প্রবাসে চার বছরে পরিবার ছাড়া সাত ঈদ

ফাইল ছবি

কিছু কথা অব্যক্ত রয়ে যায়, কিছু অনুভূতি মনের মধ্যে থেকে যায়।

কিছু স্মৃতি নীরবে কেঁদে যায়, শুধু এই একটি দিন সব ভুলিয়ে দেয়।

ঈদের এই আনন্দ শুধু তাঁরাই নিতে পারেন, যাঁরা পরিবার নিয়ে একত্রে আছেন। আর যাঁরা পরিবার ছাড়া অনেক অনেক দূরে আছেন, মানে দেশের বাইরে, তাঁদের কাছে ঈদ অন্য সব সাধারণ দিনের মতোই মনে হয়। পার্থক্য শুধু ঈদের নামাজ।

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ—এ কথা সবাই মানলেও দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া দায়। কেউ জীবনের তাগিদে আর কেউ পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এই যেমন আমি গত চার বছর পরিবার ছাড়া ঈদ করছি। সাতটা ঈদ ভারতে উদ্‌যাপন করেছি। প্রথম দুটি ঈদ সত্যি অনেক কষ্টের ছিল। এরপরের সব ঈদ আর ঈদের মতোই মনে হয়নি। এখানে বিদেশি মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়ে এসে বাড়িতে সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলি; এরপর লম্বা একটা ঘুম।

এভাবেই কাটছে ঈদের দিন। এ ঈদেও ব্যতিক্রম কিছু হবে না। প্রবাসীদের কাছে ঈদ একটু অন্য রকম হয়। যাঁরা কাজের উদ্দেশ্যে আসেন, তাঁদের জন্য ঈদের দিনটা অত্যন্ত কষ্টের।

এত কিছুর পরও প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর রেকর্ড গড়েছেন। যেন ঠিক সময়ে পরিবারে ঈদের টাকা পাঠাতে পারলেই প্রবাসীদের হৃদয় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। ঈদে পরিবারের মুখে হাসি দেখলে তাঁরা আনন্দে বিভোর হয়ে যান। ঈদের সারা দিন প্রবাসীর মনটা পড়ে থাকে পরিবারের কাছে।

বড় ভাই ও ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এই ঈদ নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। ফজরের নামাজের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি, দলবদ্ধ হয়ে পুকুরে গোসল করা। এরপর মিষ্টিমুখ করে নতুন জামাকাপড় পরে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের ছুটিতে অনেকে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যায়। অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা, আড্ডা আর খুনসুটিতে সময় পার করা যেন ঈদের বিশেষ আনন্দ। সারা দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। ঈদের মেলায় ছোটাছুটি। ঈদের বর্ণিল সাজে মন হয়ে ওঠে উজালা। আরও একটা মজার বিষয়—ঈদের সময় একটা মেসেজ অনেকজনকে কপি করে পাঠানো। কোরবানির ঈদের একটা মেসেজের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। লেখাটা ছিল এমন, ‘দিনে গরম রাতে শীত, সামনে আসছে কোরবানি ঈদ। সাদা রুটি–মাংসের ঝোল, খেতে তোমরা কোরো না ভুল। ঈদে থাকব হাসিখুশি, তোমাকে চাই পাশাপাশি।’ ভারতে আসার পর ঈদের দিনের সবকিছুই এখন স্মৃতি। এখন আর নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে আম্মু তাড়াহুড়ো করে সেমাই রান্না করে টেবিলে রাখে না। নতুন জামা পরে আম্মু, আপু ও ভাইয়ার কাছ থেকে সালামি চাওয়া হয় না। কারণ, একটাই আমি—এখন বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। এখানে ঈদ মানে শূন্যতা, ঈদ মানে কোনো আনন্দই না। পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদ যে কতটা কষ্টের, সেটা একমাত্র প্রবাসীরই ভালো জানেন। যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁদের জন্য কিছুটা হলেও বিষয়টা স্বাভাবিক; আর যাঁরা কাজ করতে বিদেশ আসেন, অনেকে তো ঈদের দিনও কাজে থাকতে হয়। দিন শেষে একটাই শান্তি—পরিবারের সবাই হাসিখুশি আছে। সুখে থাকুক সব পরিবার। প্রথম আলোর মাধ্যমে আমার পরিবার ও বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ভালোবাসা। লেখক: মো. হাসিবুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব মাইসুর, ভারত