ফুটবল তুমি কথা কও

ছবি: বাফুফে

দেশের জন্য যুদ্ধে প্রাণ দেওয়া অনেক অনেক বড় এবং মহৎ কাজ। তবে এটা সবার জন্য নয়। আমার মতে, কারও কারও দায়িত্ব হচ্ছে প্রাণ দেওয়া এবং কারও দায়িত্ব হচ্ছে বেঁচে থেকে বিজয় নিশ্চিত করা।

এখন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। ‘স্বাধীনতা’ আসলে কী? ধরুন, আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি বা কোনো কাজ করতে যাচ্ছি। সেই সিদ্ধান্ত বা কাজে যদি স্বার্থ, লোভ, হিংসা, খারাপ উদ্দেশ্য বা এ–জাতীয় কোনো কিছু মিশ্রিত থাকে, তখন আসলে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে স্বার্থ, লোভ, হিংসা বা খারাপ উদ্দেশ্যের কাছে হারিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বা কাজটি করছি। আর আমার দৃষ্টিতে স্বাধীনতা হচ্ছে কোনো পরম ইচ্ছা পূরণ করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কাজ করার ক্ষমতা, যাতে কোনো স্বার্থ, লোভ, হিংসা বা এ–জাতীয় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য মিশ্রিত থাকবে না।

আমার উদ্দেশ্য যেমন শিক্ষা এবং খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষকে এই স্বাধীনতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। যখন মানুষ স্বাধীন হবে তারপর আসবে মহত্ত্ব। মহত্ত্ব একটা খুবই সুস্বাদু বিষয়। আমরা এ স্বাদ গ্রহণ করতে পারি নিজের অন্তরে। স্বাধীনতা অর্জন করে, নিজের স্বার্থ বলি দিয়ে যখন অপরের কল্যাণে কিছু করতে শিখব, তখনই আমরা মহত্ত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে পারব। আমার দৃষ্টিতে মহত্ত্ব একটা আসক্তি। একবার কেউ মহত্ত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে পারলে সহজে সেটা ছাড়া যায় না। এটা স্বর্গের মতো অনুভূতি জাগায় মনের ভেতর। একবার এ স্বাদ পেলে বারবার সেই স্বাদ খুঁজতে মন চাইবে যে কীভাবে আরও পেতে পারি। আর কাকে বলব সোনার মানুষ, তাদের ছাড়া যারা এ মহত্ত্ব খুঁজে? এভাবে আমরা দেশের মানুষকে সোনার মানুষে রূপান্তরের চেষ্টা করতে পারি। আর মানুষ সোনার হলে তখন দেশ তো এমনিতেই সোনার হয়ে যাবে। দেশের বাহ্যিক পরিকাঠামো ঠিক করতে হয়তো অনেক সময় লাগবে এবং সেগুলোর জন্যও অনেক অনেক পরিকল্পনার দরকার আছে, কিন্তু আমরা এ রকম মহৎ হতে শিখলে এই দুঃখ, দুর্দশা এবং অনিশ্চয়তার দেশ মুহূর্তেই সুখ-শান্তি, হাসি–আনন্দের দেশে পরিণত হবে।

আর কী চাই? সোনার বাংলা গড়তে সহায়তা করতে চাই। কীভাবে গঠিত হবে? সোনার বাংলা গঠিত হবে সোনার মানুষ দিয়ে। আমরা সোনার (আদর্শবান) না হলে বাংলা কোনো দিনও সোনার হবে না। আমারও লক্ষ্য যেহেতু বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা, তাহলে এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক কাজ হচ্ছে আমাদের সোনার মানুষে পরিণত করা। সেটা কীভাবে সম্ভব? আমাকে অনেকেই বলে, ‘বাঙালি জাতিকে ঠিক করা অসম্ভব।’ আমি ভেবেছি, ‘এই লোকটা/লোকগুলো বাঙালি জাতির সৃষ্টিকর্তা নন যে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলবে। এদের কোনো অধিকার নেই এটা বলার। চেষ্টা এবং সৃষ্টিকর্তা চাইলে অবশ্যই সম্ভব। যাহোক, তাহলে আমরা কীভাবে এই দেশের মানুষকে সোনার মানুষে রূপান্তরের চেষ্টা করতে পারি? উত্তর হচ্ছে সুশিক্ষা এবং খেলাধুলার মাধ্যমে। সুশিক্ষাই আমাদের প্রধান মাধ্যম, এ জন্যই পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয়েছিল, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’

এতক্ষণ যা লিখেছি জানি না এগুলো শুধু স্বপ্ন কি না তবে আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি আবার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি। জেগে জেগে যারা স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে শত ভাগ চেষ্টা করে তাঁরাই জীবনে সার্থক হয়। আমি স্বপ্ন দেখি সোনার বাংলার, আমি বিশ্বাস করি ভিশনারি নতুন প্রজন্মদের।
একবার আমার সুইডিশ শাশুড়ি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তো সাঁতার ও ফুটবল খেলে বিশ্বকে চমকে দিতে পার। কারণ, বাংলাদেশ মানেই বর্ষা, আর বর্ষা মানেই সাঁতার কাটা আর ফুটবল খেলা, তারপরও এই খেলার প্রতি তোমাদের মমতা নেই কেন, কারণটি কী?’ আমার বলার কিছু ছিল না, তবে লেগেছিল হৃদয়ে সেদিন কথাটি, আর সেই থেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি কীভাবে খেলাধুলায় বাংলাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা যায়।

একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে আমার সবচেয়ে কষ্টের জায়গাটি হলো বাংলাদেশ ফুটবল। লজ্জাজনক হলেও সত্য, গত দুই দশকে ফুটবল র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান সবার তলানিতে। অথচ এ ফুটবল নিয়ে আমাদের একটি স্বর্ণালি অতীত ছিল। একসময় বাঙালির রক্তের সঙ্গে মিশে ছিল ফুটবল। বৃহত্তর এশিয়া পর্যায়ে সফল না হলেও অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে আমাদের দাপট ছিল। সাফ ফুটবল কিংবা দক্ষিণ এশিয়া গেমসে অন্তত শিরোপা জয় করার যোগ্যতা ছিল এবং জয়ও করেছি। তখন বাংলাদেশ ফুটবলে ছিল অসংখ্য তারকা খেলোয়াড়।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
ফাইল ছবি

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাঙালির একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল ফুটবল। আর এই ফুটবলের গোড়াপত্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নিজেও তরুণ বয়সে অসাধারণ ফুটবল খেলতেন। ১৯৭২ সালে ফুটবল ফেডারেশন গঠনের পর তিনি নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাধীন বাংলায় প্রথম ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন। তিনি নিজে সেই ম্যাচ মাঠে বসে থেকে উপভোগ করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ছোট-বড় সব দলের খেলা সশরীর মাঠে উপস্থিত থাকতেন। বাংলাদেশ দল কোনো আন্তর্জাতিক সফরে গেলে ধানমন্ডি ৩২-এ অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে যেতেন। শেষবার ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার সময় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বলেছিলেন, ‘ভালো করে খেলবি, স্বাধীন দেশের মান-সম্মান যেন থাকে। আমি কিন্তু খেলাধুলার সব খবর রাখছি।’

ফুটবল নিয়ে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকলেও বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি তার ঠিক বিপরীত। সবকিছু যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। স্কুল পর্যায়ের ফুটবল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল কোনো কিছুই যেন ঠিক নেই। মাঠপর্যায় থেকে দক্ষ খেলোয়াড় বাছাই এবং তৈরি করার কোনো বালাই যেন। দেশসেরা ক্লাবগুলোর আগের মতো জৌলুশ নেই। নিম্নমানের খেলায় ফুটবল মাঠে দর্শকের কোনো উপস্থিতি নেই।
সত্যি বলতে আমাদের ফুটবল প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন’–এর কোথাও গলদ রয়েছে।

অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর বেহাল দশার কথা বলতে লজ্জা হয়। যেখানে ফুটবল নিয়ে আলোচনা হবে, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হবে, পরিকল্পনা হবে সেখানে অবৈধ ক্যাসিনো, মাদক আর দেহ ব্যবসায় সকাল-দুপুর মত্ত থাকে। দুঃখের বিষয়, বঙ্গবন্ধু যে ক্লাবের হয়ে ফুটবল মাঠ মাতিয়েছেন, সেই ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ান্ডার্স ক্লাব’ অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি।

বাংলাদেশ ফুটবলের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের কিছু অগ্রদূত প্রয়োজন। কিন্তু হতাশার বিষয় এই যে আমি এবং আমার বন্ধু যখন ফুটবল নিয়ে সংগ্রাম করছি, ঠিক তেমন একটি সময় অনেকে ফুটবল কর্মকাণ্ড নিয়ে হাসি-তামাশা এবং ট্রল করে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করছে। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে তার জন্য যেমন সমালোচনার প্রয়োজন আছে, তেমনি ভালো কাজ করলে অবশ্যই সেটা প্রশংসার দাবিদার। যদি কারও কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ, তাকে হয়তো উৎসাহ না দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে আমাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। আমরা ফুটবল নিয়ে যে কাজগুলো করছি, এসব কাজ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়, নিঃসন্দেহে এটা আমাদের ফুটবলের জন্য সামান্য হলেও উপকার বয়ে আনবে।

ছবি: বাফুফের সৌজন্যে।

আমিও হুমায়ূন আহমেদের মতো বলতে চাই, ‘সবাই বলে আমাদের শারীরিক যোগ্যতা নেই। আমাদের দম থাকে না। তার মানে কী? ফুটবল খেলতে হলে দৈত্য হতে হবে? আর আমাদের দম না থাকলে কাদের থাকবে? সবাই বলে আমাদের খেলোয়াড়রা ফুটবলের আধুনিক কৌশল জানেন না। কৌশল জানেন না, শিখবেন। আমরা কি বেকুবের জাত যে শিখতেও পারব না?’

বাংলাদেশ ফুটবল নিয়ে আমার এবং আমার বন্ধু সামসুদ্দিনের একটি স্বপ্ন আছে। জানি না এই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে কি না, তবু স্বপ্ন দেখতে দোষ কী!
মনে কি পড়ে সেদিনের কথা, আমি লিখেছিলাম? আজও চোখে ভাসে সে দিনের স্মৃতি, আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা।

লার্নিং ফর্ম লার্নার কনসেপ্ট

গায়েতা। ইতালির একটি ছোট্ট শহর। নিরিবিলি এ শহর ঘিরে আছে ফুল আর ফল, সঙ্গে তার চারপাশে সাগরের জলের স্পর্শ এবং কিছু পুরোনো ঐতিহ্য। যার আদলে তৈরি হয়েছে এক মনোরম এক মানব বাসস্থান। সারা দিন ঘোরাঘুরি ও ছেলের টেনিস খেলার শেষে সাগরপাড়ে চলাফেরা সঙ্গে লবণাক্ত নীল জলে সাঁতরে বেড়িয়ে সত্যিই এক আনন্দদায়ক সময় কেটে যাচ্ছে ইতালির শহরতলি গায়েতায়।

প্রতিদিনকার সকালে আমার ছেলে টেনিস খেলোয়াড় জনাথনকে নিয়ে টেনিস কোটের দিকে যাওয়ার সময় সাগরপাড়ে কিশোর বয়সী ছেলেটাকে ফুটবল নিয়ে তার ব্যস্ততার এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে যায়।

যখন ফিরছি তখনো তাকে ও তার সঙ্গে আরও বন্ধুর জটলা বল নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে চোখ আটকে যায়! একদিন সন্ধ্যায় সাগরে সাঁতার কেটে ফেরার পথে এগিয়ে গেলাম। তাদের সঙ্গে কথা হলো কিশোর বয়সী সেই ফুটবল নিয়ে সারা দিন সময় কাটানো ছেলেটার সঙ্গে।

সে জানাল তার নাম লুকা। লুকার বয়স ১৪ বছর। সারা দিন ফুটবল খেলছে সাগরের পাড়ে মনের আনন্দে। নানা ধরনের টেকনিক স্কিলসের ওপর চলছে তার প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা।

যেন সেই ‘লার্নিং ফর্ম লার্নার কনসেপ্ট’-এর এক মনোরম দৃশ্য। লুকা এবং তার বন্ধুরা স্বপ্ন দেখছে একদিন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার, তাই প্রতিদিন তারা সাগরের পাড়ে স্কুল শেষে ফুটবল খেলে।

লুকার এক বন্ধুকে এই শহরের সাগরপাড় থেকে এভাবে করেই খুঁজে পেয়েছিল ফুটবল জহুরিরা। এখন সে ইতালির জাতীয় দলে খেলছে।

অনুশীলন ও অধ্যবসায় একটি মানুষকে নিখুঁত করে তোলে, জানায় এই লুকা এবং তার বন্ধুরা। তারা তাদের স্বপ্নের সঙ্গে এমন গতিতে ছুটে চলছে, যেন স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকবে না, তা সত্যি হয়ে যাবে।

সে আশাবাদী যে তাদেরও কপাল খুলে যাবে। সাগরের পাড়ে, নদীর ধারে, রাস্তায় চলতে চলতে খেলতে খেলতে কবে একদিন শোনা যাবে এসব লুকা নামের একটি রত্নের নাম, যা ছড়িয়ে পড়বে ফুটবল গ্যালারিজুড়ে এমনকি দেশ ও দেশান্তরে।

এমনটিই ঘটে এবং ঘটেও ছিল। সুইডেনের বিয়োন বোর্গ, স্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, আর্জেন্টিনার মেসি, স্পেনের রাউল, আরও কত নাম, যারা ভালোবেসেছিল তাদের হৃদয় দিয়ে এই খেলাকে এবং তাদের ধ্যানে, জ্ঞানে, মনে ও প্রাণে একটিই চিন্তা ছিল, তা হলো ফুটবল দিয়েই একদিন জয় করবে তারা বিশ্বকে সত্যি করবে বুনে চলা স্বপ্নকে।

পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন খুঁজলে একই শিক্ষা বা জ্বলন্ত উদাহরণ দেখতে পাই। তা হলো মা–বাবা ছাড়া সেই রাখাল বালকটি ভালোবাসার সেতু তৈরি করেছিলেন মহান স্রষ্টার সঙ্গে খুবই অল্প বয়সে। শেষে হলেন তিনি সারা বিশ্বের এক অনুকরণীয় ব্যক্তি মুসলিম নেতা এবং মহান আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।

আবাহনীর জার্সি গায়ে মোনেম মুন্না, ১৯৯২
ছবি: মোনেম মুন্নার পারিবারিক অ্যালবামের

পৃথিবীর যা চিরকল্যাণকর তার সবকিছুর মূলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কেউই রাজপরিবারের সন্তান ছিলেন না, তাঁরা সাধারণ পরিবারের সন্তান এবং তাঁরাই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। তাই আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে, বাংলার মানুষকে, তাঁরাও করতে পারবেন অসম্ভবকে সম্ভব।

মানুষ নিজের সবকিছু বিক্রি করে দেয় ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার জার্মানির পতাকা বানাতে, যে দেশের মানুষ আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থনে মারামারি করে ১০ জন আহত হয় এবং এমনকি আর্জেন্টিনা দলের পরাজয়ের দুঃখে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারে, সেই দেশ কেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় নিজেদের দল পাঠানোর স্বপ্ন দেখতে পারবে না?

আমাদের দেশের সন্তানেরা বিশ্বকাপ একবারে আনতে না পারলেও আমরা অংশগ্রহণ করে আশপাশের অনেক দেশের থেকেও ভালো করতে পারব এবং মাথা উঁচু করতে পারব। পারব সোনার বাংলার পতাকাকে তুলে ধরতে সারা বিশ্বের মাঝে, যেন—বল বীর, বল উন্নত মম শির...।

বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করবে। খেলার শুরুতে সবাই জাতীয় সংগীত গাইতে থাকবে। তখন আনমনে আমি দাঁড়িয়ে যাব, গায়ের লোমগুলো হয়তো দাঁড়িয়ে যাবে, আমার দুই চোখ বেয়ে পড়বে শত আনন্দের অশ্রুধারা, বুকে হাত রেখে তাল মিলিয়ে গাইতে থাকব—‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!’
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাঙালির একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল ফুটবল। আর এই ফুটবলের গোড়াপত্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নিজেও তরুণ বয়সে অসাধারণ ফুটবল খেলতেন। ১৯৭২ সালে ফুটবল ফেডারেশন গঠনের পর তিনি নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাধীন বাংলায় প্রথম ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন। তিনি নিজে সেই ম্যাচ মাঠে বসে থেকে উপভোগ করেছেন। ফুটবল নিয়ে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকলেও বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি তার ঠিক বিপরীত। সবকিছু যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। স্কুল পর্যায়ের ফুটবল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল, কোনো কিছুই যেন ঠিক নেই। মাঠপর্যায় থেকে দক্ষ খেলোয়াড় বাছাই এবং তৈরি করার কোনো বালাই যেন। দেশসেরা ক্লাবগুলোর আগের মতো জৌলুশ নেই। নিম্নমানের খেলায় ফুটবল মাঠে দর্শকের কোনো উপস্থিতি নেই।

বাংলাদেশ ফুটবলে ছিল অসংখ্য তারকা খেলোয়াড়। মোনেম মুন্না ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মোনেম মুন্না শুধু বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তাঁর চোখধাঁধানো নৈপুণ্যময় খেলা এবং জাতীয় দলের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তিনি বাংলাদেশের ফুটবল আইকনে পরিণত হয়েছিলেন। সেই ১৯৯১ সালে রেকর্ড ২০ লাখ টাকায় তিনি আবাহনীর সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তখনকার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্মান কোচ অটো ফিস্টার মোনেম মুন্না সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘He was mistakenly born in Bangladesh.’

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাঙালির একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল ফুটবল। আর এই ফুটবলের গোড়াপত্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নিজেও তরুণ বয়সে অসাধারণ ফুটবল খেলতেন। ১৯৭২ সালে ফুটবল ফেডারেশন গঠনের পর তিনি নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাধীন বাংলায় প্রথম ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন। তিনি নিজে সেই ম্যাচ মাঠে বসে থেকে উপভোগ করেছেন।

*লেখক: রহমান মৃধা, সুইডেন।

**দূর পরবাসে লেখা পাঠাতে পারেন [email protected]