প্রয়োজন ইতিবাচক ভাবনা সঠিক পরিকল্পনা

দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে গেল ২০১৮। দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে টান টান উত্তেজনা ছিল বছরের শেষ কটা দিন। নতুন এই বছরের জন্য অনেকেই ‘নতুন বছরের রেজ্যুলেশন’ তৈরি করেন। কী করবেন এই নতুন বছরে, কীভাবে পার করবেন নতুন বছরটি সেটা নিয়েই থাকে নানান পরিকল্পনা।
আমার অফিসে সবাই প্রতি বছরই নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে আড্ডার সঙ্গে খানাপিনার পার্টি আয়োজন করে। এক একজনকে মাইকে বলতে হয় কে কী কী করবে। ভাবছিলাম আমি উত্তর কী দেব? ওদের মধ্যে কেউ বলেছে, সে মন দিয়ে জিম করে শরীরের বাড়তি ওজন কমাবে, কেউ বলেছেন, নতুন নতুন দেশে ঘুরতে যাবেন। ছেলে গুলোকে বলতে শুনলাম, ৪/৫ বছর ধরে এক সঙ্গে থাকা মেয়ে বন্ধুকে প্রপোজ করবেন। কেউ কেউ বলেছেন, মুভ হয়ে অন্য সিটিতে চলে যাবেন। আমার বয়সীদের মুখ থেকে শুধু বেড়াতে যাওয়ার গল্পই বেশি শুনলাম। কেউ কেউ বলেছেন, বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেছে, হেলদি খাবার খাবেন। যাতে শরীর নিয়ে ঝামেলায় পরতে না হয় এবং ইয়াং থাকার চেষ্টা করবেন। শুধু একজন বললেন, এ বছরে তার বাড়িটা একটু মেরামত করবেন ।
আমি সবই মন দিয়ে শুনছিলাম আর আমাকে প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই আমার চোখে কতগুলো মুখ এক সঙ্গে ভেসে উঠছিল। যার জন্য ওদের মতো করে গুছিয়ে উত্তর দিতে পারি নাই। শুধু বলেছি, ‘আমি আমার পরিবারে সঙ্গে থাকব। ওদের পছন্দ মতো (মনে মনে বলছিলাম যদি ঘোরার মতো যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকে) য়গায় বেড়াতে যাব।’ এ সব ছিল বলার জন্য বলা।
আমি একটু শেয়ার করতে চাই আমার ভাবনাগুলো, ওই সময়টি আমার জন্য কেমন ছিল। আমার মাথায় আম্মা, মেয়ে, ভাই দুইটা, গতদিন ট্রেনে পাশে বসা বাঙালি ভাইটি, বাড়ির পাশে রেল লাইনের পাশ ঘেসে ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছ, মাটির সড়কে বয়সের ভারে নুয়ে পরা খেজুর গাছটার ছবিও ভেসে উঠেছিল। এর কারণ আমার জানা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা বাঙালিরা কোনো প্ল্যান করি বলে মনে হয় না। যদি কেউ প্ল্যান করি তাহলে সবার আগে নিজের পরিবার নিয়ে প্ল্যান করা উচিত। তবে ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা ভাবনা থাকতেই পারে ।
যে ভাইটির কথা একটু আগে বলছিলাম, রাতের শিফটে রেস্টুরেন্টে কাজ করে ফিরছিল। সে ছিল অনেক ক্লান্ত। বিদেশ তার ভালো লাগে না। ও চেয়েছিল দেশে থেকে যেতে। সে বাবা, মা, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব পরিবারের সঙ্গে থেকে যেতে চায়। ১৮ বছর পর কাগজ পেয়ে দেশে গিয়েছে। পরিবার ও দেশ একজন প্রবাসীর জন্য অনেক আদরের, ভালোবাসার জায়গা। কিন্তু পরিবার তার একেবারে থেকে যাওয়াকে আমলে নেয়নি। তাকে এ দেশে ফেরত আসতে বাধ্য করেছে। একজন প্রবাসীর জীবনের চাওয়া-পাওয়াগুলো অর্থ উপার্জন করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। ও বলছিল, ‘আপা আমি ফোনে যে বাবা মার সঙ্গে কথা বলি। দেশে গিয়ে কিছুদিন থাকার পর তাদের অচেনা লেগেছে। আমাদের দু’জনের চোখ ভিজে আসছিল। কতটা কঠিন, কতটা নির্মম এ জীবন তা আমরা সবাই জানি। একটা সময় আমাদের ছেলেরা শুধু টাকা কামানোর মেশিন হয়ে যায়। ওর সঙ্গে গল্প করে এতটাই মন খারাপ ছিল’—পুরো সপ্তাহ অন্য কিছুতেই মন বসাতে পারিনি।
তাই বলছি, আপনি যদি কোনো কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত থাকেন-তবে অবশ্যই নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কিত প্ল্যান করবেন। আপনার নতুন বছরে নিজের ক্যারিয়ারকে গড়তে চাইবেন। আরও উন্নত এবং আশা করবেন প্রমোশন। আপনার পারফরম্যান্স ঠিক রাখার চেষ্টা করা নিয়ে ভাবতে পারেন ।
নিজেকে ছাড়িয়ে যান কাজের নতুনত্বে। এ দেশে টিকে থাকতে হলে কীভাবে নিজেকে আরও বেশি দক্ষ করা সম্ভব, কীভাবে নিজেকে আরও পরিণত করা সম্ভব, কীভাবে নিজের কাজকে অন্য সবার চেয়ে আরও ভালো করে গড়ে তোলা সম্ভব-এই সব কিছু ভাবতে পারেন এখন থেকেই।
এ দেশে মানুষের মতো কথা বলতে পারি না বলে নার্ভাস হলে চলবে না। তাই রেস্টুরেন্টভিত্তিক কাজ ছাড়াও অনেক জায়গা আছে, যেখানে আপনি শুধু ভয়ে অ্যাপ্লাই করেননি। ‘দ্য বিজনেস অব গুড’ বইয়ের লেখক জেসন হারবার বলেছেন, নিজের কাজ ও চিন্তার মাঝে স্থান তৈরি করার চেষ্টা করুন। এতে করে কোনো বিষয়কে পরিষ্কারভাবে ভাবার সুযোগ পাবেন। লক্ষ্য যেটাই হোক না কেন, নতুন বছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেইভাবে কাজ করা শুরু করে দিন। তবেই নতুন বছরে অর্জন করা সম্ভব হবে নিজের লক্ষ্য।
নেতিবাচক আবেগগুলোর প্রভাব আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে অটোমেটিক জুড়ে গিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে। নেতিবাচক আবেগ আমাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করে। নেগেটিভিটি আমাদের ফোকাস ও কাজের সুযোগকে সংকীর্ণ করে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সব ভালো গুনকে ধ্বংস করে দেয়। তাই সব সময় পজিটিভ থেকে সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করুন।
মানুষের আশা মানুষের মতোই সত্যি। খুব দৃঢ় আশা কখনোই বিফলে যায় না। কোনো আশাই নিঃসঙ্গ নয়। কোথাও না কোথাও ভরসা আছে, থাকতেই হবে, খুঁজলে মিলবেই। আর আশা কেবল মানুষের জন্যই। খুব প্রতিকূল সময়ে মানুষ শুধু আশার জোরেই বাঁচে। বিপদে শক্ত মানসিক স্থিরতা অনেক রাস্তা উন্মোচন করে দেয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ধৈর্য নিয়ে কেবল খুঁজতে হয়। প্রতিকূলতাকে জয় করার প্রত্যাশা যেখানে থাকে পরিপূর্ণ, প্রাপ্তি সেখানেই থাকে।