ফরিদপুরের পাঁচ পদ
পুষ্টিগুণ রেখে যে রান্না করা হয়, তা সত্যিই মানুষের আয়ু বাড়িয়ে দেয়। ছোটবেলায় বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই পরিবারের সবাই মিলে ঢাকা থেকে বাসে করে পদ্মা নদী পার হয়ে যেতাম। পদ্মা নদীর ফেরি দিয়ে পার হলেই ওপারে মাওয়া ফরিদপুর। ফরিদপুরের পদ্মার ইলিশ বিখ্যাত এটা কম বেশি সবাই জানে, যারা ফেরিতে এই ইলিশ খেয়েছে। কী যে তার চমৎকার ঘ্রাণ! আর একটা খাবার না বললেই নয়, সেটা হলো খেজুরের রস। এই খেজুরের রস দিয়ে ফরিদপুরে তৈরি হয় বিয়ে বাড়ির নানা পদের খাবার। এর মধ্যে রসের পায়েস, রসে ভেজানো চিতই পিঠা, খাঁটি খেজুরের গুড়। এবারে স্মৃতিতে থাকা দাদির হাতের ফরিদপুরের কিছু রেসিপি জানাচ্ছি।
ইলিশ মাছের পাতুরি
উপকরণ: ইলিশ মাছ, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ, লবণ ও তেল।
প্রণালি: প্রথমে ইলিশ মাছ বড় বড় টুকরা করে পেটির এবং পিঠের মাছ এক সঙ্গে করে কাটতে হবে। ফ্রাই প্যানে কাটা পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ, লবণ ও তেল দিতে হবে। ধোয়া হাত দিয়ে পেঁয়াজ ভালোভাবে মেখে তার ওপরে মাছ বিছিয়ে দিয়ে হাত ধোয়া পানি দিয়ে ঢাকনা দিতে হবে। জোড়ে তাপ দিয়ে রান্না করে পরে তাপ কমিয়ে দিতে হবে। তেল ওপরে উঠলে রান্না শেষ।
কাঁচা কলার রান্না ভর্তা
উপকরণ: কাঁচাকলা, আদা বাটা, রসুন বাটা, ধনিয়া, জিরা, হলুদ, কাঁচা মরিচ, লেবু, লেবুর পাতা, লবণ ও তেল।
প্রণালি: প্রথমে লেবু ও লেবুর পাতা ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে কলা পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। সেদ্ধ হলে সবকিছু চামচ দিয়ে ভেঙে ভর্তার মতো করতে হবে। পরে আলাদা বাটিতে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ ও একটু সরিষার তেল দিয়ে ভালোভাবে চটকে মাখাতে হবে। পরে কলার ভর্তায় তা মেশাতে হবে। এরপর লেবুর রস ও লেবু পাতা দিয়ে মাখিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করতে হবে।
রসের পায়েস
উপকরণ: খেজুরের টাটকা রস, চিনিগুঁড়া চাল, দুধ, কোরানো নারিকেল, বাদাম, কিশমিশ, তেজপাতা, এলাচ ও লবণ।
প্রণালি: প্রথমে আধা ঘণ্টা চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পাত্রে খেজুরের রস জাল দিতে হবে। জাল দেওয়া রসে দুধ মেশাতে হবে। তেজপাতা আর এলাচ দিয়ে জাল দিতে দিতে রসে বলক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রস ফুটে উঠলেই চালটা ভালো করে ধুয়ে রসের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। এই পর্যায়ে চুলার আঁচ মাঝারি রেখে রান্না করতে হবে। চাল সেদ্ধ হলে কোরানো নারিকেল, বাদাম, কিশমিশ দিয়ে আরও ১৫ মিনিট রান্না করে পরিবেশন করতে হবে।
শাপলা চিংড়ি
উপকরণ: শাপলা, চিংড়ি মাছ, রসুন, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, সরিষা বাটা ও তেল ।
প্রণালি: প্রথমে শাপলা ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। সঙ্গে কিছু চিংড়ি মাছ, কাটা রসুন, কাটা পেঁয়াজ, ছোট টুকরা করা শুকনা মরিচ, সরিষা বাটা, অল্প হলুদ আর লবণ। কড়াইয়ে তেল দিয়ে রসুন কুচি আর শুকনা মরিচ কাটা একটু ভেজে তারপর কাটা পেঁয়াজ ও চিংড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে। এরপর শাপলা কাটা মিশিয়ে ওপরে সরিষা বাটা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ভাপে রান্না করতে হবে।
ঝলসানো নারকেল চিংড়ি
উপকরণ: চিংড়ি মাছ, নারিকেল, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, সরিষার তেল, হলুদ, লবণ, কলাপাতা ও সুতা।
প্রণালি: প্রথমে গলদা চিংড়ি ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। যদি গলদা চিংড়ি না পাওয়া যায় তাহলে মাঝারি সাইজের বড় চিংড়ি দিয়েও হবে। নারিকেল বাটা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ কুচি, একটু সরিষার তেল, হলুদ, একটু শুকনা মরিচের গুঁড়া ও সামান্য পরিমাণে লবণ দিয়ে মাখিয়ে কলাপাতায় ঢেকে সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে চুলার কয়লার ভেতরে ঢুকিয়ে তাপে চাপ দিয়ে ঝলসিয়ে রান্না করতে হবে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ওপরের কলাপাতা পুড়ে গেলেই ওঠাতে হবে।