যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের পাড়ি জমানোর গল্প অনেক পুরোনো। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব এখনো অনেক কম। জাতীয় পর্যায়ে নেই কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি। অঙ্গরাজ্যসহ স্থানীয় প্রশাসনে কিছু প্রতিনিধিত্ব থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। এই প্রেক্ষাপটেই এবার বড় অগ্রগতি হলো। জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চার পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন চার বাংলাদেশি। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বড় আশার খবর।
জো বাইডেনের প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া চার বাংলাদেশির মধ্যে রয়েছেন রুমানা আহমেদ, জেইন সিদ্দিক, ফারাহ আহমেদ ও কাজী সাবিল রহমান। সর্বশেষ নিয়োগ পেয়েছেন সাবিল। ৩৮ বছর বয়সী সাবিল হোয়াইট হাউসের এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট ডিভিশনে ইনফরমেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ফারাহ আহমেদ নিয়োগ পেয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লি উন্নয়ন সচিবালয়ের আন্ডার সেক্রেটারির চিফ অব স্টাফ পদে। আর বাংলাদেশি মার্কিন জেইন সিদ্দিক হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার পদে নিয়োগ হয়েছেন। রুমানা আহমেদ দীর্ঘ চার বছরের বিরতির পর হোয়াইট হাউসে ফিরছেন।
মার্কিন প্রশাসনে যে চার বাংলাদেশি নিয়োগ পেলেন, তাকে শুধু পেশাগত অর্জন বলা যাবে না। এটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক অর্জন। এই পেশাগত ও রাজনৈতিক অর্জনের পথে এই চারজনের প্রস্তুতিতে এক বিরাট মিল রয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন আগে, তারপর সেই অর্জিত যোগ্যতা দিয়েই এগিয়ে গেছেন সামষ্টিক রাজনৈতিক লক্ষ্যের দিকে।
নিউইয়র্ক নগরে জন্ম নেওয়া কাজী সাবিল ব্রুকলিন ল’ স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘ডেমজ’ নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নরসিংদীর সন্তান ফারাহ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ও নিউজার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল’ স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া জেইনের কর্মজীবন শুরু হয় ইউএস সুপ্রিম কোর্টের জজ ইলেনা ক্যাগন ও ইউএস কোর্ট অব আপিলের জজ ডেভিড ট্যাটেলের সঙ্গে কাজের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ তাঁদের প্রত্যেকেই আগে উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন, কাজের মধ্য দিয়ে এই যোগ্যতার পরিসরকে বাড়িয়েছেন এবং একই সঙ্গে রাজনীতির ময়দানে হাঁটতে শুরু করেছেন। এসবই এক জোট হয়ে তাঁদের সাফল্যের পথকে মসৃণ করেছে।
বাংলাদেশি এই চারজনের সাফল্যের সূত্রটি অন্যদের অনুধাবন করা জরুরি। বিশেষত যারা জন প্রতিনিধিত্ব বা এমন কোনো অবস্থানে পৌঁছাতে চান, তাঁরা এই বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কারণ, দিন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিত্ব বা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কোনো পদে যেতে হলে এবং সেখানে থেকে নিজ কমিউনিটিসহ সবার জন্য কাজ করতে চাইলে কিছু মৌলিক যোগ্যতা অর্জন করতেই হয়। আগামী দিনে এই চার বাংলাদেশি প্রশাসনের আরও উচ্চ পর্যায়ে আসীন হবেন এবং বাংলাদেশি মার্কিনদের অনেকেই এই পথে এগিয়ে যাবে—এটাই প্রত্যাশা।