বাংলাদেশ-মাল্টা: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেলো আবেলার সঙ্গে এ কে আব্দুল মোমেন
মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেলো আবেলার সঙ্গে এ কে আব্দুল মোমেন

ভূমধ্যসাগরের বিশাল বুকে ক্ষুদ্র একটি দেশ মাল্টা। সরকারি নাম মাল্টা প্রজাতন্ত্র। ছোট ও সুন্দর—এ দুটি বিশেষণ পুরোপুরি এ দেশটির জন্য প্রযোজ্য। ভূমধ্যসাগরের আরামদায়ক আবহাওয়া, পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব গোছানো শহর, মানুষের পর্যটকবান্ধব মন, অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো এবং আকাশ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগব্যবস্থা দেশটিকে পর্যটকদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।

দেশটির আয়তন মাত্র ৩২১ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা সাড়ে চার লাখের মতো। এই অল্প মানুষ নিয়েই মাল্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ।

ছোট আয়তন ও অল্প মানুষের দেশ মাল্টা। অথচ এ দেশে পর্যটকের সংখ্যা শুনলে বিস্মিত হতে হয়। সাড়ে চার লাখ লোকের দেশে প্রতিবছর ভ্রমণ করে ২৬ লাখ মানুষ। এতেই বোঝা যায়, পৃথিবীর ভ্রমণপ্রেমী মানুষের কাছে মাল্টা খুবই পছন্দের একটি জায়গা।

ইউরোপে গ্রীষ্মকাল এলেই পর্যটকেরা ভিড় করেন মাল্টার বন্দরে। ভূমধ্যসাগরের পানি আছড়ে পড়ে মাল্টার সমুদ্রতটে। সৈকতে চলতে থাকে নানান দেশের মানুষের আনন্দ–উৎসব মেলা। সূর্য ডুবে গেলে এই পর্যটকেরা ভিড় জমান রেস্তোরাঁয়। নয়নাভিরাম ও পর্যটনবান্ধব এই দ্বীপ দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস যে পর্যটন হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এই দেশের মানুষের গড় আয় পিপিপির মাপে ৪৮ হাজার ডলারের বেশি। স্পষ্টতই আয়তন বা সম্পদের অপ্রতুলতা মাল্টার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা হয়নি। সীমিত আকার ও সম্পদ নিয়েই এই দেশ এগিয়ে গেছে উন্নতির দিকে। এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগের এক মেলবন্ধনের জন্য। এই যুগল চলার ফলে বিগত দশকের অর্থনৈতিক মন্দা এড়িয়ে দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মাল্টার এই পথচলা বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ যেমন এশিয়ায় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে পরিণত করেছে, তেমনি মাল্টাও ইউরোপে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিস্ময় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। দুই মহাদেশের দুই উন্নয়ন সাফল্যগাথা সময়ানুগ ও যথাযথ কূটনৈতিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে দুই দেশের নাগরিকদের ভাগ্যোন্নয়নে সত্যিকারের ভূমিকা রাখতে পারে।

ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ ও মাল্টার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। যার সূচনা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাল্টার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেন। সেই দিক দিয়ে মাল্টা বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সময় থেকেই আমাদের বন্ধু। ১৯৭২ সালে মাল্টা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই যেসব দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদের মধ্যে মাল্টা অন্যতম। পরে ১৯৭৯ সালে অনাবাসী রাষ্ট্রদূত নিয়োগের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সমীহ আদায়ে সক্ষম হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কূটনীতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রয়েছে সক্রিয় ও বলিষ্ঠ পদচারণ।

এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মাল্টার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বেগবান হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশ একে অপরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দুই দেশের রয়েছে অভিন্ন অবস্থান। এর ফলে দুই দেশের মধ্যেকার পারস্পরিক বোঝাপড়া দৃঢ়তর হয়েছে।

এ বছর মাল্টার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্ণ হলো। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বছরে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মাল্টা সফর করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর।

প্রথমত, এটি বাংলাদেশ ও মাল্টার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম সফর।

দ্বিতীয়ত, এই সফরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেলো আবেলার সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এই বৈঠকে তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা নিয়েও কথা বলেন।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাল্টা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হয় ও রাজনৈতিক পর্যায়ে বিদ্যমান সুসম্পর্কের বাস্তব প্রয়োগের জন্য উচ্চপর্যায়ে অব্যাহত যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মুস্কাট বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যমান সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান।

মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেলো আবেলার সঙ্গে এ কে আব্দুল মোমেন
মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেলো আবেলার সঙ্গে এ কে আব্দুল মোমেন

চতুর্থত, এই সফরকালে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনৈতিক পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনা বিষয়ে ও দুই দেশের কূটনৈতিক একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

পঞ্চমত, এই সফরকালে বাংলাদেশ ও মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মাল্টা চেম্বার, ট্রেড মাল্টা ও এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ-মাল্টা বিজনেস ফোরামে যোগ দেন। এই ফোরামে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মাল্টার শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এই ফোরামে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি তাঁদের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও মাল্টার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন গতি লাভ করেছে। উন্নীত হয়েছে এক নতুন উচ্চতায়। শীর্ষ নেতৃত্বের পারস্পরিক বোঝাপড়া কূটনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের রাজনৈতিক বোঝাপড়া দৃঢ়তর হয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে আন্তরিক সহযোগিতা দৃশ্যমান হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে সহযোগিতা বিদ্যমান আছে। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা সম্প্রসারিত হতে পারে।

ক. মাল্টার শক্তিশালী পর্যটন খাত ও দেশব্যাপী চলমান অবকাঠামো নির্মাণ খাত বাংলাদেশি দক্ষ, অদক্ষ পেশাজীবীদের জন্য কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। প্রায় পাঁচ শ বছরের প্রাচীন মাল্টার রাজধানী ভেলেতার মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধন এবং ক্রমবর্ধমান পর্যটন খাতের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলমান নির্মাণশিল্পে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। বর্তমানে মাল্টায় কয়েক শ বাংলাদেশি কাজ করছেন। শান্ত, পরিশ্রমী মনোভাব ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে বাংলাদেশি নাগরিকেরা স্থানীয়দের আস্থাভাজন হয়েছেন। যার প্রতিফলন ঘটে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের আয়োজিত সভায় মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সস্ত্রীক উপস্থিতি। এই সভায় স্থানীয় দুজন মেয়রসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও যোগ দিয়েছিলেন।

খ. আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মাল্টার দক্ষতা বিশ্বে সুপরিচিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও মাল্টা সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করতে পারে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হবে।

গ. ক্ষুদ্র দেশ হলেও মাল্টা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও ইউরোপে সর্ববৃহৎ জাহাজ নিবন্ধনকারী দেশ। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জাহাজ নির্মাণশিল্প মাল্টার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।

ঘ. ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নিবন্ধনের জন্য বহুজাতিক ও রপ্তানিকারক দেশসমূহের কাছে মাল্টা ব্যাপক জনপ্রিয়। ইউরোপের বাজারে আমাদের ওষুধ সামগ্রী প্রবেশে ক্ষেত্রে মাল্টার এই দক্ষতা কাজে লাগতে পারে। এককথায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউরোপে বাংলাদেশি ওষুধশিল্পের বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করতে পারি।

ঙ. মাল্টা চেম্বারে আয়োজিত ফোরামে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনার সূত্র ধরে কার্যকর সহযোগিতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সেক্টর চিহ্নিত করার বাস্তবানুগ ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি নয়। দুই দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় এই পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

চ. মাল্টা ও বাংলাদেশের পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্র অর্থনীতি (যা ব্লু ইকোনমি নামে সমধিক পরিচিত), জনশক্তি উন্নয়ন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে।

ছ. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও মাল্টার মধ্যে রয়েছে নিবিড় সহযোগিতার ইতিহাস যা নিয়ে দুই দেশ গর্ব করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ অনেক আন্তর্জাতিক বিষয়ে দুই দেশের মতের সাদৃশ্য ও অভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষত জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের সদস্য হওয়ার সুবাদে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যকার সহযোগিতা এই সম্পর্ককে করেছে বহুমাত্রিক। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাল্টা বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন দিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রীতি ও সৌহার্দ্যের এই বন্ধন আরও দৃঢ় হবে এটাই প্রত্যাশা।

জ. পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মাল্টার স্পিকারের বৈঠককালে দুই দেশের সংসদে ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো, এই সফরের এক মাসের কম সময়ের মধ্যে মাল্টা সংসদ মাল্টা-বাংলাদেশ সংসদীয় ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠন করেছে। অচিরেই আমাদের সংসদেও বাংলাদেশ-মাল্টা সংসদীয় ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠিত হবে এবং সংসদীয় কূটনীতি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট ইতিবাচক মনোভাব কাজে লাগিয়ে বাস্তবমুখী ও সময়োচিত পদক্ষেপ নিলে ঐতিহাসিক এই সফরের সাফল্য ঘরে তোলা সম্ভব হবে। দ্রুততম সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বার্ষিক পর্যালোচনা সভা ও মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনে যেমন নতুন গতির সঞ্চার করবে তেমনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির লড়াইয়ে ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী ভূমধ্যসাগরের বুকে অবস্থিত ছোট্ট এই দ্বীপদেশ আমাদের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। আর এই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের বহুমুখী ও গতিশীল পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে মাল্টার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের পর প্রকাশিত একটি মূল্যায়নে মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেলো আবেলা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বছরে আমাদের সম্পর্কের এই নতুন উচ্চতায় উন্নীত হওয়ার আনন্দ সময়ে একে বলেছেন, ‘লাইফ বিগিন্স অ্যাট ফরটি’ অর্থাৎ প্রকৃত জীবন শুরু হয় ৪০ বছর বয়সে। আমাদের প্রত্যাশা, এই নবযাত্রায় দুই দেশের মানুষ পারস্পরিকভাবে উপকৃত হবে। তাহলেই দুই দেশের মধ্যেকার প্রীতির সম্পর্ক একটা স্থায়ী ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
---

লেখক গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও মাল্টা প্রজাতন্ত্রে অনাবাসী হাইকমিশনার।