বরফের শহর বুদাপেস্টের গল্প
২০১৮-এর শুরুতে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ৩৮ দিন থাকার পর হঠাৎ করে হাঙ্গেরির দূতাবাস থেকে ফোন আসে। ওপাশ থেকে জানায়, আমার পাসপোর্ট সংগ্রহ করার সাক্ষাৎকারের সময় বেলা দুইটা। যথাসময়ে উপস্থিত হই এবং নথিপত্র সংগ্রহ করে দেখি, হাঙ্গেরির স্টিকারযুক্ত ভিসা খুব সুন্দরভাবে লাগানো পাসপোর্টে। অসম্ভব ভালো লাগার সময় ছিল তখন। পড়াশোনা শেষ হয়েছে মাত্র ৬ মাস। এরই মধ্যেই ইউরোপে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করি। প্রথমবারেই হাঙ্গেরির একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া, সেটা ছিল আমার জন্য বিশাল ব্যাপার। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়টি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি শেষ করে আমার প্রিয় বন্ধু রাজিবুল হাসান সামাদ ও আমি দুজনেই আবেদন করেছিলাম এবং একসঙ্গেই ভিসা হয়ে গেল আমাদের।
তারপর দিল্লি থেকে দেশে ফিরে এসে সবকিছু গোছগাছ করে ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ যাত্রা শুরু করি হাঙ্গেরির উদ্দেশে। টিকিট ছিল রাশিয়ার অ্যারোফ্লেটের। ফলে যাত্রাপথে মস্কো এয়ারপোর্টে আমাদের এক ঘণ্টা বিরতি ছিল। মস্কোতে এসে নামার পরপরই মহাবিপদে, ফ্লাইট মিস করে বসি। পরবর্তী সময়ে নতুন করে মস্কো টু বুদাপেস্টের দুটি টিকিট কিনি, যেখানে আমাদের ফ্লাইটের সময় ছিল রাত ৯টা। যথাসময়ে বিমানে উঠি এবং রাত ১২টা ৩০ মিনিটে এসে বুদাপেস্ট পৌঁছাই।
বুদাপেস্টে ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে এসে দেখি, প্রচণ্ড তুষারবৃষ্টি। এয়ারপোর্টের বাইর থেকে একটি টেক্সি নিয়ে আমাদের গন্তব্যে যাই। ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম, তাই আর একমুহূর্তও ভালো লাগছিল না, দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে ঘুম থেকে উঠি এবং জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি, সবকিছু সাদা হয়ে বরফের চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। সেটা ছিল এক অন্য রকম অনুভূতি।
তখনকার সময়ে বুদাপেস্টে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেই বললেই চলে। যেহেতু আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি এবং অপরিচিত একটি নতুন দেশ, তাই নতুন এলে খাবারের সমস্যায় যে কেউ ভুগতে পারেন, যেমনটা প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের অনুভূত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী সেখানে বসবাস করছেন, তারপরও আগে থেকে সম্যক ধারণা থাকা উচিত। সেখানকার মানুষ অনেক বন্ধুসুলভ।
আমাদের সঙ্গে একজন পরিচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে একটা পিৎজার দোকানে নিয়ে গেলেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমরা যেন টেস্কো থেকে সস্তায় কেনাকাটা করতে পারি, সে বিষয়টিও জানালেন।
রাতের খাবারের জন্য ভারতের রেস্তোরাঁ খুঁজি এবং কাছেই একটি রেস্তোরাঁ পেয়েও যাই। বিরানির অর্ডার করি। বেশ ভালো ছিল তাদের সেবা। খাবার শেষে দ্রুত বাসায় চলে আসি এবং ঘুমিয়ে পড়ি। কারণ, বাইরে প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছিল, সঙ্গে ঠান্ডা বাতাসও।
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই দেখি, সেখানে -৩ ডিগ্রি। সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড় পরে প্রস্তুতি নেই এবং টেস্কোর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি। বাইরে খুব ঠান্ডা বাতাস আর তুষার-বরফ, রাস্তাঘাটে মানুষ নেই বললেই চলে। সারা দিন বুদাপেস্টের আনাচে-কানাচে ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরি। বুদাপেস্টের নামকরা স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম দানিউব নদী। নদীটি বুদাপেস্টকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। যার এক পাশকে ‘বুদা’ এবং আরেক পাশকে ‘পেস্ট’ বলে। মোটকথা, বুদা এবং পেস্ট মিলেই রাজধানী বুদাপেস্ট হয়েছে। দানিউব নদী ছাড়াও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরিয়ান পার্লামেন্ট, বুদা ক্যাসেল, দ্য চেইন ব্রিজ, স্টিফেন ব্যাসিলিকা, বুদা হিলস অন্যতম।
*লেখক: মনির হোসেন পর্তুগাল