বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের পোস্টার প্রদর্শনী
বাংলাদেশ সাংবাদিক-লেখক ফোরাম, জাপানের ব্যানারে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের পোস্টার প্রদর্শনী। আকাবানে বিভিও হলে ১২ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বাবুল বিশ্বাস সংগৃহীত পোস্টারের এই প্রদর্শনীটি ছিল ভিন্নধর্মী এক আয়োজন। অনেক দর্শক ভিন্ন ধারার এই আয়োজনে কৌতূহল নিয়ে সমবেত হন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. জীবন রঞ্জন মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আলী রিয়াজ, বাংলাদেশ থেকে আগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ও অভিনেতা রহমত আলী, রাধারমণ বর্মণের গান নিয়ে পরিশ্রমী গবেষক ও গায়ক বিশ্বজিৎ রায়। এ সময় জাপানপ্রবাসী সংস্কৃতি ও মিডিয়া কর্মীসহ বিশিষ্ট অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ড. জীবন রঞ্জন মজুমদার উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি জাপানে এ ধরনের অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সব সময় পৃষ্ঠপোষকতার আশ্বাস দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হোসাইন মুনিরের সঞ্চালনায় অধ্যাপক আলী রিয়াজ, রহমত আলী, বিশ্বজিৎ রায় এবং জাপানপ্রবাসী গোলাম সাকলাইন, সুখেন ব্রহ্ম, প্রবীর বিকাশ সরকার, অজিত বড়ুয়া, শরাফুল ইসলাম, কবি মিল্টন, হক মোহাম্মদ ইমদাদুল, নাজিম উদ্দীন, কমল বড়ুয়া, আশরাফুল ইসলাম, মুকুল মোস্তাফিজ, এম এম শাহিন, হারুন রশিদ, মোহাম্মদ জসিম, হাসিনা মনি, সুবর্ণা নন্দী, কাজী ইনসানুল হক ও ফোরাম সভাপতি জুয়েল আহসান কামরুল শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এ দিন জাপান-বাংলাদেশের মধ্যে ৩৬তম ইয়েন ক্রেডিট ঋণ সহযোগিতার চুক্তি হয়েছে। অনুষ্ঠানে চুক্তি হওয়ার কথা জানানো হয়। এ ঘোষণায় সমবেত সবাই হাততালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। এই চুক্তির আওতায় জাপান বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ৮ হাজার ৬ শ কোটি টাকার ঋণ দিবে।
জুয়েল আহসান কামরুল তার বক্তব্যে এতগুলো পোস্টার সুদূর বাংলাদেশ থেকে এনে জাপানপ্রবাসীদের দেখানোর ব্যবস্থা করায় বাবুল বিশ্বাসকে কৃতজ্ঞতা জানান।
বাবুল বিশ্বাস বক্তব্যে তার সংগৃহীত পোস্টারের বিদেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরামের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি জানান তার সংগৃহীত পোস্টারের বিদেশে প্রদর্শনী এই প্রথম। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে তার এই পাগলামি নেশা এখন বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের ইতিহাস সংরক্ষণে একাডেমিক ও আর্কাইভাল মর্যাদা পেয়েছে, এতেই তিনি তৃপ্ত।
উল্লেখ্য, বাবুল বিশ্বাস শুধুমাত্র পোস্টার সংগ্রাহক নন, তিনি বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ওপর অনেকগুলো বইয়ের লেখক, নাট্যকার, পরিচালক, সংগঠক ও আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সমন্বয়ক।
প্রদর্শনী উদ্বোধনের পর দর্শকেরা সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো মঞ্চ নাটকের পোস্টার দেখেন। জাপানপ্রবাসী বেশ কজন নাট্যকর্মী তাদের অভিনীত নাটকের পোস্টার দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে স্মৃতি কাতরতায় উচ্ছল হয়ে ওঠেন। পুরোনো দিনে মঞ্চ নাটকের প্রভাব, স্বাধীনতা উত্তর একদল মুক্তচিন্তার তরুণ তুর্কির হাত ধরে বাংলাদেশে যে নাট্যচর্চার শুরু তা পরবর্তীতে মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে যে নবজাগরণ ঘটিয়েছিল এবং শক্তিশালী শিল্প মাধ্যম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল তা নিয়ে তারা নিজেরাই আলোচনা করতে থাকেন।
প্রদর্শনী আয়োজনে ফোরাম সদস্যরা ছাড়াও মোখলেসুর রাহমান ও আমন্ত্রিত দর্শকদের কয়েকজন পোস্টার লাগানো ও হল গোছানোতে সহযোগিতা করেন। কোনো মঞ্চ ও বসার আয়োজন ছাড়াই তিন ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে দর্শকেরা ভিন্নধারার এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পোস্টার প্রদর্শনীটি সবাইকে আনন্দ দেয়।