসবে কিনা। আসতেও পারে। আজ যা কল্পনা, কাল তা সত্য, এটাই তো বিজ্ঞান।

শুরুতে বলছিলাম রুপুর পোস্টের কথা। তুষা শিন্নী ও বনরুটির ইঙ্গিত বুঝতে কষ্ট হয়নি। প্রণোদনার চৌদ্দ শ ডলার পেয়ে বাইডেনের জন্য দোয়া করেছেন অনেকে, আল্লাহ যেন তাঁর আয়ু বাড়িয়ে দেন। নিজ ঘরেই শুনেছি গুণকীর্তন, ‘বড় ভালো লোক, তাঁর ওয়াদা তিনি রেখেছেন।’

আর বাতাসের কথা বাতাসে মিলিয়ে গেলেও কথার সারমর্ম আছে। এয়ার ফোর্স ওয়ানে উঠতে গিয়ে সিঁড়িতে তিনবার হোঁচট খেয়েছেন বাইডেন। একবার পড়ে গিয়ে হাতল ধরে উঠে দাঁড়ান।

হোঁচট খাওয়ার এই দৃশ্যে জনমনে বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট সুস্থ আছেন এবং আটলান্টায় পৌঁছে স্বাভাবিকভাবে তাঁর কাজকর্ম চালিয়ে গেছেন।

বাইডেনের বয়স আশি ছুঁই ছুঁই, আটাত্তর। এখনো তিনি তরুণ-যুবার মতো জগিং স্টাইলে স্টেজে, বিমানে, সভা-সমাবেশে হাজির হন। এভাবে হয়তো প্রমাণ করতে চান, তিনি স্বাস্থ্যবান, প্রেসিডেন্সির জন্য পুরো ফিট।

হাজারো হোক, বয়স যেমন লুকানো যায় না, তেমনি ঢাকা যায় না এর ছাপ। এই বয়সে হাতল ধরে সিঁড়িতে ওঠা-নামা, চলাফেরায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়াই যায়। জোয়ানের মতো চলাচলে নয়, মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আসবে সুকর্মের মাধ্যমে, যেমনটি কোভিড-১৯-এ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এখন চলছে দেশে দেশে করোনার টিকা অভিযান। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে কত খবর। আমি কিছু কিছু নোট রাখি। যেমন—

* বাংলাদেশে যখন টিকা দেওয়া শুরু হয়, তখনো বিশ্বের ১৩০টি দেশে টিকা পৌঁছায়নি। আগে-ভাগে ব্যবস্থা নেওয়ার সুফল ভোগ করে বাংলাদেশ।

* বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক পরুন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মনে রাখবেন, টিকা এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে।

* আল্লাহ যাকে দেন, তাকে ছাপ্পর ফাইড়া দেন। এক টিভি চ্যানেলের খবর: করোনার টিকা তৈরির কাঁচামালের অধিকাংশ পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রে। বিদেশি এক টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মার্কিন সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, কাঁচামাল সরবরাহ যেন নির্বিঘ্ন থাকে।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর এক নম্বর ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।

* বাংলাদেশের বরগুনা জেলায় পাঠানো দুই হাজার ডোজ টিকা প্রয়োগ না করায় ঢাকায় ফেরত এসেছে।

* ফেসবুকের এক বোন তিলোত্তমা আর সালামির এক পোস্ট গত কয়েকদিন খুব আলোচিত হয়েছে। পোস্টটি ছিল, ‘ধরেন আমি করোনার টিকা নিলাম। কিন্তু কোনো ছবি তুললাম না, ফেসবুকে পোস্ট করলাম না। সে ক্ষেত্রে কি টিকা কাজ করবে?’

না, আজ আর গল্প বলা হবে না। ‘কে ডরান না বউকে'—গল্পটি অন্যদিন হবে।

এখন মার্চ মাস চলছে।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। সব শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ ও গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে একাত্তরের এক ছোট্ট সত্য ঘটনার উল্লেখ করব।

চৌহাট্টায় সিলেট মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল। এই হাসপাতালেই বর্বর পাক হানাদারেরা নৃশংসভাবে হত্যা করে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমেদসহ নয়জন চিকিৎসাকর্মীকে।

আমার এক নিকটাত্মীয় ইরশাদ ভাই চাকরি করতেন এখানে। তার কাজ ছিল বহির্বিভাগে আগত রোগীদের নাম, বয়স, ঠিকানা রেজিস্ট্রি খাতায় লিপিবদ্ধ করা।

এক পাকিস্তানি সৈন্য রোগী হিসেবে এল চিকিৎসা নিতে। যথারীতি নাম-ঠিকানা লেখা হচ্ছে। বয়স জিজ্ঞেস করতেই উর্দুতে সে যা বলল, তার বাংলা সারমর্ম হচ্ছে: বয়স? বয়স দিয়ে কি হবে? বাঙাল মুল্লুকে এসে আমার আয়ু শেষ হয়ে গেছে। ২০/ ২৫/৫০ এর মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? কোনো পার্থক্য নেই। তোমার যা মনে আসে, ২৫/৫০ যেকোনো একটা লিখে রাখ। উঁহু বয়স? বয়স খতম হয়ে গেছে।