বই মেলা দেশে-বিদেশে

বইমেলা বাঙালির মনোজগতে বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে। একুশে গ্রন্থমেলা হিসেবে পরিচিত বই মেলা আমাদের প্রাণের সঙ্গে জড়িত। তাই আমরা একে প্রাণের মেলা হিসেবে অভিহিত করে থাকি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পুরো ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলে এই মেলা। ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমি চত্বরে ছোট পরিসরে চট বিছিয়ে বই বিক্রির আয়োজনের মাধ্যমে আজকের এই অমর একুশের গ্রন্থমেলার গোড়াপত্তন করেন। দীর্ঘদিন বাংলা একাডেমি চত্বরে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এই মেলা হয়ে আসছে। আজ পুরো বাংলা একাডেমি ছাপিয়ে এই বইমেলার পরিধি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প বলতে একসময় হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থাকেই বোঝাত। আজ বাংলা একাডেমির চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একুশের বইমেলা দেখলে যেকোনো বইপ্রেমী মানুষই গর্ববোধ করেন। মেলা চলাকালে মাসব্যাপী নজরুল মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও আলোচনা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী ও ক্রেতার সমাগম ঘটে মেলায়। মেলায় সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের বিশেষ সম্মাননা দেয় বাংলা একাডেমি। এই মেলাকে ঘিরে লেখক, প্রকাশকসহ প্রকাশনা শিল্পের মানুষের ঘুম-নিদ্রা বন্ধ হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি আসার আগে বাংলা বাজার ও কাঁটাবন এলাকায় উৎসবের ভাব চলে আসে। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীজুড়ে বিচিত্র সব মেলার আয়োজন চলে আসছে, সেসব মেলার জিনিসপত্রে বৈচিত্র্যের কোনো কমতিও হয়তো নেই, তারপরও দৃশ্যত বৈচিত্র্যহীন হওয়া সত্ত্বেও বইমেলা নিয়ে প্রতিটি দেশের মানুষের মধ্যে প্রবল এক আবেগ কাজ করে।

এ ছাড়া ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা, মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার, লন্ডন বুক ফেয়ার, কায়রো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার, বুয়েন্স এরিস ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার (আর্জেন্টিনা), বলগ্না চিলড্রেনস বুক ফেয়ার, ইতালিসহ নানা দেশে প্রতি বছরই বড় বড় বই মেলা হয়। প্রতিটি দেশের বই মেলা সেসব জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর কথা বলে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের পার্থক্য হচ্ছে, পুরো এক মাসব্যাপী বই মেলা আর কোথাও হয় না। কেবল বাংলাদেশেই এত দীর্ঘসময় বই মেলা হয়। মাসব্যাপী চললেও বই মেলার আবেদন যেন ফুরায় না। তাই তো একুশের গ্রন্থমেলার শেষ দিনও পাঠক আশা করে, বই মেলার দিন বৃদ্ধির কথা কখন মাইকে ঘোষিত হবে।

কলকাতা বই মেলা

বাংলা একাডেমির একুশের গ্রন্থ মেলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তক মেলাও বাংলাভাষী মানুষের প্রিয় বইমেলা হিসেবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। পাঠক উপস্থিতির দিক থেকে পৃথিবীর সেরা বইমেলা বলা হয় আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তক মেলাকে। এর প্রচলিত নাম কলকাতা বইমেলা। ১৯৭৬ সালে শুরু হয় এই বইমেলা। সারা বিশ্বের বইমেলার মধ্যে এর স্থান তৃতীয়। প্রতি বছর এই মেলায় প্রায় তিন লাখ পাঠক সমাগম হয়।

জানুয়ারির শেষ বুধবার থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম রোববার পর্যন্ত ১২ দিনব্যাপী মেলায় বাংলাদেশের জন্যও আলাদা একটি প্যাভিলিয়ন থাকে। কলকাতা বইমেলার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা কর্তৃপক্ষ একে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। বই বিক্রির প্রাধান্য না দিয়ে এই মেলায় পাঠক উপস্থিতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার দিক থেকে বিবেচনা করলে কলকাতা বইমেলার স্থান তৃতীয়। প্রতি বছর আড়াই লাখের বেশি পাঠকের সমাগম হয় এই মেলায়। আগে বইমেলাটি—ময়দানে অনুষ্ঠিত হলেও ২০০৯ সালের পর থেকে এই মেলা সায়েন্স সিটির পাশে ‘মিলন মেলা’য় অনুষ্ঠিত হয়। ৩ বছর ধরে মেলাটি সল্টলেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি মূলত শীতকালীন মেলা।

কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবস নামে একটি দিনও বরাদ্দ থাকে। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রচুর সংখ্যক লেখক-সাহিত্যিক-শিল্পী এই মেলায় অংশ নেন। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে নন্দন চত্বরে ‘বাংলাদেশ বইমেলা’ নামে আরেকটি বইমেলার আয়োজন শুরু হয়েছে। কলকাতা বইমেলার সাফল্য এসেছে মূলত পশ্চিমবঙ্গের ছোট ছোট বই মেলার সাফল্যকে কেন্দ্র করে, যেমন শিলিগুড়ি বইমেলা, আসাম বইমেলা ইত্যাদি। কলকাতার বই মেলার জনপ্রিয়তা এতটাই যে, ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় এটি গেস্ট অব অনারের মনোনয়ন পায়। আশি থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত কলকাতায় বছরে দুটি বইমেলা হতো—একটির উদ্যোক্তা ছিল প্রকাশনী ও বই বিক্রেতা সমিতি, আরেকটি হতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে যার নাম ছিল ‘গ্রন্থমেলা’।

নিউইয়র্ক বাংলা বই মেলা

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে একটানা ২৯ বছর ধরে বেসরকারি উদ্যোগে বাংলা বইমেলা হচ্ছে নিউইয়র্কে। ১৯৯২ সালে একুশের প্রথম প্রহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রথমবারের মতো একুশের প্রথম প্রহর ও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুক্রবার নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে এবং শনি ও রোববার কুইন্সে বই মেলা উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে ‘একুশের প্রথম প্রহর ও বইমেলা’ নামে কার্যক্রম শুরু করে মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ। প্রথম বছর বইমেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। ২০০৬ সালে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন গঠিত হওয়ার পর এর নাম পরিবর্তন হয়ে ‘আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা’ নামে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলে। এ সময় নিউইয়র্ক ছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাস, নিউজার্সিতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সাল থেকে এই মেলা ‘নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা’ নামে পরিচিত। প্রতি বছরই একজন লেখক এই বইমেলা উদ্বোধন করে থাকেন। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ লেখকদের মধ্যে ড. আনিসুজ্জামান, তপন রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান খান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, হুমায়ূন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, রাবেয়া খাতুন, ইমদাদুল হক মিলন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, পবিত্র সরকার, সমরেশ মজুমদারসহ প্রখ্যাত লেখক-সাহিত্যিকরা এই বই মেলা উদ্বোধন করেছেন। বাঙালির চেতনা মঞ্চের কিছু তরুণকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বজিত সাহা এটি শুরু করলেও ২০০৭ সাল থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বইমেলাটি পরিচালনা করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে কার্যকরী কমিটি গঠন করে মুক্তধারার ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চলে। ২০১৯ সালে নির্বাচনে তিন বছর মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ফেরদৌস সাজেদীন, সিইও বিশ্বজিত সাহা। কো-চেয়ারম্যান নিনি ওয়াহেদ, হাসান ফেরদৌস ও ড. নজরুল ইসলাম। ২০২০ সালের নিউইয়র্ক বইমেলার আহ্বায়ক হলেন ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ। ৩১ সদস্যের কার্যকরী কমিটি এটি পরিচালনা করে।

লন্ডন বই মেলা

লন্ডনে বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ঐক্য ও সেতুবন্ধন রচনা করে এই বহুজাতিক সমাজে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারকে আরও বেগবান করতে সংগঠনটির জন্ম। এ লক্ষ্যে সংগঠক গোলাম মোস্তফা, ছড়াকার দিলু নাসের ও কবি মাশুক ইবনে আনিসের উদ্যোগে উদীচীর সভাপতি গোলাম মোস্তফাকে আহ্বায়ক, মাশুক ইবনে আনিসকে যুগ্ম-আহ্বায়ক ও দিলু নাসেরকে সদস্যসচিব করে ২০০৯ সালে গঠন করা হয় প্রথম আহ্বায়ক কমিটি। এটি গঠনের পরপরই ২০১০ সালের ১১, ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী ‘বাংলা একাডেমি বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। উদ্বোধন করে সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। বাংলাদেশ থেকে যাগ দিতে আসেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর শামসুজ্জামান খান।

২০১১ সালে ‘বাংলা একাডেমি বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয় ১৭, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর। এই মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল ‘বাংলা একাডেমির প্রবাসী লেখক পুরস্কার’-এর প্রবর্তন। সে বছর পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত বইমেলার উদ্বোধন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। শেষ দিনে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে কবি ও কথাসাহিত্যিক কাদের মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়।

বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার থেকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার। ২০১৪ সালে ‘বাংলা একাডেমির প্রবাসী লেখক পুরস্কার-এ ‘প্রবাসী শব্দটি নিয়ে কয়েকজন লেখক প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল ‘প্রবাসী’ কথাটি দ্বারা দেশের বাইরে অবস্থানরত লেখকদের আলাদা করে দেখা হচ্ছে। পরিণামে পুরস্কারটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার’। সে বছর বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ৫-৭ ডিসেম্বর পূর্ব লন্ডনের গ্রোভ রোডস্থ, দ্য আর্ট প্যাভিলিয়নে।

২০১৬ সালে বহির্বিশ্বে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে লন্ডনের ‘বাংলা একাডেমি বইমেলা’র নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। বইমেলা থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহারের পর নতুন নেতৃত্বে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ। ২০১৭ সালের ১৫ ও ১৬ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের ওয়াটারলিলিতে সপ্তম বারের মতো বাংলাদেশ মেলা ও সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই লন্ডনে বইমেলা ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়। বিলাতের বাঙালির কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৮ সালে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ-এর বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারে। সে বছর বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আবদুল মতিন সাহিত্য পুরস্কার’ এবং সমাজসেবা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য ‘তাসাদ্দুক আহমদ পুরস্কার’ নামে দুটি পদকের প্রবর্তন করা হয়।

‘সম্মিলিত সাহিত্য পরিষদ’ থেকে ‘সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য’ ২০১৯ সালের ৮ এবং ৯ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারে বই মেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে শততম জন্মবার্ষিক উপলক্ষে মেলাটি উৎসর্গ করা হয়।

একই বছর ২০১৯ সালের ১৬ ও ১৭ নভেম্বর গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ইউকে চ্যাপটারের আয়োজনে জাতির জনককে নিবেদিত বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ইস্ট লন্ডনের গ্রিন লাইব্রেরি মিলনায়তনে।

টরন্টো বই মেলা

২০০৭ সাল থেকে টরন্টোর বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অন্যমেলা ইনকের উদ্যোগে শুরু হয় টরন্টো বইমেলা। এই মেলাটির মূল সংগঠক শেখ এস আহমেদ সাদী। লেখক-সাংবাদিক জসিম মল্লিকসহ টরন্টোর বেশ কয়েকজন লেখক অন্যমেলাকে সহযোগিতা করেন। এক যুগ ধরে এই মেলাটি কোন কোন বছর একদিন, আবার কোন বছর দুই দিন অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ট্রিয়েল বই মেলা

২০১৩ সাল থেকে কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটির আয়োজনে দিনব্যাপী বইমেলার মাধ্যমে মন্ট্রিয়েলে বইমেলা শুরু হয়। সাবেক ছাত্রনেতা জিয়াউল জিয়া এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বইমেলা আয়োজিত হয়। প্রথম দুই বছর একদিনের বইমেলা হলেও পরবর্তীতে দুই দিন করা হয়। গত বছর থেকে বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ থেকে লেখক-সাহিত্যিকেরা এই মেলায় যোগ দিচ্ছেন।

ওয়াশিংটন বই মেলা

আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন শহরে ২০১৮ সালে ৩০ জুন থেকে ওয়াশিংটন বই মেলা শুরু করে ‘আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশন’। প্রথম বছর একদিন হলেও ২০১৯ সালে তারা দুই দিনব্যাপী বই মেলার আয়োজন করে স্থানীয় একটি হোটেলে। ওয়াশিংটন বইমেলার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন আনোয়ার ইকবাল। তবে এই বইমেলা হওয়ার পেছনে জীবক কুমার বড়ুয়া, গোলাম দস্তগীর প্রমুখ ব্যক্তির অবদান রয়েছে।

টোকিও বই মেলা

বাংলাদেশ লেখক-সাংবাদিক ফোরাম ২০১৮ সাল থেকে জাপানের টোকিও শহরে প্রথমবারের মতো বইমেলা শুরু করে। প্রথম বছর একদিন বইমেলা হলেও দ্বিতীয় বছর দু দিনব্যাপী বইমেলা হয়। নাট্যাভিনেতা ও সংস্কৃতি কর্মী মুকুল মোস্তাফিজ এবং লেখক জুয়েল হাসানসহ লেখালেখি ও সংস্কৃতি মনস্করা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

সিডনি বই মেলা

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সময় কয়েক ঘণ্টার বইমেলা হয়ে থাকে। ২০০৪ পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে অনুষ্ঠিত হতো। এরপর থেকে ৮ ঘণ্টা করে হয়ে আসছে। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এই মেলাটির আয়োজিত সংগঠন বর্তমানে একুশে একাডেমি। প্রথম দুই বছর অনুষ্ঠিত মিশুক প্রকাশনের নামে। এই বইমেলাটির উদ্যোক্তা হলেন নেহাল নিয়ামুল বারী।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বঙ্গবন্ধু মেলা

জার্মান বাংলা সোসাইটি নামে একটি সংগঠন ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলার পরে কয়েক ঘণ্টার জন্য বই ডিসপ্লে করার ব্যবস্থা করছে কয়েক বছর ধরে। ২ বছর এই বই মেলাটির নাম বঙ্গবন্ধু বইমেলা নামকরণ করা হয়েছে বলে উদ্যোক্তা হামিদুল খান জানান।

শেষ কথা

১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়ার পর প্রতি বছরই তিন দিন, কখনো ৪ দিন নিউইয়র্ক বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর যখন পৃথিবীজুড়ে কোভিড–১৯, তখন মুক্তধারা ফাউন্ডেশন পৃথিবীতে প্রথম ভার্চুয়াল বাংলা বইমেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। বাংলাদেশের ২১টি ও পশ্চিমবঙ্গের ৪টি প্রকাশনা সংস্থা এই মেলায় যোগ দিচ্ছে। সারা পৃথিবীর মানুষ আন্তর্জাতিক মূল্যমানের ওপর ৫০ শতাংশ কমিশনে এই মেলায় তাদের পছন্দের বই কিনতে পারবে—এটি হচ্ছে এই বইমেলার অন্যতম আনন্দের বিষয়। পাঠকেরা নিশ্চিন্তে পেপল ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তাঁদের পছন্দের বই কিনতে পারবেন। অক্টোবরে লন্ডন বুক ফেয়ারও ভার্চুয়াল বইমেলা করতে চলেছে বলে আমাদের জানিয়েছেন।

ভার্চুয়াল বইমেলার ফলে এ বছর মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২৯তম বই মেলায় সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী উদ্যোক্তাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তাদের একে অপরের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ও কলকাতা বুক ফেয়ারের আয়োজক সংস্থা গিল্ডের সভাপতির সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের বাংলা বই মেলার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সেতুবন্ধনের পর্ব তৈরি হলো, সেটিই ২৯তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার অনেক বড় অর্জন।