ফিলিপাইনে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালিত
বিনম্র শ্রদ্ধা ও যথাযথ মর্যাদায় এবং নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ফিলিপাইনের ম্যানিলাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস ২০২১ পালন করেছে। গত রোববার সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে দূতাবাস মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্বে জাতির জনক ও তাঁর শহীদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, জাতির জনকের সংগ্রামমুখর জীবন, আদর্শ ও কর্মের ওপর আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যথাযথ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামালসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা পর্বে রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার রূপকার এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনোই আপস করেননি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ।
শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহত সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া পাঠ করা হয়।
দিবসটির সর্বশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন ওয়েবিনারে জাতির জনকের জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’-এর ফিলিপিনো ভাষায় অনূদিত সংস্করণ ‘Bangabandhu: Nasa Puso Natin Magpakailaman’-এর উদ্বোধন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটির অনুবাদক ও ফিলিপাইনের ডি লা সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের (সেন্ট বেলিন্দ কলেজ) ডিজাইন আর্টস বিভাগের চেয়ারপারসন টিমোথি ডাকানে এবং একই প্রতিষ্ঠানের আর্ট ও কালচার ক্লাস্টারের পরামর্শক ডা. সুনিতা মুখি আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’-এর ফিলিপিনো ভাষায় অনুবাদ ও প্রচারের মাধ্যমে ফিলিপাইনের জনগণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবে এবং তাঁর সংগ্রামী জীবনাদর্শ সাধারণ ফিলিপিনোদের ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হবে। তিনি ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ অনুবাদের জন্য টিমোথি ডাকানে ও তাঁর দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
টিমোথি ডাকানে প্রামাণ্যচিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’-এর অনুবাদকালে বাংলাদেশের জাতির জনক সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান অর্জনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, ঐন্দ্রজালিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতার এক অমূল্য সংকলন এ প্রামাণ্যচিত্র।
ডা. সুনিতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন এবং মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ তাঁকে ফিলিপাইনসহ সমগ্র বিশ্বের শান্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক করে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘ভিজিট বাংলাদেশ’–এর আওতায় বাংলাদেশ সফরকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নানান গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। আলোচনা শেষে প্রামাণ্যচিত্র ‘Bangabandhu: Nasa Puso Natin Magpakailaman’ দূতাবাসের অনলাইন সামাজিকমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
এ ছাড়া, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ১০০ দরিদ্র ফিলিপিনো পরিবারকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়। ম্যানিলায় লকডাউন থাকায় পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে স্থানীয় জিপনির (ফিলিপিনো অটো) চালক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পাওলিনো কুইরোস দূতাবাস প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রদূত আসাদ আলমের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ খাদ্যসহায়তা গ্রহণ করেন। পরে উক্ত খাদ্যসহায়তা সংগঠনটির সদস্য চালকদের পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি