যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশের নতুন কনস্যুলেট হচ্ছে। এ নিয়ে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁদের দাবি, ফ্লোরিডার মায়ামিতে হবে এই কনস্যুলেট। অথচ রাজ্যে বাংলাদেশিরা বাস করেন সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায়, যেখান থেকে গাড়িতে মায়ামি সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ। মিশিগানের মতো বাংলাদেশি জনবহুল কমিউনিটিতে কনস্যুলেট না করে কম বাংলাদেশির ফ্লোরিডায় কেন কনস্যুলেট হচ্ছে, তাঁর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অধ্যুষিত রাজ্য হচ্ছে মিশিগান। মোটর সিটি খ্যাত মিশিগান সব সময়ই বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য। নিউইয়র্ক নগরের পর যে নামটি বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, সেটি হচ্ছে মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট নগর।
মিশিগান রাজ্যে প্রায় ৭৫ হাজার বাংলাদেশি মার্কিন বসবাস করে। গত বছর করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে নিউইয়র্ক, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আরও প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি মার্কিন মিশিগানে স্থানান্তরিত হয়।
মিশিগানে বেশির ভাগ অভিবাসী নতুন আসেন, তাঁদের সিংহভাগ বাংলাদেশি পাসপোর্ট বহন করেন। তাই, কনস্যুলেটের সবচেয়ে বেশি কাজ এই শহরে হয়ে থাকে। আর দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে প্রবাসীরা মিশিগানে কনস্যুলেটের স্থায়ী অফিসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশের কনস্যুলেট মিশিগানে হোক—মিশিগানপ্রবাসীরা যেমন চান, আমরাও চাই তাঁদের দাবি বিবেচনায় নেওয়া হোক। কারণ, মিশিগানে মাত্র ১৫ মাইলের মধ্যেই সিংহভাগ বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাই, এই রাজ্যে কনস্যুলেট হলে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন ৪০/৫০ হাজার প্রবাসী।
মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও মিশিগানের মতো বাংলাদেশি জনবহুল কমিউনিটিতে কনস্যুলেট হচ্ছে না। কম বাংলাদেশি থাকলেও কনস্যুলেট হচ্ছে ফ্লোরিডায়।
আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে ফ্লোরিডার মায়ামিতে কনস্যুলেট সার্ভিস অফিস পুরো রাজ্যের নাগরিকদের সুবিধা দিতে পারবে না। অন্যদিকে মিশিগানে মাত্র ১৫ মাইলের মধ্য প্রবাসীরা এই সুবিধাটা পাবেন। তাই, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আশ্বাস দিয়ে থাকেন, সেটাও আবার বিবেচনায় নেওয়া উচিত। নিশ্চয়ই তখন যৌক্তিক কোনো বিবেচনায় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সেই যৌক্তিক বিবেচনা আবারও খতিয়ে দেখা উচিত।
২০১৯ সালে মিশিগান এক্সপ্রেস নামের একটি জনপ্রিয় ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পাঁচ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছিল কনস্যুলেট স্থাপনের দাবিতে। যে শহরে বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ নামে একটি সড়ক রয়েছে, সেখানে স্থায়ী কনস্যুলেট কেন হবে না—তা এখন সাধারণ নাগরিকের প্রশ্ন।
প্রবাসে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কমিউনিটিতে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের অভাব। এই মিশিগানেও প্রায় ৫০টি সংগঠন থাকলেও সেগুলোর মাঝে কোনো ঐক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন হলে দাবি পূরণ হওয়া সহজ হয় না। তাই, বিদেশ বিভুঁইয়ে সবাইকে এক হয়ে নিজেদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকেও জনদাবি বিবেচনায় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।