প্রবাসে থেকেও দেশের পাশে
দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবন শেষে যখন ছুটি মেলে মাতৃভূমিকে দেখার, বিমানের চাকা দেশের মাটিকে স্পর্শ করার আগেই তড়িঘড়ি শুরু হয়ে যায় নামার জন্য। আপনজনদের বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য। দেশের প্রতি যে ভালোবাসা দেশের সীমানা পেরিয়ে আসলে সেটার অনুভূতি কয়েকগুণ বেড়ে প্রজ্জলিত হতে থাকে হৃদয়ের সমস্ত প্রকোষ্ঠ জুড়ে। দেশের মানুষের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে, বাংলার সবুজের সঙ্গে এক মেলবন্ধনের উদ্দেশ্য ২০১৮ সালের জুন মাসে সুইজারল্যান্ড, প্রবাসি দিলু রহমানের প্রচেষ্টায় ফেসবুকে 'মাটির টানে সবুজের প্রাণে' নামে একটি গ্রুপ তৈরী করা হয়। সবুজের সাথে থাকা, সবুজ ছড়িয়ে দেওয়া, ছাদবাগানীদের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্যই এ উদ্যোগ।
গ্রুপের সদস্যদের ফল ফুল সব্জির বাগান নিয়ে হাজির হন গ্রুপে। নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। কারও কোন সমস্যায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়, গাছ, বীজ এবং কৃষিসামগ্রী। এই দুই বছরের মধ্যে প্রায় ৬০০০ সদস্য গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফিলিপাইন সহ পৃথিবীর বিভীন্ন দেশ থেকে। মহামারী করোনা তাণ্ডবে অনিশ্চয়তায় কাটছে অধিকাংশ প্রবাসীর দিন। বেশিরভাগ প্রবাসীর কাজকর্ম বন্ধ হয়ে আছে। কবে কখন কাজ শুরু হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যে দেশের আপনজনের জন্য, দেশের জন্য সবার মাঝে চলছে হাহাকার। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের চলছে চরম দুর্দিন।
এই দুর্দিনে দেশের মানুষের পাশে থাকাটা হবে সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের কাজ। কিন্তু এই শারীরিক যোগাযোগহীন অবস্থায় যাবতীয় সমন্বয় করা বেশ জটিল। সমস্ত জটিলতা স্বত্বেও গ্রুপের এডমিনদের সহযোগিতায় কালেকশন হয় কিছু ফান্ড। তুলে দেওয়া হয় গ্রুপের এডমিন শামীম আরা রুমা (ঢাকা) এবং সিরাজুল ইসলামের (বরিশাল) হাতে। তাদের দুজনের তত্ববধানে কেনা হয় নিম্ন আয়ের কিছু পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল, আলু, চিঁড়া, লবন, চিনি এবং সাবান। বরিশাল এবং ঢাকায় আলাদা আলাদা প্যাকেটে প্রায় ৫০টি পরিবারের নিকট পৌঁছে দেওয়া হয় এই খাদ্য সামগ্রী। পাশাপাশি আগামীর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের মোকাবেলায় সদস্যদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলছি 'কারও এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদী পড়ে না থাকে'।