বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন মার্কিন ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি বিশেষ নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট। এতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রধান ও শতাধিক মার্কিন ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারী অংশ নেন। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ, অভ্যন্তরীণ বাজার ও চাহিদা এবং রপ্তানি-নির্ভর শিল্পভিত্তিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির কাতারে তুলে এনেছে। এখানকার অর্থনীতি অব্যাহতভাবে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এক সম্ভাবনার দেশ। এর উন্নয়নশীল বাজার অর্থনীতি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য অভিহিত করে সে দেশের কোম্পানিগুলোকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একটি হাইটেক পার্কে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশ এখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আইসিটি শিল্পের জন্য ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে আইসিটি খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উভয় দেশেরই পর্যাপ্ত নীতিগত সমর্থন রয়েছে।
বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আগ্রহ নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। আমরা চাই, মার্কিন ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ বাড়াক। আমরা চাই, আরও অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুক। তাতে যেমন আমাদের দেশ ও বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে, তেমনি এর সুফল প্রবাসীরাও পেতে থাকবেন।
আমাদের দেশে বিনিয়োগ করার মতো এখন নানা খাত রয়েছে। পর্যটন, আইসিটি ও পোশাক ছাড়াও অন্যান্য খাতে বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আর এই খাতগুলোর বিষয়ে, দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের বিষয়গুলো সরকারের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিদেশিদের নজরে আনতে হবে। প্রবাসীরা যে যেখানে সুযোগ পান, সেখানেই দেশ নিয়ে জানাতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। তাহলে হয়তো বিদেশিরা আরও বেশি বিনিয়োগের আগ্রহ পাবে। এ ছাড়া প্রবাসী হিসেবে আরও যে দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে হয়, তা হলো—বিদেশের মাটিতে আমরা এমন কিছু করব না, যাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। কোনো কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এ কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম।
জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতিবিষয়ক কমিটি সম্প্রতি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে। মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ ও অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্ষমতা দেখিয়েছে বলেই এই উত্তরণ। মার্কিন ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বর্তমান চিত্রের ব্যাপক প্রশংসা করে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের স্মার্ট গভর্নেন্স, মানব সম্পদ, উদ্ভাবনী ব্যবসায়ী উদ্যোগ ও সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স চান।
নতুন যে এই সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তার পরিসর আরও বাড়াতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতেই হবে। তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আরও অসংখ্য বিনিয়োগকারী এ দেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন এবং নিজের দেশে গিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করবেন। এটাই আমাদের কাম্য।