ফাইযানের ইউটিউবিং ও পে-পল মাফিয়া

লেখকের থার্ড গ্রেড গ্র্যাজুয়েট ফাইযান। ছবি: লেখক
লেখকের থার্ড গ্রেড গ্র্যাজুয়েট ফাইযান। ছবি: লেখক

ফাইযান আমার থার্ড গ্রেড গ্র্যাজুয়েট ছেলে। সেদিন অফিস হতে আসতেই অনেক উত্তেজনা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বলল,

-জানো, আমি আজ আমার প্রথম ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেছি।
-তাই নাকি? এ তো অনেক বড় ঘটনা!
-তোমার মোবাইল কই? ইউটিউবে সার্চ দাও “Faizan the Challenger”
-কি নিয়ে ভিডিও দিয়েছ?
-গেম, কমেন্ট্রি দিতে পারেনি, সাউন্ড রেকর্ডিংয়ে সমস্যা করছে...

এরপর ফাইযান আমার মোবাইলে নিয়ে ভিডিওটা বের করে দেখাল। প্রায় ১৫ মিনিটের, দু’জনে দেখলাম। লাইক দেওয়ানো এবং সাবস্ক্রাইব করানোও হলো!

-তুমি কেমনে ইউটিউব চ্যানেল খুললে? আগে তো বলনি?
-না, আমি আম্মুকে বলে ওর জি-মেইল থেকে অ্যাকাউন্ট করেছি।
-আচ্ছা। তুমি কি জান যারা ইউটিউবে বানিয়েছে তাঁদের একজন বাংলাদেশি?
-হ্যাঁ, তুমি বলেছিলে আগে...
-ওর নাম মনে আছে?
-না
-ওর নাম জায়েদ করিম। ও যখন কলেজ শিক্ষার্থী তখন অনলাইনে গায়িকা জ্যানেট জ্যাকসনের একটি ভিডিও খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে ইউটিউব বানানোর আইডিয়াটা পেয়েছিলেন!
-তাই নাকি? অনেক ইন্টারেস্টিং তো!
-হুম...ও প্রথম ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করেছে যার নাম হচ্ছে ‘Me at the zoo’. ভিডিও টি দেখেছ?
-না, দেখিনি তো!
-ইউটিউবে সার্চ করলে পাবে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে জায়েদ করিম ও ইলোন মাক্স এক সময় একই টিমে কাজ করতেন
-তাই নাকি? টেসলা ও হাইপার লুপের ইলোন মাক্স?
-হুম...জায়েদ করিম ও আরো বেশ ক’জন ট্যালেন্ট ইলোন মাস্কের পে-পলে কাজ করতেন। কিন্তু ই-বে পে-পল কিনে নেওয়ার পর অতিরিক্ত ডিসিপ্লিন ওদের ভালো লাগেনি, তাই তাঁরা সবাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল।
-ড্রপ আউট? হা...হা...তারপর ইউটিউব বানাল?
-না, এক এক জন একেকটা নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে সবাই ফেমাস ও বিলিনিয়র/মিলিনিয়র হয়ে গেল! তাই ওদের কে পে-পল গ্যাং বা পে-পল মাফিয়া বলে ডাকে!
-গ্যাং...? মাফিয়া??
-হুম...মজা করে বলে...কারণ ওরা সবাই পে-পলে ফ্রেন্ড ও কলিগ ছিল।
-ও, আচ্ছা।

ঘরবন্দী জীবনের বাইরে মুক্তির আনন্দের খোঁজে ওকলাহোমার উচিটা মাউন্টেনে ফাইযান। ছবি: লেখক
ঘরবন্দী জীবনের বাইরে মুক্তির আনন্দের খোঁজে ওকলাহোমার উচিটা মাউন্টেনে ফাইযান। ছবি: লেখক

-ইলোন মাস্কের আরো কয়েকটি মজার আইডিয়া তো তোমাকে বলা হয়নি, শুনবে?
-হ্যাঁ, বল
-একটি হচ্ছে আর্থ টু আর্থ রকেট। অর্থাৎ তোমাকে আর প্লেনে কয়েক দিন জার্নি করে ঢাকায় যেতে হবে না!
-তাই নাকি কতক্ষণ লাগবে?
-মনে কর ডালাস হতে এক ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছে তাসাওয়ারের সাথে লাঞ্চ করে, আবার আমাদের সাথে ডিনার করতে পারবে!
-হা হা…......কিন্তু রকেট তো স্পেসে যেতে ব্যবহার হয়!
-এখন হয়, কিন্তু ওর আইডিয়া হচ্ছে এমন রকেট বানানো যা অনেক বার ব্যবহার করা যাবে এবং কম খরচে অনেক তাড়াতাড়ি পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায়!
-দারুন আইডিয়া! এটি হলে অনেক ভাল হবে!
-অবশ্যই। আরেকটা প্লান হচ্ছে স্পেসে প্রায় ৪৫০০ স্যাটেলাইট পাঠানো, যাতে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় হাইস্পিড ইন্টারনেট পাওয়া যায়!
-এটাতো আর ভাল আইডিয়া! তাহলে তাসাওয়ারের নেটের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! ও তো নেটের জন্য ভালো গেম খেলতে পারে না!
-হ্যাঁ হবে! খরচও কমবে। তখন আফ্রিকা কিংবা সাউথ আমেরিকার সবচেয়ে গরীব ছেলেমেয়েরাও নেট ব্যবহার করতে পারবে, চাইলে ইউটিউবারও হতে পারবে। ব্যাপারটা অনেক দারুন না?
-হ্যাঁ..., ও তো অনেক টাকাও কামাবে!
-হা হা...হ্যা, কামাবে। কিন্তু টাকা তো অনেক কিছু করে কামাতে পারে। কিন্ত মানুষের জীবনকে সহজ করে দেওয়ার মতো আইডিয়া দিয়ে টাকা কামানো অনেক বেশী আনন্দের!
-হুম...।
-যেমন ইউটিউব একটা অ্যামেজিং প্লাটফর্ম! দেখ, যে কেউ চাইলে তাঁর ট্যালেন্ট শো করতে পারে! ইউটিউব থেকে আমরা অনেক ট্যালেন্ট পেয়েছি। যেমন জাস্টিন বিবার...
-গায়ক জাস্টিন বিবার? ও কি ইউটিউব থেকে ফেমাস হয়েছে?
-হ্যাঁ, মিডল স্কুলে থাকতে ও একটি গান ইউটিউবে আপলোড করেছিল যা হলিউডের কোনো বিখ্যাত সংগীত পরিচালক দেখে খুব পছন্দ করেছিলেন। পরে ঐ পরিচালক ওকে দিয়ে গান করানোর পর বিখ্যাত হয়ে গেল!
-তাই?
-হুম...তুমি কি ওর গান শুনেছ?
-হ্যাঁ, আমাদের ক্লাসে ওর গান আমরা শুনেছি...
-আমিও মাঝে মধ্যে আমাদের ভার্সিটির রেডিওতে ওর গান শুনি... ইউটিউব না থাকলে ওর ট্যালেন্টটা হয়তো মানুষ জানত-ই না। ইউটিউবের আগে ট্যালেন্ট দেখানো অনেক কঠিন ছিল।
-তাই?
-হ্যাঁ
-আমি ইউটিউবার হব, আমার গেমিং ট্যালেন্ট শো করব। তবে অন্য কোন জিনিসও দিতে পারি। ভালো কন্টেন্ট ডেভেলাপ করা ছাড়া আর তেমন কষ্ট নেই!
-হ্যাঁ, সেটা খারাপ আইডিয়া না। তবে তুমি চাইলে তোমার ট্যালেন্ট মানুষের সমস্যা সমাধান করার কিংবা মানুষের লাইফটাকে আরো সহজ করার কাজেও লাগাতে পার।
-তুমি প্যারাডাইম শিফট দিয়ে অনেক মানুষের প্রবলেম সল্ভ করার চেষ্টা করছ?
-অনেক না, তবে চেষ্টা করছি কিছু গরীব ছেলেমেয়েদেরকে তাঁদের ট্যালেন্ট দেখানোর ও কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে।
-আমিও তোমাদের কাজে হেল্প করতে চাই।
-হ্যাঁ, তুমি আমাদের কাজের ভিডিও বানিয়ে হেল্প করতে পার। ইউটিউবিং করে তুমি তো ভালো ভিডিও এডিটিং এর কাজ শিখেছ মনে হচ্ছে!
-হ্যাঁ, আমি পারব। আমাকে তোমাদের কাজের ছবি গুলো দিও। আমি ভিডিও বানিয়ে তোমাকে দেখাবো
-ভেরি গুড, আজ-ই তোমাকে আমাদের ছবি দিব!