দুর্নীতি বাংলাদেশে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। দুর্নীতি প্রতিরোধের অঙ্গীকারও তেমনি বহুল প্রচারিত কথা। দুর্নীতি নিয়ে অনেক জরিপ, লেখালেখি ও আলোচনা হয়ে এসেছে। এখনো হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি; বরং দুর্নীতি আরও ছড়িয়ে পড়েছে।
দুর্নীতি একটি সামাজিক সংক্রামক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ছোটবেলায় দেখেছি, কেউ দুর্নীতি করলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ত এবং সমাজ তাঁকে ঘৃণার চোখে দেখত। এখনো নাম ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখন আর কেউ দুর্নীতিবাজকে ঘৃণার চোখে দেখে না। অর্থাৎ সমাজে দুর্নীতিরও একটা গ্রহণযোগ্যতা হয়েছে। অনেকেই দুর্নীতিকে আর অপরাধ মনে করেন না।
দুর্নীতি প্রতিরোধে দাতাগোষ্ঠীর চাপে অনেক আইনি ক্ষমতা দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করা হলেও কাজের কাজ হয়নি। দুর্নীতিবাজেরা অনেকটা অবাধে দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে এটা যে সম্ভব হচ্ছে, তার কারণ জবাবদিহির অভাব এবং রাজনৈতিক প্রশ্রয়। তাহলে করণীয় কী?
সবচেয়ে বড় করণীয় দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এটা কথার কথা হলে হবে না। রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন জনসমক্ষে দৃশ্যমান হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ওপর থেকে নিচের দিকে। কারণ, সমাজের ওপরতলার ক্ষমতাবানেরাই দুর্নীতির হোতা। তাই বড় বড় দুর্নীতিবাজকে শাস্তি দিয়ে মানুষকে দেখাতে হবে। দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার সাধারণত খুব দীর্ঘায়িত হয়। তাই এ ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। তারপর শুধু উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ থাকবে।
কারও কারও দুর্নীতির তথ্য সরকারের ড্রয়ারে রেখে দিলে হবে না, দেশবাসীকে জানাতে হবে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সম্পদের যে হিসাব নেওয়া হয়, তা প্রকাশ করতে হবে। আবার নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দাখিল করা হয়, তা গোপনে রেখে দিলে তো কোনো লাভ হবে না। প্রকাশ করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতিতে দুর্নীতি হয়। এসব বিষয়ে স্বচ্ছ ও মানসম্পন্ন নীতিমালা নেই। সেগুলো করতে হবে। আর কড়া নজরদারি রাখতে হবে সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটা দুষ্ট ক্ষতে পরিণত হয়েছে। এই ক্ষত সারানোর জন্য সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেই। সরকার কি বোঝে না যে এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক খাত ধ্বংস হচ্ছে, তারপরও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন, বুঝি না। শুধু দুর্নীতি প্রতিরোধের অঙ্গীকার ঘোষণা যথেষ্ট নয়। অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
- এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সিএজি
আরও পড়ুন : দুর্নীতি না কমলে সব অর্জন শেষ