বাংলা ও ইংরেজি গানের শিল্পী শ্বেতার আছে অনেক গুণ

শ্বেতা

জন্ম সিঙ্গাপুরে হলেও শিশু শ্বেতার শিকড় বাংলাদেশে। মা-বাবার সঙ্গে এখন আছে আমেরিকায়। সেখানে নাচগানে সবাইকে মাতাচ্ছে সে। কৃতিত্বের পুরস্কারও পেয়েছে বেশ। এর মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড।

ওর পুরো নাম অর্চিতা পাল নাথ। শ্বেতা বলে ডাকেন আপনজনেরা। জন্ম সিঙ্গাপুরে। শ্বেতা দেড় বছর বয়সে মা–বাবার সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছে আমেরিকায়। ১১ বছর বয়সী শ্বেতা প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডসহ পেয়েছে বেশ কয়েকটি পুরস্কার। ইউএসএ প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশনাল এক্সিলেন্স (গোল্ড) পাওয়ার পেছনে পড়াশোনার পাশাপাশি গান, কবিতা, আর্ট, সামাজিক কাজে অংশ নেওয়াসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মিশিগানে বড় হওয়া শ্বেতা ইংরেজি গানের পাশাপাশি বাংলায় গান গায়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যকলা ভরতনাট্যম নাচের চর্চা করে।

শ্বেতা বর্তমানে আমেরিকার মিশিগানের সারাহ ব্যাংকস মিডল স্কুলের ষষ্ঠ গ্রেডের শিক্ষার্থী। তার পরিবারের অন্য সদস্যরা হচ্ছে বাবা ড. চন্দ্রনাথ, মা স্নিগ্ধা পাল আর চার বছর বয়সী ছোট বোন চিত্রিতা পাল নাথ ওরফে শ্রদ্ধা।

শ্বেতার বাবা চন্দ্রনাথ বলেন, ‘এখানে স্কুলে প্রথম, দ্বিতীয় স্থান অর্জনের চেয়েও যেকোনো অ্যাওয়ার্ড বা স্বীকৃতি দিতে শিক্ষার্থীর স্কুলের বিভিন্ন কার্যক্রমকে মূল্যায়ন করা হয়। এখানে থার্ড গ্রেড থেকে মিউজিক বা গানের ক্লাস বাধ্যতামূলক। আর চতুর্থ গ্রেড থেকে মিউজিকে আগ্রহী এবং তা নিয়ে টেস্টে উত্তীর্ণদের নিয়ে কোরাস গ্রুপ করা হয় (৪র্থ ও ৫ম গ্রেড মিলে)। সেখানে থাকা ৪০-৫০ জনের ক্লাস থেকে আবার লিড ভোকাল নেওয়া হয় ২ থেকে ৩ জনকে। এখানে আমাদের মেয়ে নির্বাচিত হয় এবং ওদের দল ইন্টার স্টেট প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। আমাদের মেয়ে কবিতা লিখে মিশিগান স্টেটে বিভিন্ন ধাপ পার করে বিজয়ী হয়েছিল।’

শ্বেতা

চন্দ্রনাথ জানান, শ্বেতা গানের পাশাপাশি নাচ, কারাতে ও সাঁতারেও দক্ষতা অর্জন করেছে। সম্প্রতি একটি একাডেমিতে গিটার শেখার দ্বিতীয় বর্ষ চলছে তার। শ্বেতার লেখা, সুর করা ও গাওয়া একটি গান এ একাডেমির পরিচালকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
শ্বেতার বাবা আরও বলেন, মেয়ে নাচের জন্য সাউথ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট নাট্যালিয়া একাডেমিতে পঞ্চম গ্রেডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে সে ভরতনাট্যম শেখে।

কারাতে শেখে টাস্ক মার্শাল আর্টস একাডেমিতে, সেখানে চতুর্থ লেভেল শেষ করেছে। সাঁতারের সব ধাপ শেষ করে সাঁতার দলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
মেসেঞ্জারে কথা হয় শ্বেতা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। শ্বেতা বাংলাতেই কথা বলে পুরো সময়। শ্বেতার মা স্নিগ্ধা পাল হাসতে হাসতে বললেন,‘এখানে বাঙালি পরিবারের অন্য বাচ্চাদের মধ্যে আমার মেয়ে সব চেয়ে ভালো বাংলায় কথা বলে। যদিও ওর বাংলা উচ্চারণেও ইংরেজির টান থাকে। তবে ও যখন বাংলা গান গায়, তখন তার উচ্চারণের যে সমস্যা, তা তেমন বোঝা যায় না। বাংলা গান শেখার আগে ওকে আমরা প্রতিটি শব্দের অর্থ বলে দিই। ও ওর মতো করে গানটা শিখে নেয়।’

চন্দ্রনাথ বললেন, ‘আমি বাঁশি বাজাই, গান করি। শ্বেতার মা গান করেন। ঘরে বাংলায় কথা বলি। এখানে বাচ্চাদের মধ্যে বাংলায় কথা বলার চর্চা খুব কম। তবে আমরা ঘরে বাংলা ভাষাটাকে গুরুত্ব দিই। আমরা দেশ ছেড়ে এসেছি। এখন যদি ভাষাটাও ভুলে যাই, তাহলে তো সবই হারালাম। মেয়ে বাংলা নাটক দেখে। বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে ফোনে বাংলায় কথা বলে। ফলে দেশে থাকা আত্মীয়রাও কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।’

পরিবারের সঙ্গে শ্বেতা

চন্দ্রনাথ প্রযুক্তি নিয়ে পিএইচডি করেছেন সিঙ্গাপুরে। আমেরিকান সোসাইটি অফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সের ম্যানুফ্যাকচারিং ইকুইপমেন্ট টেকনিক্যাল কমিটিতে ভাইস চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে চন্দ্রনাথসহ তিনজন মিলে ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে উচ্চ প্রযুক্তি বিষয়ক হাই–টেক কোম্পানি মেইকার ক্রপ চালু করেছেন। এ কোম্পানিতে চন্দ্রনাথ চিফ টেকনোলজিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে শ্বেতার মা স্নিগ্ধা পাল বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিয়ের পর সিঙ্গাপুরে গিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স করেন। তারপর দুই মেয়ের জন্ম, মেয়েদের বড় করাসহ সাংসারিক নানা কাজে পড়াশোনার দিকে আর নজর দিতে পারেননি। আগামী জানুয়ারি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে আবার মাস্টার্স কোর্স শুরু করবেন বলে জানালেন তিনি।

চট্টগ্রামের ছেলে চন্দ্রনাথের কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিল সব সময়। মিশিগানেও গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। জানালেন, করোনাভাইরাসের বিস্তারের পর থেকে বাইরে থেকে কোনো সবজি কিনে খেতে হয়নি। চন্দ্রনাথের দেখাদেখি এখন অন্যরাও কৃষির প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

চন্দ্রনাথ বাংলাদেশের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করা সংগঠন ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’–এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশে পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ নামের সংগঠনের সঙ্গে পিপিই প্রজেক্ট, অক্সিজেন ব্যাংকসহ বিভিন্ন কাজেও এ সংগঠন যুক্ত হয়েছে।
শ্বেতা গান, নাচসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বড় হয়ে প্রকৌশলী বা চিকিৎসক হতে চায় বলে জানায়।