বাংলাদেশের সঙ্গে দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ইতালির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রথম অর্থনৈতিক কূটনীতি’ সপ্তাহ পালনের অংশ হিসেবে গত ৩০ জুন বাংলাদেশ দূতাবাস, রোম বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রসারের জন্য এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। স্থানীয় এক হোটেলে এ আয়োজন করা হয়েছিল।

ইতালি, মন্টেনিগ্রো ও সার্বিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সুসংবাদ উপস্থিত সবাইকে জানান। দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান ইতালি ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতিশীলতা আনয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি আশাবাদী, ইতালির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরী অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি তাঁর বক্তব্যে ফুড প্রসেসিং, কৃষি, প্রযুক্তি, ব্লু ইকোনমি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র বের করে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান জিয়ানপাওলো নেরি বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র, সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দুই দেশের মধ্যে একটি ‘বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।

দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ইতালির বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীনেতরা বাংলাদেশ বিনিয়োগ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন বলে জানান। টেক্সটাইল, চামড়াশিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি ও ফুড প্রসেসিং, ফুড রিটেলিং ও বেকারি, আইসিটি, সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত পণ্য, সোলার মডিউল, সুনীল অর্থনীতি, রোবোটিকস, স্বাস্থ্যসেবা খাতের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি খাতকে দুই দেশের সহযোগিতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক, ইপিবির মহাপরিচালক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বেসিস, এলএফএমইএবি, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের প্রেসিডেন্ট, ওয়ালটন, ই-ক্যাবের প্রতিনিধি এবং ইতালির পক্ষে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার, ইটা, কনফিন্ডাস্ট্রিয়া, এআইসিই, রিফলাইন, এনি, মাগালদি পাওয়ার, ডিএম ইটালিয়ার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। নেপোলি ও ফ্লোরেন্সে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলরাও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দুই দেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আলোচনায় তুলে ধরেন, যা একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতালির পক্ষে এনি, লিওনার্দো, মাগালধি পাওয়ার, রিফলাইন, ব্রাচি, ইডিওজি, ডিএম ইটালিয়া ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, অ্যাপেক্স, ওয়ালটনের প্রতিনিধিরা তাঁদের আশাবাদ এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় আলোচকেরা একমত হন যে এটি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা পরে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন। এ আলোচনা সভার পরে দূতাবাস ১ জুলাই ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করে, যেখানে ইতালি ও ঢাকা থেকে অনেক সাংবাদিক যোগ দেন।

ইতালি-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইতালি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানিবাজার। বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারের অনুসৃত ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’র ধারাবাহিকতায় সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি