বল্টুর খায়েশ!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

গভীর রাতে বল্টুর ফোন। বিরক্ত হয়ে ফোন ধরলাম। রাতদুপুরে ফোন কেন, জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল দাওয়াত করতে ফোন মামা।
কিসের দাওয়াত?
আমি একটা অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি।
কিসের অনুষ্ঠান?
ওই যে আপনারা যে রকম করেছেন ও রকম আরকি?
আমরা যেটা করেছি, সেটা তোমাকে করতে হবে কেন, কত বিষয় রয়েছে, নতুন কিছু করো। শুধু অনুকরণ কেন? কপি–পেস্ট থেকে বেরিয়ে এসো। আর অনুষ্ঠান করতে যে টাকা লাগবে, ওটা দেবে কে?
স্পনসর পেয়ে গেছি। যার বেজমেন্টে অনুষ্ঠান হবে তিনি কোনো টাকা নেবেন না, শুধু আপনারা নিউজে ওনার নামটা দিলেই উনি খুশি। আর রাতের ডিনার করাবেন এখানের এক বিশিষ্ট নেতা। ওনাকে বলেছি সভায় তিনি থাকবেন প্রধান অতিথি।
এখন তো অনুষ্ঠানে পুরস্কারের একটা ব্যাপার থাকে।
সেটা তো আছেই। তবে এটা কিন্তু ব্যতিক্রম। আমি পুরস্কার দেব দর্শক–শ্রোতাকে। কারণ এখন ছোট বক্তা, বড় বক্তা, বিশেষ বক্তা, প্রধান বক্তা, নেতা, উপনেতা, পাতিনেতা, ভাষণদাতা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও সেগুলো শোনার কোনো মানুষ পাওয়া যায় না। বড় কষ্ট করে জোগাড় করতে হচ্ছে।
তা এই পুরস্কারের টাকা দেবে কে?
মামা আমাদের এলাকার এক মামু আছেন, উনি একটা কিনলে তিনটা ফ্রি দেন, উনি দেবেন। তবে এক শর্তে, তাকে অনুষ্ঠানে বেহালা বাজিয়ে গান গাইতে দিতে হবে। যদিও তিনি জীবনে কোনো দিন গান গাননি।
ভালো। অনুষ্ঠান মনে হয় ভালোই জমবে।
এ অনুষ্ঠানে আমি আমার লেখা ‘সাংবাদিক কেমনে হইলাম’ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করব। কইয়ের তেলে কই ভাজা আরকি।
ভালো, ভালো। তো গান হবে, বক্তৃতা হবে, নাচ হবে না? নাচের সঙ্গে গানের একটা সম্পর্ক আছে না। নাচা, গানা, পিনা।

নাচের একজন শিল্পী পেয়েছিলাম কিন্তু তিনি এত জোরে নাচেন, আসলে নাচেন না ফাল পাড়েন, তাতে বেজমেন্ট ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় বেজমেন্টের মালিক রিস্ক নিতে রাজি হননি।
আর পিনা।
আপনি কি খুশিজলের কথা বলছেন। সেটাও হবে, তবে একটু গোপনে, গ্রিন রুমের পেছনে আরকি, চিপায়–চাপায়, অফিশিয়ালি তো সেটা বলা যায় না।
আর কবিতা পাঠ হবে না।
কী বলেন মামা, কবিতা ছাড়া কি অনুষ্ঠান জমে?
তা কে কে কবিতা পাঠ করবেন?
কবিতা পাঠ করবেন বিশিষ্ট লেখক, প্রাবন্ধিক, কবিরাজ উড়ফু মিয়া ও তার দল।
আর কিছু?
আমরা এবার নতুন একটা বিষয় চালু করতে যাচ্ছি।
সেটা কী?
আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।
ভালো। তবে কাকে দেবে সে পুরস্কার।
কইতর আলী উরফে ঝান্ডু চাচাকে
যতটুক জানি ওনার অতীত ইতিহাস তো ভালো না।
মামা এত কিছু দেখলে তো হবে না। কারণ, ওনাকে যে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হবে, আর্থিক পুরস্কার ও ক্রেস্ট দেওয়া হবে সবকিছু তো উনিই দেবেন।
ভালো। প্রবাসেও দেখলাম কেউ কেউ স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পুরস্কার দিচ্ছে, তোমাদের সে রকম কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি?
মামা আপনি শুধু আগবাড়িয়ে কথা বলেন, সবকিছুই আমাদের মাথায় আছে, সময়মতো সব দেখতে পাবে।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

প্রবাসে থেকেও তোমাদের মাথায় যে এসব আছে জেনে বড় আশাবাদী হই।
মামা, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে একটা দারুণ চমক থাকবে।
সেটা আবার কী?
না মানে করোনাকালে নিউইয়র্ক ও দেশ থেকে আমাদের এলাকার প্রচুর মানুষজন এখানে এসেছেন। ভাবছি, আমাদের এলাকার নামে এখানে একটি সংগঠন করব আর ওই অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য সভাপতি পদে আমার নামটা ঘোষণা করব।
ভালো, আর কিছু?
মামা, দোয়া করবেন।
তা তো অবশ্যই।
ফোনটা রেখে ঘুমাতে গেলাম। একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এল। আমি দেখছি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক সিটির কনান্ট অ্যাভিনিউ ধরে দামি একটি গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে, রাস্তার দুই পাশের মানুষ উঁকি দিয়ে দেখছে আমাদের আগামী দিনের কমিউনিটি নেতা বল্টুকে।