প্রবাসীদের লাগেজপ্রীতি

বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে প্রবাসীদের বিপাকে পড়ার খবর মাঝে মাঝেই মেলে
ছবি: সংগৃহীত

ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে দেশের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে কোটি বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশিদের দেশের সঙ্গে থাকে আত্মার সম্পর্ক। তাই তো সময় ও সুযোগ পেলেই তাঁরা ছুটে আসেন বাংলা মায়ের কাছে। দেহটা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই পড়ে থাক না কেন, আত্মাটা সর্বদাই বাংলাদেশের মাটিতেই থাকে প্রবাসীদের। তাই দেশে ফেরা একজন প্রবাসীর কাছে কতটা প্রত্যাশার ও আবেগের, তা শুধু প্রবাসীরাই উপলব্ধি করতে পারেন। প্রিয় মুখগুলো দেখার জন্য ও মাতৃভূমির ছায়া পেতে একজন প্রবাসী ব্যাকুল হয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত। দেশে যাওয়ার দিনক্ষণ যেদিন থেকে ঠিক হয়, সেদিন থেকে ব্যাকুলতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সামর্থ্য ও সুযোগের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রচেষ্টা করে প্রিয়জনদের জন্য উপহার নিয়ে যেতে। কোনো কমতি রাখে না আপনজনদের আবদার মেটাতে। কেউবা যাওয়ার আগমুহূর্তে, কেউবা বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রিয়জনদের জন্য বিভিন্ন দ্রব্য কিনে রাখেন। ধীরে ধীরে জমা করে ব্যাগ কিংবা লাগেজের ভেতরে। আপাতদৃষ্টিতে যে কারও কাছে এই দ্রব্য বহন করার বস্তুটাকে একটি ব্যাগ ও লাগেজ মনে হলেও প্রত্যেক প্রবাসীর কাছে এটি একটি আবেগ ও ভালোবাসার বাক্স।

এমনও শুনছি যে একজন প্রবাসী প্রবাসে আসার পর তাঁর প্রিয় ১০ বছর বয়সী কন্যার জন্য একটি পোশাক ক্রয় করার পর দেশের ছুটিতে আসার অপেক্ষা করতে করতে নানান জটিলতায় যখন তাঁর দেশ ফেরা হয়, তখন তাঁর কন্যা বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। ফলে প্রিয়জনের জন্য কেনা উপহারটি সময়মতো না দিতে পারার কষ্ট থাকলে সেটিও দেশে নিয়ে আসেন তিনি। আবার কেউ তো এগুলো নিয়ে ফেরেন লাশ হয়ে।
এই বাক্সটিতে করেই দেশে যাবে প্রিয়জনদের কাছে তাঁর জমানো আবদার ও ভালোবাসার বস্তুগুলো। তাই লাগেজের প্রতি প্রবাসীদের থাকে অন্য রকম এক আবেগ। প্রিয়জনেরা অপেক্ষায় থাকে তাদের আপনজন বিদেশ থেকে তার জন্য ভালোবেসে কী আনছে।

মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে দেখা মেলে বিমানবন্দরে লাগেজ ক্ষতিগ্রস্ত ও চুরি হওয়ায় প্রবাসীরা সেখানে বসে কাঁদছেন। হারিয়ে যাওয়া পণ্যগুলোর বাজার মূল্য প্রবাসীর কাছে কম হলেও কাঁদেন অন্য কারণে। কারণ, এই পণ্যগুলোর একজন প্রবাসীর কাছে আবেগ ও ভালোবাসায় কেনা অমূল্য সম্পদ।

তাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন রইল, দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তির মানুষগুলো আবেগ ও ভালোবাসার বাক্সটির যেন কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।