বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে জ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে জ্ঞাপন

সমসাময়িক যেকোনো নেতার চেয়ে চিন্তা ও চেতনায় যোজন যোজন এগিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশকে যেভাবে সাজিয়েছেন, তা অনেকের কাছেই ছিল অভাবনীয় ব্যাপার। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এক অনন্য উচ্চতার নেতা ছিলেন তিনি। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও তার নীতি ও আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। তাঁর দেখানো পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবসে লেবাননের বৈরুতে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। তিনি বঙ্গবন্ধুকে একজন ক্যারিশমাটিক নেতা বলে অভিহিত করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে তাঁর ভূমিকা ও দূরদর্শিতার বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন।

মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। এ সময় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশার অভিবাসী বাংলাদেশিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আব্দুল মোতালেব সরকার
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আব্দুল মোতালেব সরকার

বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। আলোচনায় প্রবাসীরা অংশ নেন।

সমাপনী বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর তুলনা বঙ্গবন্ধু নিজেই। এ রকম মাপের নেতা পৃথিবীতে কালেভদ্রে জন্ম নেন। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি যেসব দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা নিয়ে আজও গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সর্বপ্রথম জনগণের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার সহজ ব্যবস্থা করতে হবে। তাই তিনি কৃষি শিক্ষা ও কৃষি গবেষণার ওপর জোর দেন। কৃষি শিক্ষার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কারণেই দেশের লোকসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলেও দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে স্বাধীনতার পরপরই তিনি প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার মাধ্যমে সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক বিশাল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু আরও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজকে পেছনে রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি নারী উন্নয়নে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সৃষ্টি করেছিলেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। তিনি বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অর্জন তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি প্রবাসীদের জন্য দূতাবাস কী কী সেবা দিচ্ছে সেগুলো প্রবাসীদের অবহিত করেন। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জন্য যে সব কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন প্রবাসীদের কাছে সেগুলোও তুলে ধরেন।

জুবায়ের কবির: বৈরুত, লেবানন।
ছবি: সাগর হাওলাদার ও জহির রায়হান।