পাকিস্তানের বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ৪৮তম মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করেছে। গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) হাইকমিশন প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
ইসলামাবাদে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
এ উপলক্ষে চ্যান্সারি প্রাঙ্গণ লাল-সবুজের প্রতিপাদ্যে সজ্জিত করা হয়। এ ছাড়া, বিজয় দিবসের ব্যানার, পোস্টার ও অন্য নানা সামগ্রী দিয়েও প্রাঙ্গণের শোভা বর্ধন করা হয়।
হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসীদের উপস্থিতিতে চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। পতাকা উত্তোলনের পর হাইকমিশনার একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক চিত্র প্রদর্শিত হয়।
বিকেলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হাইকমিশনার ও হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা পর্বে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবদানের কথা বর্ণনা করেন।
হাইকমিশনার তারিক আহসান তাঁর বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তাঁর আহ্বান, অনুপ্রেরণা ও নেতৃত্বে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সব শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আবেগ ও আনন্দের মিশ্র অনুভূতির দিন। কারণ, এই দিন একাধারে মুক্তির আনন্দ ও শোকের দিন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার জোর দিয়ে বলেন, বস্তুগত সাফল্য অর্জনই এ জাতির একমাত্র লক্ষ্য নয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অনুসারে একটি মানবিক, সমতাপূর্ণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য। যেখানে সব নাগরিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে। সমাজ থেকে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মাদক, দুর্নীতি ইত্যাদি অপশক্তি দূর করার ওপর তিনি জোর দেন। সমাজের এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত অভিযানে সবাইকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত বাংলাদেশের পাকিস্তানি বন্ধুদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের বিজয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তাঁদের উপস্থিতি সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁদের প্রতিশ্রুতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসারই প্রতিফলন।
আলোচনায় দেশটির বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী তাহিরা আবদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তানে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এই বিকৃত ইতিহাসের বিষয়ে গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করে বাংলাদেশের জনগণের ওপর ১৯৭১ সালে সংঘটিত অত্যাচারের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চান। তিনি আরও বলেন, তাঁর মতো অনেক পাকিস্তানিই আছেন যাঁরা সত্য ইতিহাস জানেন। তিনি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানান।
আলোচনার পর জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশ-জাতির সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।। এরপর বিজয় দিবস পর্যন্ত সময়ের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
পরিবেশনায় ঐতিহাসিক স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে পরিবেশিত গানের ছন্দে নাচ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত কবিতা পরিবেশন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি