বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক

বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক মধুর করতে শাশুড়িকে যেমন ভূমিকা রাখতে হয়, তেমনি রাখতে হয় বউকেও। পরিবার বিষয়ক জার্মান বিশেষজ্ঞ ইংগ্রিড রটের মতে, বউ সব সময় শাশুড়িকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করবে এবং তা তাঁকে বুঝতে দেবে। এতে বউয়ের প্রতি শাশুড়ির মমতা বাড়তে থাকবে। তবে বউ কখনো শাশুড়ি থেকে সে রকম ভালোবাসা আশা করবেন না, যা আপনার মা-বাবা আপনাকে দিয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সাধারণভাবে প্রায় একই রকম। জার্মানিতে দুজন নারীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ থাকলে, বউ-শাশুড়ি কিংবা ননদ-ভাবির মতো সম্পর্ক বলে ঠাট্টা করা হয়। তবে বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সুন্দর রেখে সংসারে শান্তি বজায় রাখা সম্ভব, যদি দুপক্ষই সেটা চায়।

বউ হয়ে যে মেয়েটি শাশুড়িকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন, শাশুড়ি হয়ে সেই মেয়েটিই বউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতে শুরু করেন। তবে বউ-শাশুড়ির প্রতিটা সম্পর্ক যে এমন—এটাও ঠিক নয়। অনেক পরিবারেই এ দুটি মানুষ এমন আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ হন, যা যেকোনো সম্পর্ককে হার মানায়।

আমার বিবাহিত জীবন পনেরো বছরে পা দিয়েছে। আমার শাশুড়িকে আমি ‘আম্মু’ বলেই ডাকি। ৬৫ বছর হলেও দেখতে অনেক বেশি কম বয়স মনে হয়। গায়ের রং যেমন সুন্দর, রুচিতেও তেমনি। রুচির সঙ্গে সঙ্গে মন মানসিকতাও অনেক আধুনিক। আমি একেবারেই শাড়িতে অভ্যস্ত ছিলাম না বিয়ের পর। আমার বিয়ের পরদিন আমাকে তিনি ডেকে বললেন, মাথায় কাপড় দিতে হবে না। চাইলে আমি থ্রি-পিসও পরতে পারি। সত্যি ভীষণ ভালো লেগেছিল।

আমার কিছু খেতে ইচ্ছে হলে আম্মুকে বললে তিনি রান্না করে খাওয়ান। ভালো লাগে ভীষণ। তাঁর হাতের রান্না অসাধারণ। আমার বিশ্বাস, যারা একবার খেয়েছেন, তাঁরা জীবনে ভুলবেন না।

আমার শাশুড়ির ডিপ্রেশনের সমস্যা আছে, কোনো খারাপ খবর নিতে পারেন না। এর চেয়ে কঠিন সমস্যা—কারও কোনো অসুখ শুনলে তাঁর নিজের এমন অসুখ হয়েছে ভেবে নেন। তখন খুব যত্ন করে সামলাতে হয়। চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না ভয়ে। তাঁর ধারণা, ওখানে গেলে অনেকগুলো রোগ ধরা পড়বে। বাচ্চাদের মতো বুঝিয়ে তাঁকে নিয়ে যেতে হয়। এত সাহসী একজন মানুষ। অথচ তখন তাঁকে একেবারেই বাচ্চার মতো মনে হয়, ভীষণ মায়া লাগে।

আমরা পরিবারের সবাই একসঙ্গে গল্প করতে বসলে কথাই নেই। হা হা হি হি-তে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষদের ঘুমের সমস্যা হয়ে যায়। অনেক সময় আমি আর আম্মু গল্প করতে করতে ভোর রাত করে ফেলি। কখনো না ঘুমিয়ে সকালের নাশতা করে শপিংয়ের জন্য বের হয়ে যেতাম।

আমি যখন বইমেলার জন্য দেশে যেতে চাইলাম, তখন ভাবছি, ছেলেকে সঙ্গে নেওয়া যাবে না। কারণ, আগেরবার ওকে নিয়ে দেশে গিয়েছিলাম। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ভীষণ ভাবনায় পড়ে গেলাম ছেলেকে এক মাসের জন্য রেখে যাব—শাশুড়ি কীভাবে নেবেন। সবার প্রথমে আমাকে আম্মুই সাহস দিলেন—‘তুমি যাও। তোমার ছেলেকে তোমার মা আর আমি দেখে রাখব।’ ভরসার এই একটি লাইন জীবনে অনেক সাহস দেয়।

জীবনে এমন অনেক ভালো স্মৃতি আছে আম্মুর সঙ্গে। আমাদের গল্প হয় বন্ধুর মতো। নভেম্বরের এগারো তারিখে আম্মুর জন্মদিন। দুটি বেলুন আর একটা কেক নিয়ে যদি তাঁর জন্মদিন পালন করি বা বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, বাচ্চাদের মতো আনন্দ দেখি তাঁর চোখে। ভীষণ ভালো লাগে দেখতে।

বিশ্ব মা দিবসে আমার আম্মুকে জানাই অনেক অনেক ভালোবাসা। দীর্ঘজীবী হোন, আমাদের মাথার ওপর এমনই ছায়া হয়ে থাকুন সারা জীবন। দোয়া করি, আম্মু আপনি সুস্থ থাকুন; হাসিখুশি থাকুন।