বাংলাদেশে শ্রম অভিবাসনের জন্য প্রয়োজন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন

বাংলাদেশ থেকে চার লাখেরও বেশি মানুষ শ্রম অভিবাসনের জন্য বা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশে দেশ ছেড়ে যান। এ তথ্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর। কাজেই তাঁদের সমস্যাগুলোর ওপর নজর দেওয়া জরুরি।

জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯০–এর এদিনে সব অভিবাসীশ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক কনভেনশনের ওপর এ প্রস্তাবটি পাস করে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটিকে (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাপী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ঘিরে এ দিবসের উৎপত্তি।

বিশ্বব্যাপী মানব অভিবাসন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে স্থায়ীভাবে বা অস্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের অভিপ্রায়ে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করে। বাংলাদেশি অভিবাসীশ্রমিকেরা দেশ থেকে শুরু করে নানান পর্যায়ে, নানান ধরনের শোষণ, বঞ্চনা, প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও হয়রানির শিকার হন। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেককেই জীবন বা সম্পদ বাজি রেখে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়। অভিবাসন, অভিবাসী ও তাঁদের পরিবার–পরিজনকে নিয়ে হৃদয়ছোঁয়া অনেক প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। অভিবাসন ও অভিবাসীদের সেবার ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার কোনো দৃশ্যমান প্রবণতা নেই। নেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর একসঙ্গে কাজ করার কোনো টেকসই উদ্যোগ। বাংলাদেশে নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনে সরকারের নানাবিদ প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত করা উচিত।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো অভিবাসীদের নিয়ে তথ্যনির্ভর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রায়ই সহায়ক হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম চটকদার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অনেক সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতারণা করারও খবর পাওয়া যায়। নিয়মতান্ত্রিক, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য বাংলাদেশে একটি যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কোভিড-১৯–এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় অনেক অভিবাসী ইতিমধ্যে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন এবং অনিশ্চিত জীবন যাপন করেছেন। তাঁদের চাহিদা নিরূপণ করে পুনর্বাসনের জন্য জরুরি কিছু কার্যক্রম নেওয়া দরকার। দেশে এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ প্রবাসী কর্মীকে বিশেষ ব্যবস্থায় ‘সুরক্ষা’ অ্যাপসের আওতায় এনে টিকা সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তে কিছু ঋণ সুবিধা প্রদান ও পুনর্বাসন কার্যক্রমও নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ঘটনা, যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা নাগরিক ঝামেলার বিষয় হতে পারে। যার কারণে নিজ বাড়ি থেকে সরে যাওয়া ব্যক্তি বা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি হিসেবে তাঁদের বর্ণনা করা যেতে পারে বা নিজ দেশে অভ্যন্তরীণভাবে ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি হতে পারে কেউ কেউ। যে ব্যক্তি অন্য দেশে আশ্রয় চান, সে যদি স্বদেশ ত্যাগের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার হন, তাহলে সে দেশে আশ্রয় চাওয়ার একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারে, যাকে সাধারণত আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। যদি এ ধরনের আবেদনটি সফল হয়, তবে ওই ব্যক্তির আইনগত মর্যাদা হয় শরণার্থীর মতো। সাধারণত এ চলাচল প্রায়ই দীর্ঘ দূরত্বে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘটে থাকে। তবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনও সম্ভব; প্রকৃতপক্ষে, এটি বিশ্বব্যাপী মানব অভিবাসনের প্রভাবশালী একটি রূপ।

বৈশ্বিক প্রায় ৫০০টি দেশের আইওএম-এর অফিস এবং সাব-অফিস রয়েছে। সরকারি, আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় নাগরিক সমাজের অংশীদারদের দ্বারা মাইগ্রেশন–সংক্রান্ত ইভেন্টগুলো সংগঠিত হয়। তাঁদের সমর্থিত বৈশ্বিক ইভেন্টটি মাইগ্রেশন থিম, সামাজিক সংহতি, মর্যাদা, শোষণ ও অভিবাসনের জন্য নির্দেশিত সংহতির বিস্তৃত পরিসরে পরীক্ষা করে। এই নীতির দ্বারা যে মানবিক এবং সুশৃঙ্খল অভিবাসন, যা সমাজকে নানাভাবে উপকার করে।

লেখক: দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, প্রাবন্ধিক